মাঝের কয়েক মাস দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ‘বেশি খুশি’ হয়ে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ইচ্ছামত কাজকর্ম করার কারনেই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোভিড মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছিলাম। জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের প্রশংসা করেছিল।আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। আমরা যে বেশি খুশি হলাম, সেটাই আমাদের জন্য কাল হয়ে গিয়েছে।কোভিড-১৯ পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি, হাসপাতালের সুযোগ–সুবিধা ও শয্যা বৃদ্ধি বিষয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা উল্লেখ করেন।
গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মাঝখানে সংক্রমণের গতি কমেছিল। তবে তিন দিন ধরে দিনে ৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংখ্যার হিসাবে যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ। বুধবারও ৫২ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, যা গত সাত মাসের ভিতরে সর্বাধিক।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষ খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে গিয়েছিল। বান্দরবান, কক্সবাজার ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ২৫ লাখ লোক গেছে গত এক মাসে। বাস, ট্রাক, রাস্তাঘাটে কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। সেটা আমাদের জন্য কাল হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য একটি অশনিসংকেতের মতো হয়েছে।এ জন্য বিয়ে, পিকনিক, ঘুরে বেড়ানো বন্ধের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেরা নিজেদের রক্ষা করেন। পরিবারকে রক্ষা করেন। প্রতিবেশী, আপনজন ও দেশকে রক্ষা করেন। শুধু সেবা দিয়ে কুলানো যাবে না, যদি নিয়ন্ত্রণ না করি।
সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের মতো কিছু বিধিনিষেধ ফিরিয়ে এনেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, সর্বাত্মক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যেতে পারে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন সংক্রমণ দমাতে না পারলে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আর পারব না। আমরা হাসপাতালে বেড না হয় বাড়ালাম, কিন্তু রোগী আরও বাড়লে লাভ হবে না। প্রতিদিন ৫০০০ লোক আক্রান্ত হলে এবং সবাই হাসপাতালে আসলে, সারা দেশকে হাসপাতালে রূপান্তর করলেও রোগীর জায়গা দিতে পারব না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী রাখার জায়গা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকার বাইরে গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লায় রোগী যায় না। বেড (শয্যা) পড়ে আছে। ঢাকায় জোরাজুরি না করে কাছের জেলাগুলোতে গিয়ে সেবা নিতে পারেন। সেখানে সব সেবার ব্যবস্থা আছে।’
বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয়, এমন রোগীর সেবাদান কমিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়া পরামর্শ দিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আগে প্রাণ বাঁচান।’ চিকিৎসায় সক্ষমতা বাড়াতে তিনি বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে আরও অন্তত এক থেকে দেড় হাজার শয্যা বাড়ানোরও অনুরোধ করেন কতৃপক্ষকে।