1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১০ পূর্বাহ্ন

নিজের কাজটি ভালোভাবে করে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে

  • সময় মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ৮০৯ বার দেখা হয়েছে

নিজের কাজটি ভালোভাবে করে গেলেই দেশ এগিয়ে যাবে’—স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী মুক্ত আলোচনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন

প্রকাশিত : ৭ ডিসেম্বর ২০২১

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আমাদের সেক্টর কমান্ডার একদিন বলছিলেন, এমন একটি অপারেশন করো যেন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সেই মতো একটি অপারেশনের পরিকল্পনা করলাম। ১০ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দলকে সাথে নিয়ে এগোচ্ছি এক গ্রামের পাশ দিয়ে। বিকেলবেলা। এমন সময় একজন মহিলা এলেন তার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে। তিনি বিধবা। মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। একমাত্র অবলম্বন তার এই ছেলে। ১৫/১৬ বছরের এই ছেলেটি ছাড়া মহিলার আর কেউ নেই, কিছু নেই। তারপরও এই ছেলেকেই তিনি আমাদের হাতে তুলে দিতে চান যেন সে দেশের কাজে লাগে।

বিস্তারিত শোনার পর আমি ছেলেটিকে নিতে না চাইলে সেই মা যেভাবে আকুতি ব্যক্ত করলেন তাতে আমি নির্বাক হয়ে গেলাম। এভাবে যে সর্বস্ব ত্যাগ করা যায় তা আগে ভাবি নি। সেদিন বুঝলাম, আমার মাঠের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, কিন্তু মনের যুদ্ধের প্রশিক্ষণ এখনো হয় নি। আমার যাবতীয় কমান্ডো ট্রেনিং সবই সেদিন শূন্য মনে হচ্ছিল। সেদিন থেকে আমি মনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েছি।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন আয়োজিত মুক্ত আলোচনার ১০২ তম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ৪ ডিসেম্বর ২০২১। অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সমাজহিতৈষী এবং বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাবেক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক। স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মুক্ত আলোচনার এ পর্বে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন চিকিৎসাযোদ্ধা জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন।

জনাব কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ৮০ শতাংশই সাধারণ মানুষ, কৃষকের সন্তান। এত হতদরিদ্র কিছু মানুষ সংগ্রাম করে এত কম সময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে—এমন উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে আর নেই। আমাদের দরিদ্র কৃষকের সন্তানেরা ক্ষুধা নিয়ে যুদ্ধ করেছে। এদের মতো সাহসী যোদ্ধা আর কোথায় আছে? দেশের সাধারণ মানুষ তখন অকাতরে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আমাদের হয়তো ২০ জন লোক দরকার, কিন্তু ১০০ জন দাঁড়িয়ে গেছে যুদ্ধে যাওয়ার জন্যে। দেশের জন্যে প্রাণ দেয়ার কী আকুতি তাদের! এই আমার জাতি। এই জাতিকে নিয়ে আমার গর্ব হয়। আমি আপনাদের প্রত্যেককে নিয়ে গর্ব করি। কারণ প্রত্যেকের মধ্যেই আছেন একেকজন মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি আরো বলেন, আমরা জাতি হিসেবে খুব ভালো। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ ভালো। না হলে দেশ টিকে থাকতে পারত না। এদেশের বেশিরভাগ মানুষ অতি সাধারণ, যাদের দুর্নীতি করার কিছু নেই। তারা খুব কম খেয়ে কম ভোগ করে বেঁচে থাকে। এরাই দেশের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

তিনি বলেন, যুদ্ধ হত্যা করে। নারীকে হত্যা করে, পুরুষকে হত্যা করে, ভালবাসা হত্যা করে। আর হত্যা করে ইতিহাসকে, যদি আমরা ইতিহাস চর্চা না করি। এটি ভয়ংকর সত্য কথা। এজন্যে নিজেরটা বেশি নয়, বরং বলতে হবে অন্যের কথা ও বীরত্বগাথা—যাদের কথা কেউ বলে না। আমি বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহ করি, কারণ আমার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেন ইতিহাসের একটি অধ্যায় হারিয়ে না যায়।

