ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের বিচার ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে আজ সোমবার সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এর আগে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
পরে বাকি সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমনে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব। প্রিয় দেশবাসী ও ছাত্রসমাজ, বিগত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেপ্তারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিগুলোর প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘শুধু তাই নয়, সারা দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর্মড ফোর্সকে ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে ভাই, জীবনের শেষনিশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারে না।’
বার্তায় আরও বলা হয়, ‘দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারা দেশে রেইড করে গণগ্রেপ্তার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। জানালার পাশে পড়ার সময় কোমলমতি শিশু সামিরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কঠোর ভাষায় বলতে চাই, আমাদের দাবি আদায় না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্রসমাজের আন্দোলন চলবে। আগামীকাল (সোমবার) সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ। আমাদের দাবি আদায়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বাংলাদেশের সব নাগরিককে অনুরোধ করছি। ‘
এর আগে ছয় সমন্বয়কের পক্ষে রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় রোববার লিখিত বক্তব্য পড়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। লিখিত বক্তব্যে নাহিদ ছাড়াও সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুমের স্বাক্ষর ছিল।
উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কোটা বাতিলের পর আট জানিয়েছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে নিহতদের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করে গ্রেফতার ও বিচার। শহীদদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা, মাসিক ভাতা ও তাদের পিতা–মাতার মতামতের ভিত্তিতে একজন সদস্যকে চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ, সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করা এবং ছাত্র সংসদ চালু করা, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সব শিক্ষার্থীকে সব ধরনের রাজনৈতিক, আইনি বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের মাধ্যমে একাডেমিক হয়রানি না করার নিশ্চয়তা দেওয়া।