গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৭৭তম (অধিবর্ষে ৭৮তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
ঘটনাবলি
১৯৬৫ : মহাশূন্যে প্রথম পদচারণা করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন সোভিয়েত নভোচারী আলেক্সি লিওনভ।
জন্ম
১৮৩৮ : র্যান্ডাল ক্রেমার, নোবেলবিজয়ী ইংরেজ রাজনীতিবিদ।
১৮৫৮ : রুডলফ ডিজেল, ডিজেল ইঞ্জিনের উদ্ভাবক জার্মানি।
১৯১০ : বিমল ঘোষ, শিশু সাহিত্যিক।
১৯১২ : বিমল মিত্র, লেখক ও ঔপন্যাসিক।
মৃত্যু
১৯৭৪ : বিশ শতকের বাঙালি কবি বুদ্ধদেব বসু।
১৯৭৯ : বাংলাদেশি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবুল মনসুর আহমেদ।
১৯৮০ : জার্মান মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক এরিক ফরম।
১৯৯৬ : নোবেলবিজয়ী গ্রিক কবি অডিসেয়াস এলয়টিস।
বুদ্ধদেব বসু
বুদ্ধদেব বসু ছিলেন বিংশ শতাব্দীর একজন প্রভাবশালী বাঙালি কবি, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, সম্পাদক ও সাহিত্য-সমালোচক। বিংশ শতাব্দীর বিশ ও ত্রিশের দশকে আধুনিক কবিতার যারা পথিকৃৎ তিনি তাদের একজন। তিনি বাংলা সাহিত্য সমালোচনার দিকপাল ও ‘কবিতা’ পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনার জন্যে তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৮ সালের ৩০ নভেম্বর কুমিল্লায়। বাবা ভূদেব বসু পেশায় ঢাকা বারের উকিল ছিলেন। মায়ের নাম বিনয়কুমারী। বুদ্ধদেবের শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের প্রথমভাগ কেটেছে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ঢাকায়।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ১৯৩০ সালে প্রথম শ্রেণিতে বিএ অনার্স এবং ১৯৩১ সালে প্রথম শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় বুদ্ধদেব বসু হাতে লেখা ‘পতাকা’, ‘ক্ষণিকা’ ও মাসিক ‘প্রগতি’ পত্রিকার সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র অবস্থায় সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে তিনি ‘বাসন্তিকা পত্রিকা’ সম্পাদনা করতেন।
কলকাতা বসবাসকালে তিনি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সহযোগিতায় ১৯৩৫ সালে ত্রৈমাসিক ‘কবিতা পত্রিকা’ সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। পঁচিশ বছরেরও অধিককাল তিনি পত্রিকাটির ১০৪টি সংখ্যা সম্পাদনা করে আধুনিক কাব্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, সমালোচনা, নাটক, কাব্যনাটক, অনুবাদ, সম্পাদনা, স্মৃতিকথা, ভ্রমণ, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে বুদ্ধদেব বসুর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। বুদ্ধদেব বসু প্রমাণ করেছেন সম্পাদকের অন্যতম গুণ বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। সম্পূর্ণ অনাসক্ত ও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি বাছাই করেছেন ভালো কবিতা। স্বীকৃতি দিয়েছেন যোগ্য কবিকে। ‘কবিতা’ পত্রিকায় কবিতা ছাপা হওয়া মানেই কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করা’ বাংলা সাহিত্যে এমন গৌরব আর কোনো সাহিত্যপত্র অর্জন করতে পারেনি।
বুদ্ধদেব মননশীল প্রবন্ধ ও সাহিত্য-সমালোচনায় সূক্ষ্ম বুদ্ধিবৃত্তির পরিচয় দিয়েছেন। তার গদ্যশৈলীতে আছে ব্যক্তিত্বের ছাপ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে কবিতা: বন্দীর বন্দনা, কঙ্কাবতী, দ্রৌপদীর শাড়ী, শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর, যে আঁধার আলোর অধিক; উপন্যাস লাল মেঘ, রাতভর বৃষ্টি, পাতাল থেকে আলাপ, গোলাপ কেন কালো; গল্পগ্রন্থ: অভিনয়, অভিনয় নয়, রেখাচিত্র, ভাসো আমার ভেলা; নাটক: তপস্বী ও তরঙ্গিণী, কলকাতার ইলেকট্রা, সত্যসন্ধ; প্রবন্ধ: কালের পুতুল, সাহিত্যচর্চা, রবীন্দ্রনাথ: কথাসাহিত্য, স্বদেশ ও সংস্কৃতি; ভ্রমণ ও স্মৃতিকথা: হঠাৎ আলোর ঝলকানি, সব-পেয়েছির দেশে, জাপানি জার্নাল, দেশান্তর, আমার ছেলেবেলা, আমার যৌবন; অনুবাদ: কালিদাসের মেঘদূত, শার্ল বোদলেয়ার: তাঁর কবিতা, রাইনের মারিয়া রিলকের কবিতা ইত্যাদি। বুদ্ধদেব বসু শিশুদের উপযোগী কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি পদ্মভূষণ, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার (মরণোত্তর)সহ অসখ্য সম্মাননা লাভ করেন। ইংরেজি ভাষায় কবিতা, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করেও তিনি ইউরোপ-আমেরিকায় প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেন।
বুদ্ধদেব বসু ১৯৭৪ সালের ১৮ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত
