ভাল্লাগে না! সবকিছুই আছে ভাল্লাগে না! কেন ভালো লাগে না? জানি না।
আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন একটা সিনেমার গান ছিল- ‘সে যে কেন এলো না, কিছু ভালো লাগে না’। ঐ সিনেমা দেখে বোঝা যায় যে, আচ্ছা! কেন ভালো লাগে না বোঝা গেল- সে যে কেন এলো না!
আর এখনকার তরুণ-তরুণীদের অবস্থা হচ্ছে, কেন ভালো লাগে না এটা সে নিজেও বোঝে না। আসলেও ভালো লাগে না, গেলেও ভালো লাগে না, দেখলেও ভালো লাগে না, না দেখলেও ভাল্লাগে না! কেন ভালো লাগে না এটা সে নিজেই বোঝে না। কেন মন খারাপ? বোঝে না, জানে না কেন মন খারাপ!
তো এই যে জানি না কেন মন খারাপ এটাও জানি না। তাহলে কীভাবে হবে? আমাকে তো জানতে হবে, কেন আমার মন খারাপ থাকবে।
মন খারাপ হলে মনের মধ্যে কী আছে? খারাপ কেন হবে? এটা কি পচে গেছে, না এটা আহত হয়েছে, না এটা কেউ ক্ষত করেছে, না এটা হোঁচট খেয়েছে? এটা তো আমার জানতে হবে।
কারণ আপনি যখন জানতে পারবেন যে, কেন মনটা খারাপ তখন এটার সলিউশন ফিফটি পার্সেন্ট হয়ে গেল শুধু যদি আপনি জানতে পারেন যে, কেন? হোয়াই? এই সমস্যাটা কেন? ব্যস! ঐ কেন জানার পরেই বাকি ফিফটি পার্সেন্ট দেখবেন যে, সলিউশন বেরিয়ে আসছে- তাহলে আমাকে এই করতে হবে এই করতে হবে এই করতে হবে।
আর জীবন যেহেতু আমার অর্থাৎ প্রত্যেকের নিজস্ব উদযাপনও নিজেই করতে হবে। সমস্যা এলে সমাধানও নিজেকেই করতে হবে আরেকজন করে দিতে পারবে না।
যেরকম আমার খাবার এটা আরেকজন খেয়ে দিতে পারবে? আরেকজন খেয়ে দিতে পারবে না। আমার খাবার আমাকেই খেতে হবে। আমার কাজটা আমাকেই করতে হবে। আমার পথ আমাকেই চলতে হবে। আরেকজন চললে হবে না। আরেকজন চললে এটা তার পথ হবে আমার পথ হবে না। না হবে? হবে না।
এটা হচ্ছে ইম্পর্টেন্ট যে, আমার কাজ আমাকেই করতে হবে। আমার পথ আমাকেই চলতে হবে। এই যে আমার কাজ আমাকে করতে হবে আমার পথ আমাকে চলতে হবে আমার সমস্যা আমাকেই দেখতে হবে। তো এজন্যে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।
এবং এজন্যে প্রয়োজন পারিবারিক সহযোগিতা-শিক্ষা, প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা এবং সামাজিক সহযোগিতা। এটা যখন অনুকূল হয় তখন এটা সহজ হয়।
আবার যখন প্রতিকূল হয় তখনও সহজ হয়। বলবেন যে, এটা তো বুঝলাম না- অনুকূল হলে সহজ হয় প্রতিকূল হলে সহজ হয়। কীভাবে হয়?
অনুকূল হলে সহজে যাওয়া যায় আর প্রতিকূল হলে চেষ্টা করে যেতে হয়। এবং চেষ্টা করে যখন যায় তখন কী হয়? তখন চাপ শার্প করে। যত চাপ হবে তত শার্প হবে। যত চাপ তত শার্প। আমাদের অবশ্য লামাতে কোয়ান্টারা বলে যে, যত চাপ তত কাপ। তাদের মানে শার্পনেসটা হচ্ছে কাপ দিয়ে নির্ধারিত হয়।
তো যত চাপ তত শার্প এবং সমস্যা না এলে আসলে জীবন উদযাপনও করা যায় না। জীবন উদযাপনও কখন হয়? যখন পরিশ্রমের পরে মেহনতের পরে কিছু আসে। যখন কোনো কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা পরিশ্রম করে পাওয়া যায় তখন এটার আনন্দ আলাদা। আর যখন পরিশ্রম ছাড়া পাওয়া যায় তখন আনন্দ থাকে? আনন্দ থাকে না। এই ধুর কী দিয়েছে!
