1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৪৩ অপরাহ্ন

ইতিহাসে আগস্ট ৩১ -বীর বিক্রম, ক্রিকেটার আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল এর মৃত্যুদিন

  • সময় মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১
  • ১৬৬০ বার দেখা হয়েছে

ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম, ক্রিকেটার আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল এর মৃত্যুদিন

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২৪৩তম (অধিবর্ষে ২৪৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৯৫৭ : মালয়েশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬২ : লাতিন আমেরিকার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬৮ : ভারতে তৈরি উপগ্রহ ‘রোহিনী’ আকাশপথে যাত্রা করে।
১৯৭৫ : বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে গণচীন।
১৯৯১ : সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্র কিরগিজিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে।

জন্ম

১৯১৩ : বার্নার্ড লভেল, ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী।
১৮৭০ : মারিয়া মন্টেসরি, ইতালীয় চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ, নিজের নামে প্রতিষ্ঠা করা শিক্ষা দর্শন- ‘মন্টেসরি শিক্ষাপদ্ধতি’র জন্যে সুপরিচিত।
১৯১৯ : অমৃতা প্রীতম, পাকিস্তানে জন্ম নেয়া ভারতীয় কবি ও লেখক।
১৯৬৩ : ঋতুপর্ণ ঘোষ, বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতা।

মৃত্যু

১৮৬৭ : ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়ার
১৯২০ : জার্মান চিকিৎসক, মনোবৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক উইলহেম উন্ট
১৯৪১ : রাশিয়ান কবি ও লেখক মারিনা টসভেটাভা
১৯৬৩ : ফরাসি চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর জর্জেজ ব্রাক
১৯৭১ : ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা, বীর বিক্রম, ক্রিকেটার আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল
১৯৮৫ : নোবেল বিজয়ী জীববিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ম্যাকফারলেন বার্নেট
১৯৯৭ : যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন যুবরাজ্ঞী প্রিন্সেস ডায়ানা
২০০২ : নোবেল বিজয়ী ইংরেজ রসায়নবিদ জর্জ পোর্টার
২০০৫ : নোবেল বিজয়ী পোলিশ বংশোদ্ভূত ইংরেজ পদার্থবিদ জোসেফ রটব্লাট
২০২০ : ভারতের প্রথম বাঙালি ও ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি মহামান্য প্রণব মুখোপাধ্যায়

আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল

আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল বীর বিক্রম, যিনি শহীদ জুয়েল নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহত হওয়া গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ক্রিকেটার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন ঢাকার কিংবদন্তিতুল্য ক্র্যাক প্লাটুনের সদস্য ছিলেন।

১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা তাকে আটক করে। ধারণা করা হয় ৩১ আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা ক্রিকেটার জুয়েলকে হত্যা করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্যে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ১৮ জানুয়ারি পৈতৃক বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ পাইকশা গ্রামে। বাবা আবদুল ওয়াজেদ চৌধুরী এবং মা ফিরোজা বেগম।

রাজধানী ঢাকার টিকাটুলির ৬/১ কে এম দাস লেনেও তার বাবার বাড়ি ছিল, সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলার অন্য অনেক মুক্তিকামী জনতার মতো ঘরে বসে থাকতে পারেননি জুয়েল। ব্যাট ছেড়ে পাক হানাদার বাহিনীর বিপক্ষে হাতে তুলে নেন অস্ত্র।

১৯৭১ সালের ৩১ মে যুদ্ধের জন্যে ঘর ছাড়েন তিনি। যাওয়ার আগে নিজের বাধাই করা একটা ছবি দিয়ে মাকে বলে যান, ‘আমি যখন থাকবো না, এই ছবিতেই আমাকে পাবে।’

যুদ্ধে গিয়েও তার ধ্যানেজ্ঞানে ছিল শুধুই ক্রিকেট। বলা যায়, স্বাধীন বাংলার ক্রিকেট। একবার ক্র্যাকপ্লাটুনের উপর সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ারস্টেশন উড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল। তারই ধারাবাহিকতায় এক রাতে জায়গাটা রেকি করতে বের হলেন বদি, আজাদ, জুয়েলসহ মোট ১০ জন যোদ্ধা।