যারা দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলেন তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি বিশ্বের বহু দেশে গিয়েছি। প্রত্যেক দেশের বেশিরভাগ লোকজনই নিজের দেশকে খারাপ বলে। এটি একটি সাধারণ প্রবণতা। তাই যারা এমনটা বলে তাদেরকে বলব—নিজের দেশটাকে ভালবাসুন। আমাদের তো দুটো দেশ নেই। একটিই দেশ। আমি যদি নিজের দেশকে খারাপ বলি, এরপর কি নিজের পরিবারকেও খারাপ বলব? মা-বাবাকে খারাপ বলব? আমি ভালো না, আমি পারি না, আমার জাতি পারবে না—এমন চিন্তা কারো কারো মধ্যে আছে। কিন্তু আমরা কখনো এমন আত্মক্ষয়ী সমালোচনা করব না। নিজের কাজটি ভালোভাবে করে গেলেই দেশ ভালো হয়ে যাবে।

মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরাই নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা। তোমরাই আমাদের অসম্পূর্ণ কাজগুলো সম্পূর্ণ করবে। সবাই মিলে একটি সুন্দর ও মানবিক দেশ গড়ে তুলবে, যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশের শহিদরা।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন বলেন, জনাব কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের কত অসাধারণ অভিজ্ঞতা আর কী চমৎকার তথ্যবহুল প্রাণবন্ত উপস্থাপনা! কত ত্যাগের বিনিময়ে কত মানুষের কত আত্মত্যাগে আমরা অর্জন করেছি আমাদের এ স্বাধীনতা! এ দেশকে পাওয়ার জন্যে আমাদের প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হলো আমরা প্রত্যেকে ভালো মানুষ হবো।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জাতিধর্মবয়স নির্বিশেষে এদেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ যার যার অবস্থান থেকে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সম্মিলিত ত্যাগের ফলে আমরা আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি। এটা আমাদের জন্যে গৌরবের। অন্যান্য দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আরো এগিয়ে যাব।

মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস। একদিন খবর পেলাম আমাদের ওয়ার্ডে একজন সন্তানসম্ভবা ভর্তি হলেন। তার পরিবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক অবরূদ্ধ। তার সাথে কারো থাকার অনুমতি ছিল না। আমার তত্ত্বাবধানে একসময় তার পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। শিশুটির মা ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশ নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আমি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি মনে করি, পৃথিবীর কোনো দেশেই শতভাগ ভালো মানুষ নেই। ভালো খারাপের মধ্যে ভালোটাকেই বেছে নিতে হবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ভালো। তরুণ প্রজন্মের ওপর আমার দৃঢ় বিশ্বাস—তারাই পারবে দেশকে এগিয়ে নিতে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন বলেন, কোয়ান্টাম অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি সংগঠন। এর আগেও আমি এখানে এসেছিলাম কোয়ান্টাম রক্তদান কার্যক্রমের একজন অতিথি হয়ে। মানুষকে শারীরিক-মানসিকভাবে ভালো রাখার জন্যে কোয়ান্টাম কাজ করে যাচ্ছে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম দেখে আমি মুগ্ধ।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক,  বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সমাজহিতৈষী

কাজী সাজ্জাদ আলী জহিরের জন্ম ১৯৫১ সালের ১১ এপ্রিল, কুমিল্লার দাউদকান্দির চৌসই গ্রামে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আবদুল মুত্তালিব এবং মা কাজী নূরুন্নাহার বেগম। ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ১৮ বছর বয়সে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।

১৯৭১ সালে একজন সুদক্ষ সেনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে। ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা তার মনকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে।

উল্লেখ্য, তার বাবা ও ভাই ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আগস্ট মাসের শেষ নাগাদ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর অঞ্চলের দুর্গম সীমানা পেরিয়ে দেশে পালিয়ে আসেন। সে-সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনী তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ জারি করে।

পরের মাসেই কাজী সাজ্জাদ আলী জহির ৪ নম্বরে সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। বড়লেখা, শমসেরনগর, মংলা বাজার, জুরি, কুলাউরা, ফেঞ্চুগঞ্জে যুদ্ধ করেন। এ-ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটের পার্বত্য অঞ্চলে গেরিলা বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন তিনি। সেখানে ভারত সরকারের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা দ্বিতীয় গোলন্দাজ দলের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন সাহস ও সাফল্যের সাথে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাসের অনুভূতিটা শুধু মুক্তিযোদ্ধারা ধারণ করেন না, পুরো জাতি ও সমাজ ধারণ করে। … যদি আমরা হৃদয়ে বিজয় ধারণ না করতাম, তাহলে তো আমরা যুদ্ধ করতে পারতাম না। … আমাদের মনোবল ছিল প্রচণ্ড।

