আসলে অপুর জন্যে সবার মন ব্যথিত হওয়াটা স্বাভাবিক।
তবে অপুকে যদি মানসিকভাবে আরেকটু শক্তিশালী করা যেত, তার সংগ্রামী চেতনার সাথে যদি আরেকটু ধৈর্যের সংযোগ করা যেত, তাকে যদি আরেকটু আশাবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা যেত সে যদি আশাবাদী মানুষের সংস্পর্শে থাকত, সে যদি সৎসঙ্ঘে একাত্ম থাকত তাহলে হয়তো বা সমাজ আরো সফল আরো উজ্জ্বল আরো বর্ণাঢ্য অপুকে পেয়ে উপকৃত হতো।
অপু তো তবু কিছু সময় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গেছে।
কিন্তু আজকাল তুচ্ছ কারণে অভিমান করে কিশোর-কিশোরীদের যে আত্মহত্যা, এই প্রবণতার জন্যে যদি একটি বিষয়কে দায়ী করা যায় সেটা হচ্ছে, ভুল প্যারেন্টিং।
বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীদের অভিমানী হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু যে হারে তারা আত্মঘাতী হচ্ছে এর আগে কোনোকালে সেটা হয় নি।
ভুল প্যারেন্টিংয়ের কারণে কিশোর-তরুণরা মানসিকভাবেই এখন নাজুক হয়ে বেড়ে উঠছে। অল্প চাপেই তারা ভেঙে পড়ছে। বেড়ে উঠছে। অল্প চাপেই তারা ভেঙে পড়ছে।
আসলে মা-বাবা তো সাপ্লাইয়ার হয়ে গেছে। সন্তান চাহিদা দিচ্ছে রিকুইজিশন দিচ্ছে রিকুইজিশন দিচ্ছে মা-বাবা সেই জিনিস হাজির করছে।
চাওয়া মাত্র জিনিস পেয়ে গেলে তার প্রতি মমত্ব বা দায়িত্ব কখনো জন্মাবে না। ঐ জিনিসটা সংগ্রহ করতে যে মা-বাবার পরিশ্রম করতে হয় সেই বোধই তার মধ্যে তৈরি হচ্ছে না।
ফলে কোনো কারণে তার প্রত্যাশা পূরণ না হলে সে তীব্র অভিমান করছে। কেউ কেউ আত্মঘাতী হচ্ছে। কারণ চাপ কীভাবে সামলাতে হবে তা সে পরিবার থেকে শেখে নি।
আমরা ৩০ বছর ধরেই অভিভাবকদের সতর্ক করে আসছি যে, সন্তানকে ননীর পুতুল বানাবেন না। সন্তানকে পরিবারের অংশ হিসেবে বড় করুন। পরিবারের সব কাজের সাথে তাকে সংযুক্ত রাখুন। আপনার কষ্ট আপনার অভাব আপনার প্রয়াস আপনার সংগ্রাম অকাতরে সন্তানকে বলুন। আপনার সাথে সাথে তাকেও কষ্ট করতে শেখান।
যদি আপনি জীবিত অবস্থায় তাকে কষ্ট করতে না শেখান, তবে সে কষ্ট করবে আপনার মৃত্যুর পরে।
আর এখন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত সে অপেক্ষা করছে না। যে-কোনো না পাওয়ার মুখে তার ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য ও দৃঢ়তা কোনোটাই তার থাকে না। যার ফলে তার মনোবল খুব ঠুনকো হয়।
এই অবস্থা থেকে বেরুনোর জন্যে অভিভাবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে সন্তানের শারীরিক মানসিক সামাজিক আত্মিক ফিটনেস যাতে যথাযথভাবে গড়ে ওঠে সেইদিকে অভিভাবক এবং সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।