1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ০৫:১৩ অপরাহ্ন

ইতিহাসের পাতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি

  • সময় শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭৯ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৫৯তম দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি
১৮২৭ : আমেরিকায় প্রথম বাণিজ্যিক রেলপথ চালু হয়।
১৯২২ : মিশর স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯২৮ : চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন কলকাতায় ‘রামন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন।

জন্ম
১৮৪৪ : গিরিশচন্দ্র ঘোষ, বিখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব।
১৯৩১ : এ বি এম মূসা, প্রখ্যাত সাংবাদিক।
১৯৫০ : আজম খান, জনপ্রিয় বাংলাদেশি গায়ক।

মৃত্যু
১৯১৬ : মার্কিন কথাসাহিত্যিক হেনরি জেমস।
১৯৭০ : সাহিত্য সমালোচক শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯ : শাহ আলমগীর, বাংলাদেশি সাংবাদিক ও পিআইবির সাবেক মহাপরিচালক।

আজম খান
আজম খান ছিলেন বাংলাদেশি পপসম্রাট। বীর মুক্তিযোদ্ধা। পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। তিনি অভিনেতা, ক্রিকেটার এবং বিজ্ঞাপনের মডেলও ছিলেন। আজম খান নামেই সর্বাধিক পরিচিত। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তার গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়। বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে আজম খানের ছেলেবেলা কাটে আজিমপুরের ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে। ১৯৫৬ সাল থেকে কমলাপুরে বসবাস।সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুল এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি।

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকেই আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাবেন তিনি। মাকে কথাটা বলতেই মা বললেন বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্যে। ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে অনুমতি চাইলেন আজম। কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তার বাবা। তিনি ভেবেছিলেন বাবা হয়তো ‘না’ বলবেন। কিন্তু আজম খানকে অবাক করে দিয়ে তার বাবা বললেন, ‘যুদ্ধে যাচ্ছিস যা, দেশ স্বাধীন না করে ফিরবি না।’ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আজম খান।

কয়েকজন বন্ধু মিলে আজম খান বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। প্রথমে কুমিল্লা, তারপর সেখান থেকে হেঁটে আগরতলা। আগরতলা থেকে মেঘালয়ে গিয়ে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। সেখানে দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল কুমিল্লার সালদায়। সফলভাবে সেই অপারেশন সম্পন্ন করার পর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ তাকে ঢাকায় গেরিলা অপারেশন পরিচালনার জন্যে সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। গুলশান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তারা বেশ কয়েকটি দুঃসাহসী অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তান বাহিনীর ঘুম হারাম করে দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘অপারেশন তিতাস’। এর মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা শহরের গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করে দেওয়া। ক্যাম্পে থাকাকালীন আজম খান বাটি আর চামচকে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে গান করতেন। আর এর মধ্য দিয়ে চাঙা রাখতেন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল।

১৯৭২ সালে তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভ্রাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সঙ্গীত জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৭২ সালে বিটিভিতে ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হয়। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় গান দুটি। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের দল।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বাংলাদেশ’ (রেললাইনের ওই বস্তিতে) শিরোনামের গান গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন। তার পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীকালে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের সাথে। এক সাথে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা।

‘এক যুগ’ নামে তার প্রথম অডিও অ্যালবাম ক্যাসেট প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। ১৭টি একক, ডুয়েট ও মিশ্রসহ সব মিলিয়ে তার গানের অ্যালবাম ২৫টি। তার প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়। আজম খানের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামের মধ্যে দিদি মা, বাংলাদেশ, কেউ নাই আমার, অনামিকা, কিছু চাওয়া, নীল নয়নতা ইত্যাদি। জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (রেল লাইনের ওই বস্তিতে), ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল, অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে তুমি ইত্যাদি।

গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেটেও অংশ নেন। তিনি ভালো সাঁতারু ছিলেন। তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবেও কাজ করেন।

অনেকেই আজম খানকে বাংলার বব ডিলান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ষাটের দশকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বব ডিলানের গান যেভাবে মুক্তিকামী মানুষকে সাহস জুগিয়েছে, তেমনি করে আজম খানের গানও অনুপ্রাণিত করেছে এ দেশের অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে। সঙ্গীতের উপর তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, কিংবা কারও কাছে সে অর্থে গান শেখেননি তিনি। অথচ তিনিই বাংলা পপসংগীতের মুকুটহীন সম্রাট।

রণাঙ্গন দাপানো, গানের মঞ্চ কাঁপানো বাংলা পপ গানের এই গুরু ছিলেন প্রচারবিমুখ, নির্মোহ আর বিনয়ী। মাটির মানুষ বলতে যা বোঝায়, আজম খান ছিলেন তেমনি এক ব্যক্তিত্ব। তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন ভক্তকুলের হৃদয়ে তার কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

পপসম্রাট আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন সকালে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com