1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

একজন আদর্শ চিকিৎসক হতে চাই

  • সময় মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ বার দেখা হয়েছে

একজন আদর্শ চিকিৎসক হতে চাই

উহাইমং মার্মা

এমবিবিএস শিক্ষার্থী, রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ
জীবন চলার পথে ভগবানের আশীর্বাদ আমি সবসময় অনুভব করেছি। তিনি আমাকে সুস্থ, সুন্দর ও নিরোগ জীবন দান করেছেন এবং আমার সকল বাধাবিপত্তিকে মোকাবেলা করার শক্তি দিয়েছেন।

ছোটবেলার কিছু কথা বলি। ২০১২ সালে যখন আমি ক্লাস সিক্সে ছিলাম সেই সময়ই মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। তখন থেকেই মায়ের জীবনে সংগ্রাম শুরু। আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জমিজমা ছিল না। এজন্যে বাড়িতেই মা কিছু হাঁস-মুরগি পালন করা শুরু করলেন। কিন্তু তাতেও তেমন সুবিধা হলো না। আমাদের এমন দিনও গেছে—দিনে একবেলা খাবার খেয়েছি তা-ও মরিচ ভর্তা দিয়ে।

একসময় মা নতুন জীবন সংগ্রামে বের হলেন। গার্মেন্টসে নিজের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির জন্যে ছোট ভাইকে নিয়ে চট্টগ্রামে পাড়ি জমালেন। আমি নানার বাড়িতে থেকে সাধ্যমতো নিজের পড়াশোনা চালিয়ে নিলাম।

২০১৫ সালে জেএসসি পরীক্ষা দিলাম। জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলাম। তখন থেকে আমাদের গ্রামেরই একজন আমার লেখাপড়ার খরচের ব্যবস্থা করে দিলেন। আমি পড়াশোনা চালিয়ে নিতে থাকলাম। তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

২০১৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৯ পেলাম। ইচ্ছে ছিল চট্টগ্রাম অথবা ঢাকা শহরের ভালো একটা কলেজে পড়ার। কিন্তু আর পড়া হয় নি। লেখাপড়ার এত খরচ চালাবে কে!

আমার গ্রামের কয়েকজন ছেলে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে পড়ত। তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে জানতে পারি যে, আমার সেখানে পড়ার সুযোগ আছে। কলেজে তারা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি নেয়। তাই আমি বিলম্ব না করে ফরম সংগ্রহ করলাম এবং ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। চান্স পেলাম।

এসএসসি-র আগে যেখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই জানতাম না, কোয়ান্টামে প্রথম গিয়েই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখলাম। যখন মনছবি সম্পর্কে জানলাম, আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল। মনছবি দেখতে শুরু করার পর থেকে পড়াশোনার প্রতি আরো মনোযোগ বেড়ে গেল। এমনও হয়েছে যে, দিনের বেশিরভাগ সময় পড়াশোনা করেই কাটিয়ে দিয়েছি।

এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেক ভালো ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগে কোভিড ১৯-এর মহামারির কারণে আমাদের পরীক্ষা শেষ পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হলো। আমাদের সকলকেই কোয়ান্টামের মায়া ত্যাগ করে নিজেদের বাসায় ফিরে যেতে হয়।

বাসায় আসার পর পড়াশোনায় মনোযোগ দিন দিন কমে যেতে লাগল। অবশেষে আমাদের ব্যাচকে এইচএসসি পরীক্ষায় অটোপাশ দেয়া হলো। অটোপাশ দেয়ায় আমার রেজাল্ট জিপিএ-৫ হলো। কিন্তু গ্রুপ সাবজেক্টগুলোর মার্কস ছিল খুব কম। যার কারণে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।

অটোপাশ ঘোষণার পরেই শুরু করলাম আবার পড়াশোনা। ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের সেরা কোচিং সেন্টারগুলোতে পড়ার। কিন্তু পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে নিজের ইচ্ছের কথা প্রকাশ করতে পারি নি। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ মার্মা স্টুডেন্টস কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত ফ্রি কোচিং প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে যাই কিছুদিনের জন্যে।

প্রথমদিকে আমি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু সবকিছু বিবেচনা করে পরে আমি মেডিকেলকে বেছে নিই বেস্ট অপশন হিসেবে। কোচিং সেন্টারের পরিবর্তে বাসায় থেকে প্রস্তুতি নিলাম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার আগে মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় মেডিকেলের জন্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নিলাম।

২ এপ্রিল ২০২১ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। চান্স পেলাম রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজে। বর্তমানে সেখানেই আমি অধ্যয়ন করছি। এই ছিল আমার মেডিকেলে আসার গল্প।

আমার এই জীবন বদলের পেছনে মা, নানা-নানি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, শুভাকাক্সক্ষী আমাকে সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন ও মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

আমি একজন সৎ এবং দায়িত্ববান ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। সেইসাথে নিজের জাতি, ভাষা, সংস্কৃতিকে সর্বোচ্চ আসনে উপস্থাপন করার জন্যে নিজের সর্বোচ্চটুুকু দিয়ে কাজ করে যেতে চাই। আর একজন আদর্শ চিকিৎসক হওয়াই এখন আমার মনছবি।

[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com