বাংলাদেশের ষাট দশকের রোমান্টিক কবি ওমর আলী জন্মগ্রহণ করেন।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৯৩তম (অধিবর্ষে ২৯৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮৫৪ : অবিভক্ত বাংলায় প্রথম ডাকটিকিট বিক্রি শুরু হয়। ডাকটিকিটের চিত্রশিল্পী ছিলেন নুমারউদ্দীন।
১৭৮৬ : ফেলিক্স কেরি, উইলিয়াম কেরির ছেলে ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার পথিকৃৎ এবং এনসাইকোপিডিয়া ব্রিটানিকার পঞ্চম সংস্করণের বঙ্গানুবাদক।
১৮২২ : টমাস হিউজ, ইংরেজ লেখক।
১৮৫৯ : যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, বাঙালি পণ্ডিত ও বাঙলা শব্দকোষ প্রণেতা।
১৮৭১ : অতুলপ্রসাদ সেন, বাঙালি কবি, গীতিকার এবং গায়ক।
১৮৯১ : জেমস চ্যাডউইক, নিউট্রনের আবিষ্কারক।
১৯৩৯ : ওমর আলী, বাংলাদেশি কবি।
১৯৬৭ : মনিকা আলী, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ও ঔপন্যাসিক।
১৮৫৪ : ফরাসি কবি জ্যাঁ আর্তুর র্যাবো।
১৮৯০ : পর্যটক ও লেখক স্যার রিচার্ড বার্টন।
১৯৬৪ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩১তম রাষ্ট্রপতি হার্বার্ট হুভার।
২০১২ : বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিক অলি আহাদ।
বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস।
বিশ্ব অস্টিওপরোসিস দিবস।
ওমর আলী ছিলেন একজন বাঙালি বাংলাদেশি রোমান্টিক কবি। যিনি ষাট দশকের কবি হিসেবে চিহ্নিত। তার রচিত প্রেমের কবিতাসমূহের জন্যে তিনি বিখ্যাত। শ্যামবর্ণা স্বাস্থ্যবতী আদিম বাঙালি নারীকে তিনি তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ানুভূতি দিয়ে আবিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়েছেন। তার কবিতায় গ্রামবাংলার মাটির অকৃত্রিম সোঁদা গন্ধ মেলে। প্রেয়সীর সংস্পর্শ, মিলন ও বিরহ, অফুরন্ত প্রকৃতি সৌন্দর্যের রোমান্টিক অনুকল্পে তার কাব্য বাঙময় হয়।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালের ২০ অক্টোবর পাবনা জেলার সদর উপজেলায় চরশিবরামপুর গ্রামে মাতুলালয়ে। বাবা মো. উজির আলী। মা আহ্লাদী খাতুন। বাবার নিবাস ছিল পাশেই পদ্মা নদীর কাছাকাছি চরঘোষপুর গ্রামে। গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও পদ্মার নৈসর্গিক পরিবেশ কবির মনকে সর্বদা ব্যাকুল করে রাখত।
শিক্ষাজীবনে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। প্রথমে চরঘোষপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। পরে পাবনা শহরের গোপালচন্দ্র ইনস্টিটিউশনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। এরপর ঢাকার আরমানিটোলার হাম্মাদিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হন এবং এ স্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে উচ্চমাধ্যমিক, পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে বিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭০ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবার ১৯৭৫ সালে বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
কর্মজীবনে তিনি একসময় ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকার বার্তা বিভাগে সাব-এডিটর পদে কর্মরত ছিলেন। এই চাকরি ছেড়ে দিয়ে পাবনা শহরের মহিমচন্দ্র জুবিলি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এটাও ছেড়ে দিয়ে তিনি কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামাড়া কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তারপরও তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তিনি পাবনা শহরে অবস্থিত শহীদ বুলবুল কলেজে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এটি সরকারিকরণ হওয়ায় তিনি শেষ পর্যন্ত সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক (ইংরেজি) পদে উন্নীত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।
ওমর আলীর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘এদেশে শ্যামল রঙ রমণীর সুনাম শুনেছি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে। এছাড়াও তার প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থগুলো হলো-অরণ্যে একটি লোক, আত্মার দিকে, সোনালি বিকেল, নদী, নরকে বা স্বর্গে, বিয়েতে অনিচ্ছুক একজন, প্রস্তর যুগ তাম্র যুগ, স্থায়ী দুর্ভিক্ষ সম্ভাব্য প্লাবন, তেমাথার শেষে নদী, নিঃশব্দ বাড়ি, কিছুদিন, ডাকছে সংসার, যে তুমি আড়ালে, ফুল পাখিদের দেশ, ফেরার সময়, স্বদেশে ফিরছি, একটি গোলাপ, প্রসারিত করতল, ছবি, শুধু তোমাকে ভালো লাগে, তোমাকে দেখলেই, ভালোবাসার দিকে, এখনো তাকিয়ে আছি, ভালোবাসার প্রদীপ, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি।
এছাড়া কুতুবপুরের হাসনা হেনা এবং খান ম্যানসনের মেয়ে নামে দুটি উপন্যাস লিখেছেন তিনি। সাহিত্যে অবদানের জন্যে বিভিন্ন সময় নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। এর মধ্যে- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বন্দে আলী মিয়া পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক (মরণোত্তর) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে কবি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত