মনে হতে পারে যে কোয়ান্টায়ন খুব মজা। কথা বলব না। চুপচাপ থাকব। ভেরি ইন্টারেস্টিং। কিন্তু চুপচাপ থাকা এত সহজ না!
যখন আপনি অন্যের সাথে কথা বলবেন না, তখন কী শুরু হবে প্রথম?
নিজের সাথে কথা বলা শুরু হবে। নিজে নিজে কথা শুরু হবে।
এবং ঝগড়াও শুরু হয়ে যাবে। নিজে নিজেই ঝগড়া করছেন, মনে মনে। কথার ঝড়, প্লাবন।
কিন্তু একটা সময় কী হবে? নিজের সাথে নিজে কথা বলতে বলতে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তখন দেখবেন যে, আর কথাই আসছে না। নাথিং।
ঐ যে সময়টা, মন যখন আর কোনো কথা বলছে না ঐটাই হচ্ছে গোল্ডেন সাইলেন্স, হীরণ্ময় মৌনতা।
আসলে যখনই মন কথা বলবে না, নীরবতা মৌনতা, মনও মনের সাথে কথা বলছে না, তখনই আপনার মন সংযুক্ত হবে আত্মার সাথে।
এবং ঐ স্তরে যেতে ৬ ঘণ্টাও লাগতে পারে, ৬ দিন লাগতে পারে, ৬ বছর লাগতে পারে, ১৫ বছর লাগতে পারে।
কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ স্তরে না যাচ্ছেন, লেগে থাকতে হবে। এবং সেটাই বোধির স্তর, সেটাই এলহামের স্তর।
আপনি দেখেন, মহামতি বুদ্ধ বোধির স্তরে পৌঁছার জন্যে ইট টুক সিক্স ইয়ার, ছয় বছর।
তো আসলে নতুন চিন্তার স্তরে যেতে, উপলব্ধির স্তরে যেতে, সত্যকে উপলব্ধি করতে লেগে থাকতে হবে।
আইলাম আর গেলাম খাইলাম আর ঘুমাইলাম, কিছুই বুঝলাম না।
কিছু বুঝবেন না তো। আইলে গেলে আর খাইলে ঘুমাইলে কিছু বুঝবেন না।
বোঝার জন্যে লেগে থাকতে হবে।
আসলে আমরা সবসময় ‘এলহাম এলহাম’ করি। যে এলহামের স্তরে যাব।
এলহাম তো সবসময় ঘোরাঘুরি করছে। এলহাম শুধু নামার জায়গা পাচ্ছে না। নামার জন্য আপনার ব্রেনটাকে কী করতে হবে? ফাঁকা করতে হবে।
ধরুন একটা বিমানবন্দরে রানওয়ে যদি ফাঁকা না থাকে প্লেন কি নামতে পারবে? প্লেন নামতে পারবে না। প্লেন নামার জন্যে রানওয়েটাকে আগে ফাঁকা করতে হবে।
আমরা বদলাতে চাই, পরিবর্তন চাই। পরিবর্তনটা আসতে হবে কোত্থেকে? ভেতর থেকে, বাইরে থেকে না।
বাইরে থেকে কখনো পরিবর্তন আসে না। আপনি ড্রেস যত চেঞ্জ করেন, আপনার পরিবর্তন আসবে না! পরিবর্তন আসতে হবে ভেতর থেকে।
এবং যখন পরিবর্তন আসে আগের মানুষ এবং পরের মানুষ টোটালি ডিফারেন্ট।
আপনি দেখেন মহামতি বুদ্ধের বোধিলাভের আগের জীবন এবং পরের জীবন টোটালি ডিফারেন্ট।
আসলে এই কোয়ান্টায়নটা এত পাওয়ারফুল কেন? এটা মৌনতার মধ্য দিয়ে শক্তির বিকাশ। মৌনতার মধ্য দিয়ে।
ধরুন আপনি অনেকক্ষণ যখন কথা বলছেন না, অনেকক্ষণ চুপ।
তারপরে যখন কথা বলবেন, কথার শক্তিটাই আলাদা। কারণ বাঁধ দেয়া হয়েছে।
এতক্ষণ পর্যন্ত পানি ফুলেছে। এরপরে কথা বলছেন। এই ফোলা পানি ছোট্ট জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
এই যে ধরেন কাপ্তাই ড্যাম। কত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হয়?
তিনটা স্পিলওয়ে আছে, তিনটা যদি সমানভাবে কাজ করে তাহলে ১২০ মেগাওয়াট।
এই পুরো পানি কী হচ্ছে কাপ্তাই ড্যামে আটকাচ্ছে। এবং ওখানে একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে আসছে। ডায়নামো ওখানে চলছে, বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে।
মানে এই পানিটা যদি একটা সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত না হতো, তাহলে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো না।
যখন আপনি কথা বলতে থাকেন তখন কী হয়? এটা একটা শক্তি, নদীর প্রবাহের মতন।
কিন্তু যখন বাঁধ দেয়া হয়, পানিটা ফুলতে থাকে। তারপরে যদি বাঁধের কোথাও ফাটল ধরে যায় সেখান দিয়ে পানি বিশাল গতিতে বেরিয়ে যায়। এটাই হচ্ছে শক্তি।
এই যে সুনামি। সুনামিটা এত পাওয়ারফুল কেন? সুনামি তৈরি হয় কীভাবে? সমুদ্রের গভীরে যেখানে একেবারে নিস্তরঙ্গ সেখানে যখন ভূমিকম্প হয়, কম্পন হয়, সেই কম্পনটা পানির ওপরে কম্পন সৃষ্টি করে, গভীরে।
ওখান থেকে যখন ওপরের দিকে আসতে থাকে একেকটা ঢেউ মানে পাঁচ তলা সাত তলা ১০ তলা বিল্ডিংয়ের মতো উঁচু হয়ে যায়।
আপনারা জানেন যে, ১২ বছর আগে জাপানে যে সুনামি হয়েছিল বিল্ডিংয়ের ওপরে আস্ত জাহাজ নিয়ে বসে আছে! তিন তলা বিল্ডিংয়ের ওপরে জাহাজ, সমুদ্রের জাহাজ!
কিসে? এই ঢেউ। যখন এটা দূর থেকে আসে ওপরের দিকে উঠতে থাকে এবং তীরের দিকে যেতে থাকে, ঢেউয়ের আকারটা পাহাড়ের মতো হয়ে যায় এবং সামনে যা পায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
তো আসলে যখন এই কোয়ান্টায়ন লেভেলে আপনি পৌঁছতে পারবেন, আপনার অতীতের সমস্ত আবর্জনা দেখবেন যে ভেসে গেছে। চিন্তার আবর্জনা সব ভেসে গেছে।
এবং নতুন চিন্তা, নতুন ধারণা, নতুন বিশ্বাস তখন আপনার সামনে চলে আসছে এবং আপনি উপলব্ধির দিক থেকে ভিন্ন মানুষ।
[প্রজ্ঞা জালালি, ০৭ আগস্ট, ২০১৯]