আসলে মানুষের প্রতি নবীজী (স) কত সমমর্মী ছিলেন! অর্থাৎ মানুষকে তিনি ‘মানুষ’ হিসেবে দেখেছেন।
আমরা তো মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখি না। একজন কোনো ভুল করে ফেললে তাকে ‘মানুষ’ হিসেবে বিবেচনা করি না। তার ভুল সংশোধনের চেয়ে, তাকে কীভাবে শাস্তি দেয়া যায় এটা চিন্তা করি, তাকে কীভাবে নিন্দা করা যায় এটা আমরা চিন্তা করি।
আর তিনি যে রাহমাতুল্লিল আলামিন।
কীভাবে রাহমাতুল্লিল আলামিন?
একবার মদিনাতে এক সাহাবী মসজিদে নববীতে এসে হাউমাউ করে যে, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
রোজার দিন।
নবীজী (স) বললেন যে, কী শেষ হয়ে গেছে?
সে বলল যে, আমি মানে রোজার সময় আমার স্ত্রীর সাথে আমি মিলিত হয়ে গেছি! আমার তো গুনাহ হয়ে গেছে! আমার সব শেষ হয়ে গেছে!
এখন কী হবে?
তো নবীজী (স) হাসলেন। বললেন যে, ঠিক আছে, তুমি একটা দাস আজাদ করে দাও।
বলে যে, আমার কোনো দাস নাই।
নবীজী (স) বললেন যে, তাহলে তুমি কিছু সদকা করে দাও। বিতরণ করে দাও।
বলে যে, আমার বিতরণ করার মতো কিছু নাই।
তো এর মধ্যে একজন খেজুরের একটা ঝুড়ি নিয়ে এসেছে নবীজীকে দেয়ার জন্যে।
তো উনি বললেন, ঠিক আছে। এই ঝুড়ি নিয়ে যাও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দাও।
বলে যে হুজুর, মদিনাতে আমার চেয়ে গরিব আর কেউ নাই।
তো বললেন যে, যাও ঠিক আছে তুমি এগুলো নিয়ে গিয়ে খাও।
অর্থাৎ মানুষের প্রতি কত সমমর্মী ছিলেন!
সে এসেছে গুনাহর শাস্তির জন্যে। নবীজী তাকে খেজুর দিয়েছেন যে ঠিক আছে বিতরণ করার তোমার চেয়ে গরীব যখন কেউ নাই, এবং বলল যে, হুজুর, আপনি খোঁজ নেন। মদিনায় আমার চেয়ে গরিব আর কেউ নাই।
আসলেই গরীব না হলে তো আর বলে না।
বললেন যে ঠিক আছে। তুমি নিয়ে যাও। সন্তানসন্ততি নিয়ে খাও।
তো আসলে মানুষের প্রতি এই মমতা, এই মমতার জন্যেই তিনি ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন, করুণাস্বরূপ মানুষের জন্যে।
আসলে তিনি মানুষকে সবসময় সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন, ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন, তার ভালো গুণটাকে জাগাতে চেয়েছেন।
ভুলটাকে তিনি সংশোধন করেছেন।
আবার অন্যায় যখন হয়েছে, তার আসলে শক্তিটা কোথায়?
তিনি সিস্টেম প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
তার শক্তিটা কোথায়? যে না, চুরি করলে তার কী করতে হবে? তার শাস্তি হচ্ছে- হাত কাটতে হবে। হাত কেটে দাও যাতে ঐটা দেখে আর কেউ চুরি না করে।
অর্থাৎ শাস্তি সবসময় দৃষ্টান্তমূলক।
আরে এই যে এই যে ধর্ষণ.. কিচ্ছু না। ধর্ষকের বয়স যাই হোক, মানে আমরা আবার কী? কিশোর অপরাধী, কিশোর খুনি।
আরে কিশোর খুনি আবার কী? খুন যে করল সে আর কিশোর থাকল কোথায়? যে খুন করতে পারে, সে কি কিশোর থাকে! যে ধর্ষণ করে, সে কি কিশোর থাকে! সে তো তার কিশোরত্ব অতিক্রম করে চলে গেছে।
বয়স যাই হোক, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
শাস্তি দেন। ১০টা প্রকাশ্য ফাঁসি দেন যে, ধর্ষকের শাস্তি হচ্ছে এই।
আবার চুরির ক্ষেত্রে কিন্তু নিয়ম আছে। ইচ্ছা করলেই আপনি হাত কাটতে পারবেন না। যে কেউ যদি খাবার চুরি করে খেয়ে ফেলে, আপনি তাকে হাত কাটতে পারবেন না।
যে সে ক্ষুধার জন্যে খেয়েছে।
অর্থাৎ যখন চুরি প্রমাণিত হলো যে, না এটা সে অভ্যাসবশত করেছে, ক্ষুধার প্রয়োজনে না।
তো এক মহিলা, তার নামও হচ্ছে ফাতেমা। অভিজাত মহিলা। চুরির দায়ে ধরা পড়ল। বলে যে না, হাত কাটা। এবং সুপারিশ, খুব পাওয়ারফুল সুপারিশ। সবকালেই তো সুপারিশ যারা করে, তারা পাওয়ারফুলই থাকে।
তো নবীজী (স) বললেন যে, এই অপরাধ যদি আমার মেয়ে ফাতেমাও করত আমি তাকে হাত কাটার নির্দেশ দিতাম। কারণ অপরাধ এটা। অধিকারকে তিনি এভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
তো আপনি দেখেন আগেকার দিনে যেটা হতো যে-রকম মুরগি জবহ করলে কোনো কি হয় না? এটা অপরাধ না। এটাতো পরিবারের অংশ।
গরু জবেহ করলে কোনো বিচার যেমন নেই সে-রকম দাসকেও যদি হত্যা করা হতো, তো এটার কোনো বিচার ছিল না। মালিক ক্যান ডু এনিথিং।
নবীজী বললেন যে, না, বৈধ কারণ ছাড়া কাউকে হত্যা করা যাবে না এবং প্রত্যেকটা মানুষ সমান।