আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য, ফরজ-ওয়াজিব নয়, এমন রোজা পালনকেই নফল রোজা বলে।
নফল রোজার অনেক বড় ফজিলত ও ছাওয়াব রয়েছে। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে কুদসীতে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,,‘আদম সন্তানের প্রতিটি আমলের ছাওয়াবই দ্বিগুণ করে দেয়া হয়। পুণ্যকর্মের ছাওয়াব দশগুণ থেকে সাতশ’গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘তবে রোজা ব্যতীত; কারণ রোজা আমার আর আমিই এর প্রতিদান দিই।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর এর পেছনে শাওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা রাখল সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’(বর্ণনায় মুসলিম )শাওয়ালের ছয় রোজা একসাথেও রাখা যায় আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবেও রাখা যায়।
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘এই দশদিনের তুলনায় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় আমলের অন্যকোনো দিবস নেই। অর্থাৎ যিলহজ্বের দশদিন। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করে বললেন, ‘এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদও না? হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন,‘এমনকি আল্লাহর পথে জিহাদও না, কিন্তু যদি কোনো ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে বের হয়ে যায় আর কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসে, তবে তার কথা ভিন্ন।’
মহররম মাসের দশ তারিখকেই আশুরা বলা হয়
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘আশুরা দিবসের রোজা এর পূর্বের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে বলে আল্লাহর কাছে আশা করি।’(বর্ণনায় মুসলিম)
আইয়ামুল বিয
প্রতি চান্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনের তারিখকে আইয়ামুল বিয বলে। এ তিনদিনের রাতগুলো চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত থাকে বলে এ দিনগুলোকে আইয়ামুল বিয বা শুভ্রদিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমল উপস্থাপন করা হয়, অতএব আমি পছন্দ করি যে, আমার আমল এ অবস্থায় উপস্থাপন করা হোক যে আমি রোজাদার।’(বর্ণনায় মুসলিম)
সর্বোত্তম নফল রোজা হলো দাউদ আলাইহিস সালামের রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন ও অপর দিন ভঙ্গ করতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় রোজা হলো দাউদ – এর রোজা। তিনি একদিন রোজা রাখতেন ও একদিন ভঙ্গ করতেন।’
আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’(বর্ণনায় তিরমিযী)
উসামা ইবনে যায়েদ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম,‘হে আল্লাহর রাসূল, আমি আপনাকে শাবানের মতো অন্যকোনো মাসে রোজা রাখতে দেখি না? তিনি বললেন, রজব ও রমজানের মাঝের এ মাসটি সম্পর্কে মানুষ গাফেল থাকে। আর এ মাসে রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমল ওঠানো হয়। রোজা পালন অবস্থায় আমার আমল ওঠানো হোক এটা আমার পছন্দ।’(বর্ণনায় নাসায়ী)
চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে রোজা
চর্মরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোজা উপকারী। এর কারণ রোজা রক্তের মাঝে পানির অংশ কমিয়ে দেয়, অতঃপর ত্বকের মধ্যেও এর পরিমাণ কমে যায় এবং ফলে সংক্রামক জার্ম ও রোগব্যাধি থেকে ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
রমজানে সারা মাস রোজা রাখার পর কেউ যদি শাওয়াল মাসে ছয় দিন রোজা রাখে, তাহলে সে যেন সারাবছর রোজা রাখল।
—আবু আইয়ুব (রা); মুসলিম
রমজান মাস ছাড়া প্রতি মাসে পর পর তিন দিন রোজা রাখার জন্যে চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে (আইয়ামে বেজের) রোজা রাখা উত্তম।
—আবু যর গিফারী (রা); তিরমিজী
রমজান মাসের পর রোজা রাখার উত্তম মাস হচ্ছে মহররম। তোমরা শুধু শুক্রবার রোজা রেখো না। রোজা রাখলে পরে বা আগে একদিন রোজা যুক্ত করে নেবে। (অর্থাৎ পর পর দুদিন রোজা রাখবে)
—আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম
নবীজী (স) আশুরার দিন নিজে রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলতেন।
—আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); বোখারী, মুসলিম
নবীজী (স) রোজার রাতে কোনো স্ত্রীর সাথে মিলিত হলে ফজরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নিতেন এবং স্বাভাবিকভাবে রোজা অব্যাহত রাখতেন।
—উম্মে সালামা (রা), আয়েশা (রা); মুসলিম