বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ মৃত্যুবরণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৯২তম (অধিবর্ষে ২৯৩তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় হন্ডুরাস।
১৯৭২ : বাংলাদেশ ইউনেসকোর সদস্যপদ লাভ করে।
১৮৬২ : আগুস্ত ল্যুমিয়ের, ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্রের অগ্রদূত।
১৮৯৯ : মিগুয়েল আনজেল আন্তুরিয়াস, গুয়াতেমালার নোবেলজয়ী কথাশিল্পী।
১৯০৩ : রাইচাঁদ বড়াল, প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সুরশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক।
১৯২৪ : নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ভারতীয় বাঙালি কবি।
১৭৪৫ : ইংরেজ সাহিত্যিক জোনাথন সুইফট।
১৯২২ : যশস্বী বাঙালি লেখক চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায়।
১৯৩৬ : মহান চীনা সাহিত্যিক লু স্যুন।
১৯৩৭ : নিউজিল্যান্ডীয় নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।
১৯৭৪ : বাঙালি কবি ফররুখ আহমদ।
১৯৯৫ : বাংলাদেশের শিল্পপতি জহুরুল ইসলাম।
২০১৪ : বাংলাদেশের ইতিহাসবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমদ।
এ এফ সালাহউদ্দীন আহমদ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের খ্যাতিমান উদারবাদী, মুক্তচিন্তক ঐতিহাসিক। পেশাগত জীবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তিনি বিশ্বাসে ও আচরণে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত এবং মুক্তচিন্তা ও ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সত্য প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে সভ্যতার বীজতলা বলেই জেনেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দেশের অনেক গুণী ব্যক্তির মুখ থেকে ইতিহাসের মূল্যবান উপাদানকে সংগ্রহ করেছেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালে ফরিদপুরে। বাবার নাম আবু আহমদ ফজলুল মহী। কলকাতার তালতলা হাইস্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, রিপন কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে উচ্চমাধ্যমিক, প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৪৩ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক এবং ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাপানে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ ও গবেষণা করেন। পিএইচডি করেন লন্ডনে।
সালাহউদ্দীন আহমদ জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৪৮ সালে। সেখানে তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে ১৯৫৪ সালে ইতিহাস বিভাগে যোগ দেন এবং সেখানে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন ১৯৭৮ সালে এবং ১৯৮৪ সালে নিয়মিত চাকরি থেকে অবসর নেন। তবে পরে তিনি সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
শিক্ষকতা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি, ইতিহাস পরিষদ, জাতিসংঘ সমিতি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ইত্যাদি।
রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- বাঙালির সাধনা ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ: জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ইতিহাসের সন্ধানে, সোশাল আইডিয়াস অ্যান্ড সোশাল চেঞ্জ ইন বেঙ্গল: ১৮১৮-১৮৩৫, বেঙ্গলি ন্যাশনালিজম অ্যান্ড দ্য এমারজেন্স অব বাংলাদেশ: অ্যান ইনট্রোডাকটরি আউটলাইন, বরণীয় ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন সুহৃদ, উনিশ শতকে বাংলার সমাজ-চিন্তা ও সমাজ বিবর্তন, হিস্ট্রি অ্যান্ড হেরিটেজ: রিফ্লেকশনস অন সোসাইটি পলিটিক্স অ্যান্ড কালচার অব সাউথ এশিয়া ইত্যাদি।
নিজ কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বাংলা একাডেমি ফেলোশিপসহ বিভিন্ন পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
মানবতাবাদী এই ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এ এফ সালাহ্উদ্দীন আহমদ নব্বইয়ের কোঠায় বয়স হলেও বেশ সুস্থই ছিলেন। চলাফিরাও করতেন কারও সাহায্য ছাড়াই। ২০১৪ সালের ১৯ অক্টোবর আকস্মিকভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত