এক সাধক তার জীবনের দীর্ঘ সময় ধরে সাধনা করে বোধি লাভ করলেন। স্রষ্টা তার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে, তার জীবনে একটাই চাওয়া ছিলো তা হলো- সাত মহলা বাড়িতে সোনার পালঙ্কে নাতি-পুতি পরিবেষ্টিত অবস্থায় সুস্থ শরীরে প্রশান্তচিত্তে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চাই। অর্থাৎ একটি মনছবির মধ্যে সবকিছুই চাওয়া হয়ে গেল। সফল ক্যারিয়ার তাকেই বলে যখন একজন মানুষ জীবনের সবগুলো ক্ষেত্রের মধ্যে (ব্যক্তিগত, পেশাগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং আত্মিক) চমৎকারভাবে সমন্বয় করতে পারেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর আলোকায়নে বিকেল চারটার সেশনের বিশেষ আর্কষণ ছিলেন খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান S@ifur’s-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান খান। তিনি একজন রিয়েল ক্যারিয়ার মাস্টার। তিনি তুলে ধরেন তার উপলব্ধি আর অভিজ্ঞতার আলোকে– ‘ক্যারিয়ারে হবো আমি প্রথম’।
আমাদের একটি ভুল ধারণা যে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে জিপিএ ৫ লাগবে, গোল্ডেন জিপিএ না হলে চলবে না, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। এ সমস্ত ভুল ধারণার বাইরে ক্যারিয়ার যে অনেক প্রশস্ত তা জানতে হবে। প্রথম শ্রেণী না পেলেও, জিপিএ-৫ না হলেও হতাশ হতে নেই! জীবন অনেক বড়! ক্যারিয়ারও অনেক বড়! কম জিপিএ বা লেখাপড়া না করেও অনেক কিছু করা যায়।
এপল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস। তার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি ছিলো না। তিনি গ্রাজুয়েশন শেষ করেন নি। কিন্তু তার কৃতিত্বের কারণে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তাকে আলোচনার জন্যে ডাকা হয়।
অনেকেই আছেন যারা ব্যবসা করার জন্যে অনেক টাকা চায়। মূলধন যোগাড় হলে, ঘরে বসেই মুনাফা পেতে চায়। অনেকে ভাবেন আমার প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই। বাবার টাকা বা বংশ পরিচয় নেই। কে আমাকে কাজ দেবে। এ ধারণাও ঠিক নয়।
আমরা চাকরি চাই কিন্তু কাজ করতে চাই না। ব্যবসায় অনেক লাভ চাই কিন্তু পরিশ্রম করতে চাই না। কিন্তু কাজ না করে পরিশ্রম না করে আমরা ক্যারিয়ারে সফল হতে পারবো না।
ক্যারিয়ারে প্রথম হওয়ার কয়েকটি সূত্র-
১. যে যেটাতে ভালো সেটাতে এগিয়ে যেতে হবে
নিজের সম্ভাবনা-সুযোগকে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে- চাকরি করবেন না স্বাধীন পেশায় যাবেন। চিন্তা করতে হবে, কোন কাজটা আপনি ভালো পারেন, কোন কাজে বেশি আনন্দ পান, কোন কাজে নিজের দক্ষতা ও মেধাকে সেবায় রূপান্তরিত করতে পারেন। সেটা খুঁজে বের করতে হবে এবং তাতে এক নম্বর হতে হবে। পরিবারের ইচ্ছা বা কাউকে অনুসরণ করে নয়, পেশা নির্বাচন করুন নিজ পছন্দ অনুসারে। নিজেকে সম্মান করুন, আস্থা রাখুন নিজের যোগ্যতায়। কারণ আপনি নিজেকে যা পাওয়ার উপযুক্ত মনে করবেন আপনি তা-ই পাবেন।
২. বেছে নিন কাজটি যেটি আপনি ভালোবাসেন
একবার কাজ বেছে নিতে পারলে বাকি জীবন আর কাজ করতে হবে না। কারণ তখন কাজটাকে আর কাজ মনে হবে না। নেশাটাকে পেশা বানাতে পারলে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক সহজ হয়।
আপনি যে কাজই করুন না কেন, আপনার কাছে যদি এটি পরিষ্কার থাকে যে, কেন আপনি কাজ করছেন এবং সে কেন-র উত্তর যদি অর্থপূর্ণ কল্যাণকর কিছু করা তাহলেই কাজ হবে আপনার অফুরন্ত আনন্দের উৎস।
৩. মেধাকে ব্যয় করুন আরো বেশি সেবা প্রদানে
আমরা অর্থ, সম্মান, পরিচিতি, ক্ষমতাকে সফল কর্মজীবনের প্রোডাক্ট বা প্রাপ্তি মনে করি। আসলে কর্মজীবনের প্রোডাক্ট শুধু কর্মই। আর ব্যক্তির যা যা প্রাপ্তি/ অর্জন সেগুলো সব বাই-প্রোডাক্ট অর্থাৎ বোনাস বা বাড়তি পাওয়া। আসলে একজন মানুষ যদি তার মেধাকে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে পারেন, বিকশিত করতে পারেন এবং সৃষ্টির সেবায় ব্যয় করতে পারেন, তবে সামান্য কাজও তাকে অসামান্য মানুষে পরিণত করতে পারে।
৪. ক্রমাগত দক্ষতা অর্জনে সচেষ্ট হোন
দক্ষতা হচ্ছে নিজের দায়িত্ব সর্বোত্তম উপায়ে সম্পাদন করতে পারার যোগ্যতা। নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জনে অর্থাৎ হাজার মানুষের মেধা, শ্রম এবং সময়কে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হোন। শুধু কর্মী বা কেরানি নয়, ব্যবস্থাপকীয় গুণাবলি অর্জন আপনাকে উত্তরোত্তর সামনের ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাবে। প্রতিযোগিতা করুন সবসময় নিজের সাথে। বসকে অভিভাবক এবং সহকর্মীকে সহযোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করুন। দক্ষতা অর্জন করলে কাজের পেছনে আপনার ছুটতে হবে না। কাজ আর সম্মানই আপনাকে খুঁজে নেবে।
মেডিটেশন কীভাবে সহায়তা করে:
নীরব মুহূর্ত বা আত্মনিমগ্ন হওয়া ছাড়া একজন মানুষ তার মেধাকে আবিষ্কার করতে পারে না। কোথায় আমার অনন্যতা রয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে মেডিটেশন সহায়তা করে। যখন একজন মানুষ তার মেধাকে আবিষ্কার করতে পারে তখন তার সামান্য কাজই তাকে অসামান্য সাফল্য এনে দেয়। আসলে মেধাকে আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে সে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে, এই আত্মবিশ্বাস তাকে কাজে অনুপ্রেরণা যোগায়।
আসলে শুধু জীবিকা কখনো ক্যারিয়ার বা কর্মজীবন হতে পারে না। সমস্ত জীবনের ভারসাম্য আনাই হচ্ছে ক্যারিয়ার।
পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় কৃতজ্ঞচিত্তে আপনি যেন বলতে পারেন যে, আপনার মেধাকে যতভাবে বিকশিত করা সম্ভব তা আপনি করেছেন, পৃথিবী থেকে যা যা নিতে চেয়েছেন তা নিতে পেরেছেন এবং পৃথিবীকে যা যা দিতে চেয়েছেন তা দিতে পেরেছেন। মেধাকে বিকশিত করে দক্ষতার মাত্রাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারবেন যে আপনার পেশায় যদি কারো নাম উল্লেখ করতে হয় তাহলে আপনার নামটিই প্রথমে চলে আসবে।