বাড্ডার পিরুলিয়া গ্রাম থেকে নৌকায় যাত্রা করার পর বেশ কিছুদূর গিয়ে সবাই টের পেলেন, সামনে থেকে আরেকটা নৌকা আসছে। আর সেটা পাকিস্তানি আর্মিতে ভরা। একমাত্র বদি ছাড়া সবার স্টেনগান ছিল নৌকার পাটাতনের নিচে। সেটা বুঝতে পেরেই বদি কোনো কিছু না ভেবেই সমানে ব্রাশফায়ার চালিয়ে দিলেন সামনের নৌকার দিকে।

হানাদার অনেকে মরলো, নৌকা উল্টে গেল; কয়েকজন হয়তো বেঁচেছিল সাঁতরে। ওদের পক্ষ থেকেও গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। যে কারণে সবকিছু ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর জুয়েল হঠাৎ অন্ধকার থেকে বলে উঠলেন, ‘ওই আমার হাতে যেন কী হইছে’।

পরে টর্চের আলোয় দেখা গেল, পাক হানাদারদের ছোঁড়া গুলি জুয়েলের আঙুল ভেদ করে চলে গেছে। সে অবস্থাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ডা. আজিজুর রহমানের চেম্বারে।

যাওয়ার পথে আজাদ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জুয়েল, তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, না?’ দাঁত বের করে জুয়েল বললেন, ‘নাহ, হেভি আরাম লাগতেছে। দেশের জন্যে রক্ত দেওয়াও হইলো, আবার জানটাও বাঁচলো।’

অভিজ্ঞ ডাক্তার আজিজুর রহমান জুয়েলের হাতের অবস্থা দেখে সেদিন চমকে উঠেছিলেন। আঙ্গুলের রক্তপাত বন্ধ হচ্ছিল না কোনোমতেই। ড্রেসিং করতে গিয়ে অবস্থা আরও বেগতিক।

জুয়েল দাঁতে দাঁত চেপে শুধু বলছিলেন, ‘প্লিজ স্যার, আমার আঙ্গুল তিনটা রাইখেন। দেশ স্বাধীন হলে আমি ওপেনিং নামবো, ক্যাপ্টেন হবো।’

এরপর আর অপারেশনে নামা হয়নি জুয়েলের। থাকতেন সহযোদ্ধা আজাদের বাড়িতে। ৩০ আগস্ট হামলা চালিয়ে আটক করে ক্যাম্পে উঠিয়ে নিয়ে যায় জুয়েল ও তার সহযোদ্ধাদের। অকথ্য নির্যাতনের মাধ্যমে সহযোদ্ধাদের সব তথ্য তার কাছ থেকে আদায় করতে চেয়েছিল শত্রুরা।

কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের মতোই মাটি কামড়ে সেদিন দেশের জন্যে ব্যাট করে গেছেন জুয়েল। পাক হানাদাররা শেষ পর্যন্ত হত্যা করেছিল জুয়েলকে। ৩১ আগস্ট তার মৃত্যুদিন পালিত হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শহীদ জুয়েলকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদানের ঘোষণা দেয়।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার জুয়েলকে মরণোত্তর বীরবিক্রম খেতাবে ভূষিত করে। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ১৪৮। ১৯৯৭ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (মরণোত্তর, ক্রিকেট) প্রদান করা হয়।

দেশের জন্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেয়ার অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্রিকেটার শহীদ জুয়েলের নামে হোম অব ক্রিকেট, মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে তার নামে নামকরণ করা হয়েছে গ্যালারির একটি অংশের।

শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড। ক্রিকেটপ্রেমী জুয়েল তার কর্ম নিয়ে আজও সেখানে দাঁড়িয়ে যেন ব্যাটিং করে যাচ্ছেন, দেশের জন্যে।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com