বাংলা সঙ্গীতের আদি ও প্রবাদপুরুষ, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণচন্দ্র দে এর জন্মদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৩৬তম (অধিবর্ষে ২৩৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৮৭৫ : ক্যাপ্টেন ম্যাথুওয়েব প্রথম সাঁতার কেটে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেন।
১৯০২ : সেইন্ট পিয়েরে-লে-তে জোয়ান অব আর্কের মূর্তি উন্মোচন করা হয়।
১৯৪৯ : উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (ন্যাটো) গঠিত হয়।
১৯৬৬ : ভারতীয় সাঁতারু মিহির সেন জিব্রাল্টার প্রণালি অতিক্রম করেন।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পানামা ও উরুগুয়ে।
১৮৯৩ : কৃষ্ণচন্দ্র দে, বাংলা সঙ্গীতের আদি ও প্রবাদপুরুষ, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী।
১৮৯৮ : অ্যালবার্ট ক্লুঁদে, নোবেলবিজয়ী বেলজিয়ান-আমেরিকান চিকিৎসক ও কোষ জীববিজ্ঞানী।
১৮৯৯ : হোর্হে লুইস বোর্হেস, আর্জেন্টিনীয় সাহিত্যিক।
১৯২৯ : ইয়াসির আরাফাত, ফিলিস্তিনি নেতা ও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী।
১৯২৭ : মিশরের জাতীয় নেতা সাদ জগলুল পাশা।
১৯৫৬ : জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার কেনজি মিজোগুচি।
১৯৮৮ : মার্কিন অভিনেতা লিওনার্ড ফ্রে।
২০০৪ : বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও সমাজকর্মী আইভি রহমান।
কৃষ্ণচন্দ্র দে ছিলেন বাংলা সঙ্গীতের একজন আদি ও প্রবাদ পুরুষ, কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী। তিনি ছিলেন সিনেমা ও থিয়েটার অভিনেতা, থিয়েটার প্রযোজক, সঙ্গীত পরিচালক ও দক্ষ সঙ্গীত শিক্ষক। মুম্বইয়ের সঙ্গীত জগতে তিনি সঙ্গীতাচার্য ‘কে.সি.দে’ নামেও সুপরিচিত। বাংলার অপর এক কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের প্রথম সঙ্গীত শিক্ষক ছিলেন তিনি। তার ভ্রাতুষ্পুত্র হলেন বৈচিত্র্যের বিচারে সর্বকালের অন্যতম সেরা কণ্ঠশিল্পী মান্না দে।
জন্মগ্রহণ করেন ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ আগস্ট বৃটিশ ভারতে কলকাতার সিমলে পাড়ার মদন ঘোষ লেনে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। জন্মাষ্টমীতে জন্ম বলেই তার নামকরণ হয়েছিল কৃষ্ণচন্দ্র। তবে ডাকনাম ছিল বাবু। বাবা শিবচন্দ্র দে এবং মা রত্নমালা দেবী।
কৃষ্ণচন্দ্র চোদ্দ বৎসর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেন অন্তর্দৃষ্টিতে পেলেন সুরসাধনার প্রতি এক ঐশ্বরিক আকর্ষণ। তার মা-ও লক্ষ্য করেছিলেন ছেলের সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ। তাই মায়ের উৎসাহেই শুরু হলো তার সঙ্গীতচর্চা। ষোল বছর বয়সে সে সময়ের বিখ্যাত খেয়ালিয়া শশীমোহন দে-র শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সঙ্গীত চর্চা শুরু করেন। নিজ পরিশ্রম ও দক্ষতায় আয়ত্ত করতে থাকেন সবকিছু। হিন্দি ও উর্দু সঠিকভাবে উচ্চারণের জন্যে মৌলবির কাছে সে বিষয়ে শিক্ষাও নেন তিনি।
সঙ্গীতের গুণীজনের কাছে সঙ্গীত শিক্ষার পাশাপাশি তিনি কলকাতা ও মফস্বলের গানের অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করতে শুরু করেন। দরাজ ও মিষ্টি গলার অন্ধগায়ক অচিরেই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। মাত্র ১৮ বৎসর বয়সেই এইচ.এম.ভি থেকে তার প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে প্রতি মাসেই একটি করে রেকর্ড বের হতে থাকে।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর আমন্ত্রণে মঞ্চে আসেন অভিনয়ের সাথে কণ্ঠশিল্পী হিসেবেও। অ্যালফ্রেড থিয়েটারে ‘বসন্তলীলা’ নাটকে বসন্তদূতের ভূমিকায় অভিনয় ও ‘সীতা’ নাটকে তার কণ্ঠের গান ‘অন্ধকারের অন্তরেতে অশ্রু বাদল ঝরে’ দর্শকদের মোহিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটকে অন্ধ ভিখারির চরিত্র অভিনয় করেন।
১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত রঙমহল থিয়েটারের পরিচালকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। রঙমহল, মিনার্ভা ও অন্যান্য থিয়েটারে মঞ্চস্থ বহু নাটকে তার দেওয়া সুর বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল। তিরিশের দশকেই মঞ্চের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও গান গাওয়া শুরু করেন কৃষ্ণচন্দ্র।
বাংলা চলচ্চিত্র তখন নির্বাক থেকে সবাক হতে শুরু করেছে আর তিনি একের পর গাইতে থাকেন। ‘ভাগ্যচক্র’, ‘দেবদাস’, ‘গৃহদাহ’, ‘বিদ্যাপতি’, ‘চাণক্য’, ‘আলোছায়া’, ‘পূরবী’, ‘বামুনের মেয়ে’, ‘মীনাক্ষী’ ইত্যাদি সিনেমায় নেপথ্যে কণ্ঠদান করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তবে ছবিগুলোতে সুরকার ও গীতিকারদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
কেননা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, বাণীকুমার, চণ্ডীদাস, হেমেন্দ্রকুমার রায়, অজয় ভট্টাচার্য, শৈলেন রায় প্রণব রায় প্রমুখ গীতিকার রচনায় এবং পঙ্কজকুমার মল্লিক ও রাইচাঁদ বড়ালের সুরারোপে গানগুলো আজও অবিস্মরণীয়। ‘স্বপন যদি মধুর হয়’, ‘তোমার কাজল আঁখি’, ‘তুমি গো বহ্নিমান শিখা’, ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান’সহ এমন বহু কালজয়ী গান লোকমুখে আজও জনপ্রিয়। বহু ছায়াছবিতে তিনি নিজেও সুর করেছিলেন।
অন্তর্দৃষ্টি দিয়েই সুর সাধনা করতেন তিনি। চোখের অন্ধত্ব তাকে জীবনের উত্তরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বলা যায়, সে সময়ের শ্রেষ্ঠ পুরুষ গায়ক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ নভেম্বর ৬৯ বৎসর বয়সে কলকাতাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত