1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসের পাতায় ৬ ফেব্রুয়ারি

  • সময় বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
  • ৭৫ বার দেখা হয়েছে

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ৩৭তম দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি
১৯১৮ : ত্রিশ বছর বয়স্ক ব্রিটিশ নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে।
১৯৯৭ : বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, সুখময় ভট্টাচার্য, কোটা শিবরাম করন্থ, এলিজাবেথ ব্রুনার ও ই.সি.জি সুদর্শন একযোগে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মানে ভূষিত হন।

জন্ম
১৯১১ : রোনাল্ড রিগ্যান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম রাষ্ট্রপতি।
১৯২৯ : কলিন মারডচ, ট্রাঙ্কুলাইজার আবিষ্কারক।

মৃত্যু
১৯৩৭ : ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী বাঙালি বিপ্লবী সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৪৬ : বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী।
১৯৪৭ : বাঙালি মুদ্রাতত্ত্ববিদ, প্রত্নলিপিবিশারদ ও ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা নলিনীকান্ত ভট্টশালী।
১৯৭৬ : ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক।
১৯৮৭ : ভারতের বাঙালি গণিতজ্ঞ, গণিতের বহু পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা ও শিক্ষাবিদ কেশবচন্দ্র নাগ।

ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী
ড. নলিনীকান্ত ভট্টশালী ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ জাদুঘরবিশারদ, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদ, মুদ্রাতাত্ত্বিক, প্রাচীন হস্তলিপি বিশারদ, পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক এবং সর্বোপরি দেশপ্রেমিক এক বাঙালি গবেষক।

জন্মগ্রহণ করেন ১৮৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বিক্রমপুরের এক শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্মণ পরিবারে। বাবা রোহিণীকান্ত ভট্টশালী মায়ের নাম শরৎকামিনী দেবী। বাবা ছিলেন পোস্টমাস্টার।

নিজ গ্রামে পাঠশালা শুরু করলেও চাচার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে পূর্ববঙ্গের অনেক স্কুলে পড়তে হয়েছে তাকে। চাচার সঙ্গে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ফলে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় তার। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯১২ সালে ইতিহাসে এমএ করেন ড. নলিনীকান্ত।

সাহিত্যচর্চা দিয়ে লেখালেখি শুরু হলেও তার মেধার যে স্বীকৃতি এবং প্রতিভার যে প্রতিষ্ঠা; তা এসেছে প্রত্নতত্ত্ব থেকে। নলিনীকান্ত বাংলার প্রাচীন ইতিহাস সংরক্ষণের জন্যে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণের প্রচেষ্টা করেন। তারই উদ্যোগে ১৯১২ সালে ঢাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার প্রথম সম্মেলন হয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘরের প্রতিষ্ঠা হয়। ঢাকা জাদুঘরই আজ বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর।

ঢাকা জাদুঘর ছিল তার সমস্ত কাজের কেন্দ্রবিন্দু। মাত্র দুজন কর্মচারী নিয়ে তিনি জাদুঘর চালাতেন। নিজে প্রত্নবস্তু সংগ্র করতেন, সংরক্ষণ করতেন, ছবি তুলতেন, গবেষণা করতেন, প্রদর্শনী ও প্রকাশনা করতেন। পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল ঘুরে জাদুঘরের জন্যে প্রত্নবস্তু সংগ্রহ করতেন। সাভার, বিক্রমপুর প্রভৃতি প্রত্নস্থানে তিনি সীমিত উৎখননও করেন। প্রত্নতত্ত্বিক খনন বিষয়ে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর আগ্রহ ছিল অপরিসীম।

১৯১১ সালে কুমিল্লার ১১ মাইল পশ্চিমে ভারেল্লা গ্রামে প্রাপ্ত নটরাজ মূর্তি পেয়ে তার পাঠোদ্ধার করেন। ১৯১২ সালে তিনি নরসিংদীর বেলাব গ্রামে প্রাপ্ত বিক্রমপুরের ভোজ বর্মদেবের একটি তাম্রশাসনের পাঠোদ্ধার করেন। আরবি শিলালিপি পাঠোদ্ধারের জন্যে ১৯১৮ সালে তিনি আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি বহু সুলতানী আমলের মুদ্রার আরবি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেন।

শুধু প্রত্নবস্তু সংগ্রহ ও জাদুঘরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে প্রকাশ করেন চারটি মৌলিক গ্রন্থ। আইকনোগ্রাফি অব বুড্ডিস্ট স্কাল্পচার ইন দ্য ঢাকা মিউজিয়াম (১৯২৯) তাঁর একটি মাইলফলক গ্রন্থ। ইতিহাসের এ মানুষটি তথ্যের জন্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন মুন্সীগঞ্জ, কোটালীপাড়া, কুমিল্লা, সোনারগাঁও, বরেন্দ্র, খুলনা, যশোর, দিনাজপুর, মালদহসহ বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল।

ভট্টশালীর সম্পাদিত পুঁথি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল। খণ্ডকালীন পড়াতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও বাংলা সাহিত্য বিষয়ে। ১৯২২ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত গ্রিফিথ পুরস্কার অর্জন করেন। দেশের ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও শিল্পকলা নিয়ে গবেষণার জন্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৩৪ সালে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়। প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ন্যুমিসম্যাটিক সোসাইটি ও ঢাকা সাহিত্য পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সম্মানিত সদস্যের পদ।

ভট্টশালী বিশ্বাস করতেন, বাংলাদেশের ইতিহাস, শিল্পকলা, স্থাপত্য, সাহিত্য, দর্শন প্রাচীনকাল থেকে সমৃদ্ধ; প্রাচীন ঐতিহ্য খুঁজে বের করা গেলে বাংলাদেশে প্রকৃত রেনেসাঁস হওয়া সম্ভব। সেই লক্ষ্যে তিনি খ্যাপা পাগলের মতো সারা জীবন পথে-ঘাটে ছুটে বেড়িয়েছেন। আমৃত্যু ঢাকা জাদুঘর ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান-সাধনা-তপস্যার স্থল।

বাংলাদেশের শিকড়-সন্ধানী মাঠপর্যায়ের এ গবেষক ১৯৪৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জাদুঘরের বানীকুটিরে মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com