করোনা ভাইরাস রোধে সচেতনতাই মূল চাবিকাঠি
করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীর বুকে একটি আতঙ্কের নাম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহারে প্রথম শনাক্ত এই ভাইরাসটি খুব দ্রুতই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বিশ্বের কোটি-কোটি মানুষ ভয়ংকর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। এদেশেও হাজার-হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছে, শত-শত মানুষ মারা গিয়েছে। প্রায় বছর খানেক পর ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও এর প্রয়োগ কার্যকর করা হলেও বারবার রূপ বদলিয়ে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি গবেষকদেরকেও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
৮ মার্চ ২০২০, বাংলাদেশে প্রথম শনাক্ত হয় এ ভাইরাসটি। এরপর সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ। সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করেন। এরপরও পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন, এমনকি অন্তঃজেলা পরিবহন সমূহের চলাচল ও যাত্রী ব্যবস্থাপনাতেও বিভিন্ন বাধা-নিষেধ প্রয়োগ করেন। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের মাত্রা অনুযায়ী গোটা দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করে যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করেন। সরকার শুধু লকডাউন দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি; গৃহবন্দি মানুষদের জন্য খাবার, ঔষুধ ও নগদ অর্থও পৌঁছিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম শুরু করেন এবং অটোপাস দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনা থেকেও মুক্তি দেন। এসব বেশ প্রশংসার দাবি রাখে এবং উদ্যোগগুলো সফল হওয়ায় দেশে করোনা সংক্রমণ হারও কমে আসে।
চলমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ধীরে-ধীরে জেলাসমূহ থেকে লকডাউন তুলে নেওয়া হয়। দীর্ঘ একবছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ পুনরায় খোলার প্রক্রিয়াও নেওয়া হচ্ছিল। ঠিক এমন সময়ই আবারো ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে সংক্রমণ। এর মূল কারণটিই হলো- যথাযথ সচেতনতার অভাব। সরকার ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস সার্ভিস’ চালু করলেও তার বাস্তবায়ন মিলছে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই! অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ছাড়া খুব স্বাচ্ছন্দ্যেই ঘোরাফেরা করছে এবং তারা জেনে-বুঝেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে না।
এছাড়া শহরের বস্তি অঞ্চলে ও গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের মাঝেই করোনা নিয়ে এখনো সচেতনতাই যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। বরং তাদের মাঝে তৈরি হয়েছে করোনা নিয়ে নানা ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার। আবার দেখা যাচ্ছে, ঋতু পরিবর্তনজনিত সামান্য জ্বর-সর্দিতেও মানুষ আতঙ্কিত হয়ে করোনা টেস্ট করাতে যাচ্ছে, ফলে হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়ে যাচ্ছে, তৈরি হচ্ছে লম্বা লাইন। এতে করে অনায়াসেই সুস্থ ব্যক্তিদেরও পরাহত করছে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন ভ্যাকসিন নিলেই তাকে আর করো না ছুঁতে পারবে না। এমন ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগও এর আক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারছে না। এমনকি একবার করোনা থেকে সেরে উঠলেও আবারো করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েই গেছে। না জানি এর শেষ কোথায়।
তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে এই মরণঘাতী ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে আত্মসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যথাসম্ভব ঘরেই থাকা, বাইরে গেলেই মাস্ক পড়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনে নাকে-মুখে হাত না দেওয়া, বারবার সাবান-পানিতে হাত ধোয়া, বেশি বেশি পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই পারে এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে। তাই সচেতনতার প্রচারণা ও বাস্তবায়ন আরো জোরদার করতে হবে। এর পাশাপাশি সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারের অতিসম্প্রতি ২৯ মার্চ ১৮ দফা ঘোষণাও মেনে চলা জরুরি, যা পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত ২সপ্তাহ বহাল থাকবে। এই ১৮ দফার বাস্তবায়ন ও ব্যাপক জনসচেতনতাই পারে করোনার ভয়ঙ্কর দ্বিতীয় ঢেউ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে।