বাঙালি কথাসাহিত্যিক অমিয়ভূষণ মজুমদার এর মৃত্যুদিন
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৮৯তম (অধিবর্ষে ১৯০তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৪৯৭ : ভাস্কো দা গামা লিসবন থেকে ভারত অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন।
১৯৭২ : আরব মুসলিম দেশ হিসেবে প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ইরাক।
১৯৯০ : আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে পশ্চিম জার্মানি বিশ্বকাপ ইতালিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়।
২০১৮ : বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনী পাস হয়।
১৮৩৯ : জন রকফেলার, মার্কিন শিল্পপতি, উদ্যোক্তা ও জনদরদি।
১৯১৪ : জ্যোতি বসু, ভারতীয় বাঙালি কমিউনিস্ট নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের নবম মুখ্যমন্ত্রী।
১৮২২ : ঊনিশ শতকের প্রথমদিকের ইংরেজ কবি পার্সি বিশি শেলি।
১৮৭৭ : বাংলা সংবাদপত্র জগতের অন্যতম পুরোধা জন ক্লার্ক মার্শম্যান।
১৯৬৭ : অস্কারবিজয়ী ব্রিটিশ অভিনেত্রী ভিভিয়েন লেই।
২০০১ : বাঙালি কথাসাহিত্যিক অমিয়ভূষণ মজুমদার।
২০০৩ : বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য ভারতীয় বাঙালি কবি ও গদ্যকার সুভাষ মুখোপাধ্যায়।
২০১১ : বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী আমিনুল ইসলাম।
২০১৫ : প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা আমজাদ খান চৌধুরী।
অমিয়ভূষণ মজুমদার একজন ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক এবং নাট্যকার। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তার সাহিত্যকর্ম ব্যাপ্ত ছিল। তার সাহিত্য সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে তার ‘রাজনগর’ উপন্যাসের জন্যে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ কোচবিহারে (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি জেলা) তার মামাবাড়িতে। বাবা বাবু অনন্তভূষণ মজুমদার ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের পাবনা জেলার পাকশির জমিদার। তাদের পরিবারের আসল পদবি ছিল ‘বাগচি’। অমিয়ভূষনের মায়ের নাম জ্যোতিরিন্দু দেবী। পাঁচ ভাই দুই বোন। দুই বোনের পরেই ছিলেন অমিয়ভূষণ। ভাইদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
অমিয়ভূষণ খুবই মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যের সাম্মানিক স্নাতক হলেও গণিত, ইতিহাস, দর্শন, ভূগোল, সংস্কৃত এবং আইনশাস্ত্রে দক্ষ ছিলেন। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি সাহিত্যের সাম্মানিকের ছাত্র হিসেবে কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি কোচবিহারে ফিরে আসতে বাধ্য হন। এরপর তিনি কোচবিহারের ভিক্টোরিয়া কলেজে (বর্তমানে আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ) ভর্তি হন। ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে ডিগ্রি হাতে পাওয়ার পর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি প্রথাগত পড়াশোনা বন্ধ করে কোচবিহার মুখ্য ডাকঘরে গ্র্যাজুয়েট করণিক হিসেবে যোগ দেন।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের প্রথম প্রকাশিত রচনা হলো ‘দ্য গড অন মাউন্ট সিনাই’ নামের একটি নাটক। চল্লিশের দশকে এটি মন্দিরা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৫-এ তিনি প্রথম গল্প রচনা করেন যার নাম ছিল ‘প্রমীলার বিয়ে’। তার প্রথম উপন্যাস ‘গড় শ্রীখণ্ড’। এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল সঞ্জয় ভট্টাচার্য সম্পাদিত পূর্বাশা পত্রিকায়। পরে উপন্যাসটি ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বই আকারে প্রকাশিত হয়। ভারতের স্বাধীনতার আগে পরের সময়কালে পদ্মাপারের পটভূমিকায় রচিত হয়েছিল এই উপন্যাসটি। সমাজের উঁচু এবং নিচু কোনো শ্রেণিই বাদ পড়েনি এই উপন্যাসটি থেকে। দ্বিতীয় উপন্যাস ‘নয়নতারা’। এটি ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে রচিত হয়েছিল। প্রথম সংস্করণে এটি ‘নীলভূঁইয়া’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। চতুরঙ্গ পত্রিকাতে প্রকাশের সময় এটির নাম ছিল নয়নতারা। নীলভূঁইয়া নামে ট্রিলজি লেখার পরিকল্পনায় প্রথম উপন্যাসটি ছিল নয়নতারা কিন্তু পরে ট্রিলজি লেখার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়।
প্রবন্ধ ‘লিখনে কি ঘটে’ ছাড়াও অমিয়ভূষণ রচিত গ্রন্থাবলির উপন্যাসের মধ্যে গড় শ্রীখণ্ড, নয়নতারা, দুখিয়ার কুঠি, নির্বাস, মধু সাধুখাঁ, রাজনগর, বিলাস বিনয় বন্দনা, মহিষকুড়ার উপকথা, বিবিক্তা, চাঁদবেনে, বিশ্বমিত্তিরের পৃথিবী, তাসিলার মেয়র, মতিঘোষ পার্ক, উত্তর পুরুষ, মাকচক হরিণ, ট্রাজিডির সন্ধানে, বিন্দনী, উদ্বাস্তু, সোঁদাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সাহিত্যে অবদানের জন্যে বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হন অমিয়ভূষণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো-
১৯৭২ : ত্রিবৃত্ত পুরস্কার
১৯৮৪ : উত্তরবঙ্গ সংবাদ সাহিত্য পুরস্কার
১৯৮৬ : রাজনগর উপন্যাসের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বঙ্কিম পুরস্কার
১৯৮৬ : রাজনগর উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
১৯৯৭ : কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক শরৎ মেডেল সম্মান
২০০০ : কাঞ্চনজঙ্ঘা পুরস্কার
২০০১ : কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিলিট
এছাড়াও সাহিত্যে অবদানের জন্যে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মরণোত্তর সাম্মানিক ডিলিট পান তিনি।
নিজের কথা বলতে গিয়ে অমিয়ভূষণ বলেছিলেন, ‘আমার জীবন সমতলের হাঁটুজলের নদী। পার আছে, পারে ঘরবাড়ি, ধানের আর তিলের ক্ষেত, মেয়েরা জল নিতে আসে, রাতে গুলবাঘাও হয়তো, সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত আছে, কিন্তু নিতান্ত সাধারণ, ভুলে যাওয়ার মতো ঢেউ ওঠে না, মধুকর ডোবে না, জলদস্যুদের বছর চলে না।’
শুধু তাই নয়, নিজের সম্পর্কে তিনি আরো জানান, ‘আমি জানি না কি করে মন তৈরি হয়, কিন্তু আমার এই জীবনে আজ পর্যন্ত কিছু এক্সট্রা অরডিনারি ঘটেনি।’
নিজের সম্পর্কে এমন বললেও অমিয়ভূষণ সৃষ্ট সাহিত্যপাঠ আমাদের জীবনের বিভিন্নতলে সঞ্চরণ করায়। নিত্য-নতুন ঘটনা ও বিষয়ের দ্বার উন্মোচন করে।
২০০১ সালের ৮ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
সূত্র: সংগৃহীত