প্রথমত, পিতামাতা দাদা-দাদী নানা-নানী স্থানীয় ঊর্ধ্বতন সকল পরিজন এবং পুত্রকন্যা নাতি-নাতনী স্থানীয় অধস্তন পরিজনদের যাকাত দেয়া যাবে না। আর অন্যান্য পরিজনদের ক্ষেত্রে কোরআন এবং হাদীসে যাকাত নয়, সদকা দিতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। নবীজী (স) বলেন, উত্তম সদকা হচ্ছে নিজের পরিবারের ও আত্মীয়দের জন্যে ব্যয়।
আসলে যাকাত নিজ ইচ্ছেমতো যাকে-তাকে দিলেই আদায় হবে না। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে আল্লাহ খুব সুস্পষ্টভাবে বলেছেন।
“যাকাত তো শুধু (এক) দরিদ্র, (দুই) অক্ষম, (তিন) যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী, (চার) যাদের মন জয় করা প্রয়োজন, (পাঁচ) মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে, (ছয়) ঋণজর্জরিত অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্যে, (সাত) আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) এবং (আট) মুসাফিরদের জন্যে ব্যয় করা যাবে। (যাকাতের অর্থ ব্যয়ে) এটাই আল্লাহর বিধান। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা : ৬০)
১. দরিদ্র : এমন মজুর ও শ্রমজীবী যে শারীরিক ও মানসিকভাবে কর্মক্ষম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল অবস্থার কারণে বেকার ও উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। ছিন্নমূল মানুষ এবং শরণার্থীরাও এর মধ্যে পড়েন।
২. অক্ষম : বার্ধক্য, রোগ, বা পঙ্গুত্ব যাকে উপার্জনের সুযোগ হতে বঞ্চিত করেছে অথবা যে ব্যক্তি উপার্জন দ্বারা তার প্রকৃত প্রয়োজন পূরণ করতে অক্ষম এবং আশ্রয়হীন শিশু প্রমুখ।
৩. যাকাত ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মচারী : যাকাত আদায় এবং তা বণ্টন করার কাজে যারা সার্বক্ষণিক নিযুক্ত থাকবে তাদের বেতন-ভাতা আদায়কৃত যাকাত থেকে দেয়া হবে।
৪. যাদের মন জয় করা প্রয়োজন : ইসলাম প্রচার কাজ কোথাও প্রতিরোধের সম্মুখীন হলে সে ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সংগতিহীন নও মুসলিমকেও স্বনির্ভর করার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় হতে পারে।
৫. মানুষকে দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্যে: দাসমুক্তি বা বন্দিদের মুক্ত করতে যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা যাবে। এখানে দাস বা বন্দি বলতে বিখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা আসআদের তাফসীরে যারা পরিস্থিতি বা পরিবেশের বন্দি বা শিকার তাদের কথাও বলা হয়েছে। অর্থাৎ ভূ-লুণ্ঠিত, অপরিচিত, দুর্গম-দূরবর্তী অভাবগ্রস্ত এলাকার দুস্থ-অসহায়দেরও যাকাত দেয়া যাবে।
৬. ঋণমুক্তি : যারা নিজেদের দৈনন্দিন প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে ঋণ করে এবং সে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের সম্পদ হতে সাহায্য করা যাবে। যাদের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়ে গেছে, বন্যা-প্লাবনে মাল-আসবাব ভেসে গেছে, তাদের পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণে যাকাতের সম্পদ দেয়া যাবে।
৭. আল্লাহর পথে (জনকল্যাণমূলক কাজ, ধর্মপ্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) : যাকাতের ৭ম খাত হলো ‘ফি সাবী লিল্লাহ’ (আল্লাহর পথে)। ইসলামি চিন্তাবিদগণের সম্মিলিত মত হলো : আল্লাহ নির্দেশিত পথে প্রতিটি জনকল্যাণকর কাজে, দ্বীন ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যত কাজ করা সম্ভব সেসব ক্ষেত্রেই এ অর্থ ব্যয় করা যাবে। (ইসলামের অর্থনীতি-আল্লামা মুহাম্মদ আবদুর রহীম, পৃ-২৭৭)
৮. মুসাফির : যাকাতের ৮ম খাত হলো ‘ইবনুস সাবীল’ (নিঃস্ব পথিকদের জন্যে)। যেসব পথিক বা মুসাফির যাত্রাপথে নিঃসম্বল হয়ে পড়েছে, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে।
তার মানে হলো, যাকাতগ্রহীতাদের এই খাতগুলোতে আত্মীয়স্বজনের কোনো খাত নেই।