গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৪২তম (অধিবর্ষে ২৪৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
ঘটনাবলি
১৯০৯: কানাডায় জীবাশ্ম বহনকারী আমানত বার্গেস শেল আবিষ্কার করেন চার্লস ডুলিটল ওয়ালকোট।
১৯১৬ : আর্নেস্ট শ্যাকলটন অ্যান্টার্কটিকার এলিফ্যান্ট দ্বীপে আটকা পড়ে থাকা তার সমস্ত লোকের উদ্ধার কাজটি শেষ করেন।
১৯৩৩ : এয়ার ফ্রান্স গঠিত হয়।
১৯৭১ : দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনের উদ্বোধন হয়।
জন্ম
১৭৯৭ : ম্যারি উলস্টোনক্রফট শেলি, উনিশ শতকের ইংরেজ সাহিত্যিক ও নাট্যকার।
১৮৫৬ : কার্ল ডেভিড টলমে রুঙ্গে, জার্মান গণিতবিদ ও পদার্থবিদ।
১৮৭১ : আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, নোবেলজয়ী নিউজিল্যান্ড ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ।
১৮৮৪ : থিওডোর সভেডবার্গ, নোবেলজয়ী সুইডিশ রসায়নবিদ ও পদার্থবিদ।
১৯১২ : এডওয়ার্ড মিল্স পারসেল, নোবেলজয়ী আমেরিকান পদার্থবিদ।
১৯৩০ : ওয়ারেন বাফেট, মার্কিন ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী এবং জনহিতৈষী ব্যক্তি।
১৯১৩ : রিচার্ড স্টোন, নোবেলজয়ী ইংরেজ অর্থনীতিবিদ।
মৃত্যু
১৮৭৭ : ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার ভারতীয় বাঙালি কবি তরু দত্ত।
১৯১১ : বহু ভাষাবিদ ভারতীয় বাঙ্গালি পণ্ডিত হরিনাথ দে।
১৯৭৬ : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী প্রখ্যাত চিকিৎসক যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়।
১৯৮১ : নীহাররঞ্জন রায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা-গবেষক পণ্ডিত।
২০০৬ : নোবেলজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক নাগিব মাহফুজ।
২০১৭ : বাংলাদেশি সঙ্গীত শিল্পী আব্দুল জব্বার।
নীহাররঞ্জন রায়
নীহাররঞ্জন রায় ছিলেন বাঙালি ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা-গবেষক পণ্ডিত। দেশবরেণ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনীষী ছিলেন তিনি।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে। বাবার নাম মহেন্দ্রচন্দ্র রায়। সহধর্মিনী মণিকা রায়। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে এবং এক কন্যার বাবা ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন স্থানীয় ন্যাশনাল স্কুলে, যেখানে তার বাবা মহেন্দ্রচন্দ্র রায় শিক্ষকতা করতেন। সিলেটের মুরারীচাঁদ কলেজে ইতিহাস বিভাগে পড়াশুনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১৯২৬ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করে এমএ পাস করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হয়ে গবেষণায় ব্রতী হন। বৃত্তি নিয়ে ১৯৩৫ সালে ইউরোপ যান এবং হল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি ও লন্ডন থেকে গ্রন্থাগার পরিচালনা বিষয়ে ডিপ্লোমা নেন।
নীহাররঞ্জন রায়ের কর্মজীবনের শুরু প্রাচীন ভারতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে। বিবিধ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন গ্রন্থাগারিকের পদে কাজ করার পর চারুকলা বিভাগের বাগেশ্বরী অধ্যাপক এবং প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। তিনি রাজ্যসভা ও ভারতীয় পে-কমিশনের সদস্যও ছিলেন। সিমলার ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার ও ভারতীয় জাদুঘরের মতো সংস্থাগুলোর প্রশাসনেও তিনি কাজ করেছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে লাইব্রেরি অ্যাসোশিয়েশন অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল সোসাইটি অফ আর্টস, লন্ডন; ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন অফ আর্টস, জুরিখ; এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা’র ফেলো নির্বাচিত হন। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপনা ছাড়াও অবৈতনিক বহু কাজে নানা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
বাঙ্গালীর ইতিহাস: আদি পর্ব, রবীন্দ্র-সাহিত্যের ভূমিকা, কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি, বাংলার নদ-নদী, প্রাচীন বাংলার দৈনন্দিন জীবনসহ অসংখ্য গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন তিনি।
রবীন্দ্র পুরস্কার, সরোজিনী স্বর্ণপদক, আকাদেমি পুরস্কার, মোয়াট স্বর্ণপদক, পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হওয়াসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকার জন্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে তাকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়।
মৃত্যুর কিছুকাল আগে তিনি ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ড লেখার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং তিনি মনে করেন যে, এটাই হবে তার ‘সামান্য’ বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের ‘সর্বাধিক আনন্দময় পরিণতি’। কিন্তু তা আর পূর্ণ হয়নি।
নীহাররঞ্জন রায় ১৯৮১ সালের ৩০ আগস্ট কলকাতায় নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত