মো. আবদুল কুদ্দুস সেলিম শাহ। ব্যক্তিগত জীবনে একজন ব্যবসায়ী এবং কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্য। তার একটি উল্লেখযোগ্য পরিচয়—তিনি একজন নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতা। কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমে ৫০ বার রক্তদানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন যারা, তাদের নিয়ে গঠিত প্লাটিনাম ক্লাবের তিনিও একজন সদস্য।
২ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালে কোয়ান্টাম ল্যাবে প্রথম রক্তদান করেন তিনি। সে-সময় তিনি থাকতেন লক্ষ্মীপুরে। পেশাগত কাজ বা কোনো প্রয়োজনে যখনই ঢাকায় আসা হতো, সোজা চলে আসতেন কোয়ান্টাম ল্যাবে, এবং রক্ত দিতেন। ২০১৩ সাল থেকে সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন তিনি। কোয়ান্টাম স্বেচ্ছা রক্তদান কার্যক্রমে প্রথমবার রক্ত দেয়ার পর থেকে নিয়মিত রক্ত দেয়ার সুযোগ কখনোই হাতছাড়া করেন নি এ মহৎপ্রাণ মানুষটি।
২ আগস্ট ২০২৪, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার, গোটা দেশের বিশেষত রাজধানী ঢাকার পরিস্থিতি সে-সময় কখনো থমথমে কখনো উত্তাল, উত্তরাস্থ নিজের বাসা থেকে সেদিন বেলা ৩টা নাগাদ শান্তিনগরের কোয়ান্টাম ল্যাবে আসেন সেলিম শাহ। বরাবরের মতোই রক্ত দেন অচেনা-অজানা মুমূর্ষু মানুষের প্রয়োজনে।
এর ঠিক ২৪ দিন পর ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ বৃহস্পতিবার বেলা ৩.৩০ মিনিটে তিনি পাড়ি দেন অনন্ত যাত্রায়। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। প্রয়াত সেলিম শাহ-র একটি আন্তরিক ইচ্ছা ছিল রক্তদানে তিনি অর্ধশতক পূর্ণ করবেন। সহধর্মিণী মাজেদা বেগমকে প্রায়শই বলতেনও কথাটা।
সেলিম শাহ-র মৃত্যুর দিনকয়েক পর মাজেদা বেগমের সাথে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কোয়ান্টাম ওয়েবসাইটে সেলিম শাহ-র অবিচুয়ারি প্রকাশে দরকারি তথ্য সংগ্রহের জন্যে। তখন মাজেদা বেগম একাধিকবার বলছিলেন, ‘আমার স্বামীর ইচ্ছা ছিল তিনি ৫০ বার রক্ত দেবেন।’ অতঃপর কোয়ান্টাম ল্যাবের ডাটাবেজে তার প্রোফাইল এবং শুরু থেকে সর্বশেষ রক্তদানের যাবতীয় তথ্য যাচাই করে জানা গেল, ২ আগস্ট তার সর্বশেষ রক্তদানটি ছিল ৫০ তম রক্তদান! যে-কোনো কারণেই হোক, মানবসেবায় দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের কথাটা সহধর্মিণী বা পরিবারের কাউকেই তার জানানো হয় নি কিংবা তিনি জানান নি।
কিন্তু নিজের অন্তিম যাত্রার আগে ঠিকই অর্ধশতবার রক্তদানের মনছবি পূর্ণ করলেন সেলিম শাহ। স্রষ্টা এভাবেই তাঁর দানশীল এই বান্দাকে এরকম একটি অর্জনের সুযোগ করে দিলেন।
উল্লেখ্য, মো. আবদুল কুদ্দুস সেলিম শাহ কোয়ান্টাম মেথড কোর্স ২৭৬ ব্যাচের গ্রাজুয়েট এবং ১৭ ব্যাচে প্রো-মাস্টার। তবে তারও আগে, ২০০০ সাল থেকেই তিনি লক্ষীপুরে কোয়ান্টামের বিভিন্ন আত্ম উন্নয়ন ও সেবামূলক কাজে অংশ নিতেন। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে তিনি কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশ নেন এবং মেডিটেশন চর্চা করে বহুদিনের মাইগ্রেন থেকে মুক্ত হোন। তার দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিচিতমণ্ডলের অনেকে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশ নেন।
পরম করুণাময় মো. আবদুল কুদ্দুস সেলিম শাহ-র সকল ভালো কাজ সৎকর্ম হিসেবে কবুল করুন। আমরা তার অনন্ত প্রশান্তি কামনা করি।