জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ ও বিশ্ব নেতাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে ১০০ কোটি ডোজ টিকা দিতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭।
শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের কর্নওয়ালের শুরু হওয়া জি-৭ সম্মেলনের প্রথম দিনেই নেতারা মতৈক্যে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, জি-৭ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ৫০ কোটি ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ১০ কোটি টিকা ৯২টি নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে পাঠাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দুই দেশই দেবে ফাইজারের টিকা। এছাড়া কানাডা দেবে ১০ কোটি ডোজ টিকা।
জি-৭ভুক্ত বাকি দেশগুলোও তাদের সাধ্যমতো কোভিড-ভ্যাকসিন গরীব দেশগুলোতে পাঠাবে বলে সম্মত হয়েছে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ‘আগামী বছরের শেষভাগের মধ্যে আমাদের ৮০০ কোটি লোককে টিকা দিতে হবে।’
ধনী দেশগুলো যদি কোভিড-টিকার বড় অংশ এখনও নিজেদের জিম্মায় রেখে দেয়, তবে টিকার লাখো ডোজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে ক’দিন আগেই সতর্ক করেছিল জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ।
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ১০০ জনেরও বেশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা জি-৭ জোটকে অনুরোধ করেছেন, তারা যেন বৈদেশিক সহায়তা তহবিলের বরাদ্দ দেওয়া ৬৬ বিলিয়ন ডলারের দুই তৃতীয়াংশ দরিদ্র দেশগুলোর টিকা ক্রয়ে ব্যয় করেন।
দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা দানের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘তার থেকেও বেশি টিকার দরকার ছিল আমাদের। অর্থনৈতিক যুদ্ধকে প্রাধান্য দিয়ে এসময়ে আমাদের যৌক্তিক উপায়ে এগোতে হবে।’
অবশ্য দাতব্য সংস্থা অক্সফাম জি-৭ এর সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। অক্সফামের স্বাস্থ্য নীতিমালার পরিচালক আন্না মেরিয়ট বলেন, এ মুহূর্তে ১১০০ কোটি ভ্যাকসিনের দরকার। সেখানে জি-৭ দিচ্ছে মাত্র ১০০ কোটি। বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের সঙ্কট তো দাতব্য সংস্থাগুলো সমাধান করতে পারবে না। ভ্যাকসিন প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে কীভাবে ভাগ করে দেওয়া যায়, কীভাবে ভ্যাকসিনের একচেটিয়া ব্যবসা ভেঙ্গে দেওয়া যায় তা নিয়ে এ সম্মেলনে আলোচনা হওয়া দরকার ছিল।
করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তুলতে নতুন উপায় খুঁজতে এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে শিল্পোন্নত সাতটি দেশের জোট জি-৭; যাতে অংশ নিচ্ছে কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
সম্মেললে বরিস জনসন বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আর যেন কোনো ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। আমাদের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে।’
শনিবার জি-৭ সম্মেলনের শেষ দিনে প্রকাশিত হবে ‘কার্বিস বে ঘোষণাপত্র’।
এ ঘোষণাপত্রে প্রাধান্য পাবে- ভবিষ্যতে যেকোনো রোগের জন্য ভ্যাকসিন, চিকিৎসা এবং রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতির বিকাশের জন্য এবং লাইসেন্স দেওয়ার সময়সীমাকে ১০০দিনের নিচে নামিয়ে আনা, বৈশ্বিক নজরদারি নেটওয়ার্ক এবং জিনোমিক সিকোয়েন্সিং কার্যক্রমকে শক্তিশালী করা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংস্কার ও শক্তিশালীকরণের জন্য সমর্থন দেওয়া।