এই যে এখনকার ছেলেমেয়েরা খাবারের ব্যাপারে মানে তাদের অনীহা কেন? মা-বাবা এত খাবার নিয়ে পেছনে পেছনে ঘোরে সে খাবারেই বিরক্তি। আমাদের সময় খাবার নিয়ে আমরা কখনো জেদ করার কোনো সুযোগ পাই নি।
আমাদের যে জেনারেশন! ছোট পরিবার হচ্ছে একটা ফুটবল টিম। মাঝারি পরিবার হলে এক্সট্রা প্লেয়ার থাকবে। আর দুটো টিম হলে এটা হচ্ছে বড় পরিবার। তারা নিজেরাই পজিশন অপজিশন।
তো আসলে আমরা যে সময় কাটিয়েছি আমরা যে সময় এই বয়সে ছিলাম কিশোর ছিলাম কিশোরী ছিলাম তরুণ ছিলাম তরুণী ছিলাম সেই-সময় আর এই সময় অনেক তফাৎ।
আমাদের সময় ইনফরমেশন কম ছিল হজম করা সহজ ছিল। এখন ইনফরমেশন এত বেশি। যেরকম খাবার যদি অনেক বেশি হয় হজম করা কি সহজ হয় না কঠিন হয়? কঠিন হয়। খাবার যদি কম হয় হজম করাটা সহজ হয়।
তো এখন ইনফরমেশন এত বেশি এতমুখী ইনফরমেশন এবং মিস ইনফরমেশন দুটোই। কারণ গাছের চেয়ে আগাছা বেশি থাকে সবসময়। জঙ্গলে গাছের চেয়ে আগাছা বাড়ে দ্রুত, বেশি হয়। আর গাছ কিন্তু বাড়ে আস্তে আস্তে, এরপর ফল দেয়। আগাছা বাড়ে তাড়াতাড়ি মোটা তাজা হয় দেখতে ভালো লাগে কিন্তু কোনো ফল দেয় না।
তো ইনফরমেশনের চেয়ে মিস ইনফরমেশন বেশি এবং এই মিস ইনফরমেশনের প্লাবন। শুধু ইনফরমেশন যে বেশি বললে ভুল হবে। এটা একেবারে প্লাবন বন্যা।
তাহলে ইনফরমেশনের প্লাবন যখন আসবে তখন কী হবে? বদহজম বেশি হবে। কারণ খাবার বেশি তো ইনফরমেশনটা তো ব্রেনের খাবার ব্রেনকে আপনি অতিরিক্ত খাবার দিচ্ছেন। কী হয়ে যাবে? ফ্যাটি হয়ে যাবে। এবং তখন শার্পনেসটা তার কমে যাবে এবং সে তখন কী করবে? অতিরিক্ত খাবার খেলে কী হয়? বমি হয় ক্লান্ত হয় কাজ করতে চায় না।
তো অতিরিক্ত ইনফরমেশন হলে ব্রেন বলে যে ধুর এত দিয়ে লাভটা কী? থাক। যে-কারণে আমরা এখন ভুল তথ্য এবং অতিরিক্ত তথ্যের ভারে আক্রান্ত। এখান থেকে কোনটা যে আমরা গ্রহণ করব কোনটা বর্জন করব কোনটা আমার ভালো কোনটা আমার মন্দ এটা বুঝতে আমাদের কষ্ট।
এবং বুদ্ধিমান সেই হবে সফল সেই হবে যে বুঝতে পারবে যে কোনটা গ্রহণ করব কোনটা গ্রহণ করব না।
[অজেয় তারণ্য, ০৮ মার্চ ২০২৩]