একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৩০তম (অধিবর্ষে ২৩১তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮০০ : লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন
১৯৫৮ : ব্রজেন দাস প্রথম বাঙালি ও প্রথম এশীয় হিসাবে ইংলিশ চ্যানেল সাঁতার কেটে অতিক্রম করেন
১৯৬১ : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু
১৯৬৩ : জেমস মেরেডিথ প্রথম কালো নাগরিক; যিনি মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন
১৭৫০ : আন্তোনিও সালিয়েরি, ইতালীয় ধ্রুপদী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও শিক্ষক
১৭৯৪ : জন ক্লার্ক মার্শম্যান, ইংরেজ সাংবাদিক ও ঐতিহাসিক, জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’র প্রকাশক
১৯০০ : বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত, ভারতীয় কূটনৈতিক, রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদে ভারতের প্রথম মহিলা সভাপতি
১৯৩৪ : গুলজার, প্রখ্যাত ভারতীয় কবি, সুরকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক
১৯৪৮ : ফারুক, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেতা ও প্রযোজক
১৯৪৯ : সেলিম আল দীন, বাংলাদেশি নাট্যকার ও গবেষক
১২২৭ : চেঙ্গিস খান, প্রধান মঙ্গোল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা ইতিহাসেও তিনি অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি
১৬৪৮ : ইব্রাহিম (উসমানীয় সুলতান), অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান
১৯৪৫ : সরলা দেবী চৌধুরানী, বিশিষ্ট বাঙালি বুদ্ধিজীবী
১৯৪৫ : সুভাষচন্দ্র বসু, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা
১৯৬৮ : মওলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ, একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ
১৯৬৯ : হুমায়ুন কবির, ভারতীয় বাঙালি শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক ও দার্শনিক
মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ ছিলেন একজন বাঙালি সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক এবং ইসলামি পণ্ডিত। তিনি বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং মাসিক মোহাম্মদীর সম্পাদক ছিলেন। বাংলার সাংবাদিকতার ভুবনে তিনি এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। পাক-ভারত উপমহাদেশের গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবে তার অবদান অনস্বীকার্য।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬৮ সালে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে পশ্চিম বঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর গ্রামে। বাবা মওলানা আবদুল বারি খাঁ ছিলেন মধ্যবঙ্গের একজন বিখ্যাত আলেম এবং পীর। তিনি তার বাবার গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার মায়ের নাম বেগম রাবেয়া খাতুন। বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ ছিল আকরম খাঁর জীবন। শৈশবে গ্রামের মক্তবে শিক্ষারম্ভ করেন। ১২-১৩ বছর বয়সে বাবা-মাকে হারান। এরপর নানার কাছে প্রতিপালিত হন। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি অনুরাগবশত ইংরেজি স্কুল ত্যাগ করে কলকাতার আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। লেখাপড়ার পাশাপাশি কৃতি খেলোয়াড় হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। মুসলিম স্পোর্টিং ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি সমাজ, জাতি ও দেশ সেবায় আত্মনিয়োগ করতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।
১৯১০ সালে তিনি সাপ্তহিক মোহাম্মদী ও দৈনিক খাদেম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯২১ সালে উর্দূ জামানা ও বাংলা দৈনিক সেবক প্রকাশ করেন। মুসলিম সমাজকে জাগানোর জন্যে ১৯৩৬ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। সেসময় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল এবং দৈনিক আজাদ ছিল বাংলাভাষার প্রথম সংবাদপত্র।
মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ বাংলার ভাষা-সাহিত্যের গবেষণায় যেমন অবদান রেখেছেন; তেমনি সমকালীন রাজনীতিক আন্দোলন ও বঙ্গীয় মুসলমানের আধুনিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও এক বিশিষ্ট নাম। তার মোস্তফা-চরিত যেমন মহানবী (স.)-এর বস্তুনিষ্ঠ জীবনী তেমনি তার রচিত মোসলেম বঙ্গের সামাজিক ইতিহাস গ্রন্থটি আমাদের সামাজিক ইতিহাস প্রণয়নে একটি অন্যতম আকর গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত।
আকরম খাঁ ইসলাম ধর্ম এবং বাংলা ও ভারতের মুসলমানদের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তার সময় মাদরাসায় সামান্য কিছু ইংরেজি শেখার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা লেখাপড়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। বুকে অদম্য সাহস ও ইচ্ছা থাকলে অসম্ভবকে যে সম্ভব করা যায় তার উজ্জ্বল নমুনা আকরম খাঁ। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় ইংরাজিতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন এবং বাংলা ভাষার একজন বলিষ্ঠ সাহিত্যিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। আরবি, ফারসি ও উর্দুতে তার প্রচুর জ্ঞান ছিল। তিনি ফারসিতে কবিতা লিখতেন। তিনি ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী।
বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাংলা এবং বাংলা ভাষা ছাড়া যে অন্য কিছুই না, সে বিষয়ে ১৩২৫ বঙ্গাব্দেই আকরম খাঁ লিখেছিলেন, ‘দুনিয়ায় অনেক রকম অদ্ভুত প্রশ্ন আছে, বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা কি? উর্দু না বাংলা? এই প্রশ্নটা তাহার মধ্যে সর্বাপেক্ষা অদ্ভুত। নারিকেল গাছে নারিকেল ফলিবে না, বেল?…বঙ্গে মুসলিম ইতিহাসের সূচনা হইতে আজ পর্যন্ত বাংলা ভাষাই তাদের লেখ্য, কথ্য ও মাতৃভাষা রূপে ব্যবহৃত হইয়া আসিতেছে এবং ভবিষ্যতেও মাতৃভাষারুপে ব্যবহৃত হইবে।’
বাংলা সাহিত্যে তার অক্ষয় কীর্তি হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর জীবনী ‘মোস্তফাচরিত’ এবং পবিত্র কোরআনের বঙ্গানুবাদ ‘তফসিরুল কোরআন’। অন্যান্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সমস্যা ও সমাধান, আমপারার বঙ্গানুবাদ।
আকরম খাঁ সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধী ছিলেন। বঙ্গীয় মুসলমান সমাজের সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ক্ষণজন্মা পুরুষ ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। মুসলিম জাগরণে তার অবিস্মরণীয় অবদান চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণযোগ্য।
জীবনব্যাপী অবদানের জন্যে মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ পেয়েছেন নানা সম্মাননা ও পদক। ১৯৮১ সালে বাংলদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ১৯৬৮ সালের ১৮ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত