1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

ইতিহাসে অক্টোবর ১৬ – সমাজসেববক, স্বদেশী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা বসু মাসীমা এর মৃত্যুদিন

  • সময় শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১
  • ৮২৭ বার দেখা হয়েছে

সমাজসেববক, স্বদেশী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা বসু মাসীমা এর মৃত্যুদিন

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৮৯তম (অধিবর্ষে ২৯০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৯০৫ : লর্ড কার্জন ভাইসরয় থাকাকালীন বঙ্গভঙ্গ সংঘটিত হয়।
১৯০৫ : স্বদেশী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র কলকাতার ফেডারেশন হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
১৯২৩ : ওয়াল্ট ডিজনি ও তার ভাই ডিজনি মিলে দি ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৩৪ : চীনে চিয়াং কাই শেকের বিরুদ্ধে এক লক্ষ সেনাসহ মাও সেতুংয়ের ৯ হাজার মাইল লং মার্চ।
১৯৪৫ : কানাডার কুইবেকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৭৩ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জর্ডান।

জন্ম

১৭৫৮ : নোয়া ওয়েবস্টার, মার্কিন অভিধান ও পাঠ্যপুস্তক লেখক এবং বানান সংস্কারক।
১৮৬৩ : অস্টিন চেম্বারলেইন, নোবেলবিজয়ী ইংরেজ রাজনীতিবিদ ও চ্যান্সেলর।
১৯২১ : সীতা রাম গোয়েল, ভারতীয় ইতিহাসবিদ, প্রকাশক ও লেখক।
১৯২৭ : গুন্টার গ্রাস, নোবেলজয়ী জার্মান সাহিত্যিক, চিত্রকর, ভাস্কর এবং নাট্যকার।
১৯৫৬ : রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশি কবি, গীতিকার।

মৃত্যু

১৯৮১ : বিংশ শতাব্দীর সেরা সরোদবাদক রাধিকা মোহন মৈত্র
১৯৮৭ : বিশিষ্ট সমাজসেবিকা ও কমিউনিস্ট নেত্রী মনোরমা বসু মাসিমা
১৯৯২ : বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও সাহিত্যিক বাণী রায়
১৯৯৪ : সাহিত্যিক গজেন্দ্রকুমার মিত্র

দিবস

বিশ্ব খাদ্য দিবস৷
বিশ্ব অ্যানেসথেসিয়া দিবস

মনোরমা বসু মাসীমা

মনোরমা বসু মাসীমা ছিলেন সমাজসেববক, স্বদেশী আন্দোলনের নেত্রী। আশৈশব দারিদ্র্য তাকে কঠোর সাধনায় সিদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। দেশপ্রেম, সমাজসেবা ও মানুষের প্রতি ভালবাসার কারণে দলমত-নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি ‘মাসীমা’ বলে পরিচিত ছিলেন। নিজের জীবনে শিক্ষার তেমন সুযোগ পাননি, কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে তার আগ্রহ ও চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না।

জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৭ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল জেলার বানারীপাড়ায় এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। জন্মস্থানের অনুকূল পরিবেশ মনোরমা বসুকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। মাত্র এগারো বছর বয়সে ক্ষুদিরামের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। চৌদ্দ বছর বয়সে বরিশালের বাঁকাই গ্রামের জমিদার চিন্তাহরণ বসুর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং স্বামীর প্রত্যক্ষ সমর্থনে তিনি স্বদেশী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। জমিদার বাড়ির রক্ষণশীলতা ও বিধিনিষেধ অতিক্রম করে তিনি মুক্ত জীবনে প্রবেশ করেন। ছেলেমেয়েদের শিক্ষা ও সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে তিনি জমিদার বাড়ি ছেড়ে বরিশালে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন।

বরিশালে অবস্থানকালে মনোরমা স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং নারী অধিকার রক্ষায় ‘সরোজনলিনী মহিলা সমিতি’র শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম মহিলা সংগঠন। এ সমিতির মাধ্যমেই তিনি নারী সমাজকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন।

১৯৩০ সালে তিনি কংগ্রেস মহিলা কর্মী হন এবং ১৯৩২ সালে কংগ্রেসের ডাকে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। এ সময় বহরমপুর জেলে তিনি উর্মিলা দেবী (দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের বোন), জ্যোতির্ময়ী দেবী প্রমুখ প্রখ্যাত কংগ্রেস নেত্রীর সান্নিধ্য লাভ করেন।

মনোরমা বসু ছিলেন একজন একনিষ্ঠ সমাজসেবক। তিনি অনাথ ও দুঃস্থ মহিলাদের, বিশেষ করে বিধবা ও কুমারী মেয়েদের আশ্রয় দানের জন্যে বরিশালের কাউনিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’। আজীবন তিনি এটি পরিচালনা করেন। তিনি ‘মহিলা আত্মরক্ষা সমিতি’র বরিশাল জেলা শাখার অন্যতম নেত্রী ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে দুর্ভিক্ষ ও মহামারির সময় লঙ্গরখানা, চিকিৎসালয় ও উদ্ধার আশ্রম স্থাপন এবং পুনর্বাসন কাজে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

এছাড়া বরিশাল জেলার বিভিন্ন নারী আন্দোলন, সমাজসেবা ও রাজনৈতিক কাজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। ‘বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বরিশাল জেলা শাখা’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি নারীমুক্তি আন্দোলনকে গতিশীল করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পরিষদের সহসভানেত্রী ছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর নতুন শাসকদের শাসন ও শোষণ জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালে বরিশালের খাদ্য-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তিনি এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন এবং সে সঙ্গে জননিরাপত্তা আইনে আরও তিন বছর কারাভোগের পর ১৯৫২ সালের ২৫ এপ্রিল মুক্তি লাভ করেন।

১৯৫৪ সালের ১০ এপ্রিল স্বামীর মৃত্যুতে তিনি কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েন, কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সে আঘাত কাটিয়ে উঠে তিনি পুনরায় স্বীয় কর্মকাণ্ড শুরু করেন।

১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে মনোরমা বসু আত্মগোপন করেন এবং সে অবস্থা থেকে আত্মপ্রকাশের পর তিনি ‘মাতৃমন্দির আশ্রম’-এর কাজে ব্যস্ত থাকেন। একই সঙ্গে গড়ে তোলেন আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, পল্লিকল্যাণ অমৃত পাঠাগার (শহীদ অমৃতলালের নামে), আর শিশুদের জন্যে মুকুল মিলন খেলাঘর। তার অবর্তমানে মাতৃমন্দিরের কার্যনির্বাহের জন্যে নিজের সব সম্পত্তি মন্দিরের নামে দান করে যান।

১৯৬২ ও ৬৪’র গণআন্দোলন এবং ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল।

পরোপকারী বিরল ব্যক্তিত্বের অধিকারী, দৃঢ়চেতা এবং আদর্শনিষ্ঠ মনোরমা বসুর সমগ্র জীবন ছিল দেশপ্রেমে নিবেদিত। তিনি ছিলেন সাম্যবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এবং যেকোনো সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ। তার জীবদ্দশাতেই সত্যেন সেনের ‘মনোরমা মাসীমা’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

মৃত্যুর পর বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি তাকে ১৯৯২ সালের ১১ মার্চ মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৯৭ সালে শেরেবাংলা পদক (মরণোত্তর), ১৯৯৮ সালে মহিলা পরিষদ কর্তৃক সম্মননা (মরণোত্তর), ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বেগম রোকেয়া পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়। তার রেখে যাওয়া যাবতীয় সম্পত্তি নিয়ে ২০০১ সালে গঠন করা হয় ‘মনোরমা বসু মাসিমা স্মৃতি ট্রাস্ট’।

মহীয়সী এই নারী ১৯৮৬ সালের ১৬ অক্টোবর তারই প্রতিষ্ঠিত মাতৃমন্দিরে মৃত্যুবরণ করেন।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com