গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৪৭ তম (অধিবর্ষে ২৪৮ তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
ঘটনাবলি
১৮৮২ : মার্কিন বিজ্ঞানী এডিসন বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আবিষ্কার করেন।
১৮৮৮ : জর্জ ইস্টম্যান ক্যামেরার রোল ফিল্ম প্যাটেন্ট করেন।
১৯৩০ : লন্ডনে কেমব্রিজ থিয়েটার চালু হয়।
জন্ম
১৮৪৬ : ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম, মার্কিন স্থপতি।
১৮৮০ : ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী, সমাজতান্ত্রিক ও গবেষক।
১৮৯০ : এস ওয়াজেদ আলী, বাঙালি সাহিত্যিক।
১৮৯৪ : জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ভারতীয় বাঙালি রসায়ন বিজ্ঞানী শিক্ষক ও উদ্ভাবক।
১৯০৪ : প্রেমেন্দ্র মিত্র, কল্লোল যুগের অন্যতম প্রধান সাহিত্য-ব্যক্তিত্ব।
১৯০৬ : ম্যাক্স ডেলবুর্ক, নোবেল বিজয়ী জার্মান চিকিৎসা ও জীববিজ্ঞানী।
১৯১৭ : দ্বিতীয় হেনরি ফোর্ড, মার্কিন শিল্পপতি।
১৯৩৪ : ক্লাইভ গ্রেঞ্জার, নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ।
১৯৫২ : ঋষি কাপুর, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক এবং পরিচালক।
১৯৫৪ : সাবিনা ইয়াসমিন, বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী।
মৃত্যু
১৯৬৪ : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী এবং সূর্য সেনের সশস্ত্র বিপ্লবী লোকনাথ বল।
২০০৩ : ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী জগন্ময় মিত্র।
২০০৪ : বাঙালি গীতিকার, সুরকার ও প্রযোজক বীরেশ্বর সরকার।
২০১১ : বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক অজিত রায়।
২০১২ : ভারতীয় বাঙালি লেখক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ।
২০২২ : বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, সুরকার ও গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
অজিত রায়
অজিত রায় ছিলেন বাংলাদেশি সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক। তিনি প্রথীতযশা কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চার দশকের বেশি সময় ধরে তার দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৮ সালের ২৯ জুন। বাবা মুকুন্দ রায় ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা কনিকা রায় ছিলেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী ও স্কুল শিক্ষিকা। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গানে তালিম নেন তিনি। কৈশোরেই শিখে নেন তবলা বাজানো। ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ষাটের দশকে ঢাকায় আসেন। তাঁর গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। পরে টেলিভিশনেও গান করেন; যার বেশিরভাগই রবীন্দ্রসংগীত। সহকর্মী শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। এসময় তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেন আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়া, সুজেয় শ্যামসহ অন্যান্য শিল্পীরা। অজিত রায় নেপথ্য গায়ক হিসেবে বহু বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও সুরুজ মিয়া চলচ্চিত্রে তিনি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ষাটের দশকে রবিঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে তিনি মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেয়ার পরে তার রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানগুলো রণাঙ্গণে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষকে স্বদেশকে ঘিরে চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। পাশাপাশি নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে- একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা, অপমানে তুমি সেদিন, কথা দাও কথাগুলো, আমি যুগে যুগে আসি, হে বঙ্গ ভাণ্ডারে তব, ও আমার দেশের মাটি, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। অজিত রায় ১৯৭২ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
অজিত রায় ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছিলেন। এছাড়াও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র শিল্পী পরিষদ থেকে শব্দসৈনিক পদক, বেগম রোকেয়া পদক, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী পদক, রবি রশ্মি পদক, রবীন্দ্র পদকসহ আরো বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
অজিত রায় বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগেছিলেন। ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের মানুষ অজিত রায়ের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটে তাকে দাহ করা হয়।
সূত্র: সংগৃহীত