কারণ গ্রামের পাশ দিয়ে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি, দেখেছি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ আমাদের পক্ষে। আমাদের অস্ত্র তারা কাঁধে করে বয়ে নিয়ে আসতেন। মায়েরা তাদের শিশুসন্তানদের সাথে করে আসতেন আমাদের জন্যে খাবার নিয়ে। এই যে একটা অনুপ্রেরণা—এর কোনো তুলনা হয় না!’

স্বাধীনতার পর সাজ্জাদ আলী জহির লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এর আগে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেনাপদে দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি সেনাসদর, আর্টিলারি প্রশিক্ষণ স্কুল এবং আর্টিলারি রেজিমেন্টের প্রধান প্রশিক্ষক ছিলেন। ২০০৭ সালে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ ভারত থেকে এদেশে স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার গঠিত প্রতিনিধি দলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বড়লেখা ও শমসেরনগর যুদ্ধে গোলাবর্ষণের পারদর্শিতার জন্যেই বাংলাদেশ সরকার এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বীরপ্রতীক উপাধি এবং ২০১৩ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে ভারত সরকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক-কে সে-দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রীতে ভূষিত করেন।

লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের একজন নিবিষ্ট গবেষক হিসেবে কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক রেখেছেন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ও শিশুতোষ কমিক মিলিয়ে এ পর্যন্ত তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা ৬০টিরও বেশি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধ ও ৭১-এর গণহত্যা নিয়ে বহু কলাম লিখেছেন তিনি এবং রেডিও-টেলিভিশনে অংশ নিয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি অনুষ্ঠানে।

পাশাপাশি এ বিষয়গুলো নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও তিনি নিয়মিত আলোচনা করে থাকেন। এভাবে নানা উপায়ে তিনি এদেশের নতুন প্রজন্মের সামনে নিয়মিত তুলে ধরে চলেছেন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অভূতপূর্ব গৌরবগাথা।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী

শাহলা খাতুনের জন্ম সিলেটের এক প্রগতিশীল পরিবারে। বাবা আইনজ্ঞ ও রাজনীতিবিদ আবু আহমদ আব্দুল হাফিজ। মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরী। মা-বাবার আদর-যত্ন ও বড় ভাইবোনদের সাহচর্যে এক মননশীল পরিবেশে বেড়ে উঠেন তিনি।

শাহলা খাতুন যখন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তখনই তিনি জীবনের লক্ষ্য হিসেবে চিকিৎসাসেবাকে বেছে নেন। ১৯৫৬ সালে সিলেট মুরারী চাঁদ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। উল্লেখ্য, সিলেটের প্রথম মুসলমান নারী চিকিৎসক তিনি।

ষাটের দশকে এদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল আজকের তুলনায় অনেক বেশি। সে-সময় নারীদের চিকিৎসাসেবা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাবার অনুপ্রেরণায় তিনি গাইনোকলোজিস্ট হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য থেকে কৃতিত্বের সাথে এমআরসিওজি ও ১৯৮৩ সালে এফআরসিওজি ডিগ্রি লাভ করেন।

জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন তার বর্ণাঢ্য চিকিৎসক জীবনে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিরলস চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এদেশে নারীর স্বাস্থ্য-সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য-সচেতনতার ধারণা তৈরিতে তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। তার কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’ সম্মাননায় ভূষিত করে। উল্লেখ্য, ‘জাতীয় অধ্যাপক’ সম্মাননায় ভূষিতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র নারী চিকিৎসক।

বর্তমানে এই কিংবদন্তীসম চিকিৎসক বর্তমানে ঢাকা শিশু হাসপাতালের ম্যানেজমেন্ট বোর্ড, ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজ এবং ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের চেয়ারম্যান-সহ আরো নানা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। অশীতিপর বয়সেও যাপন করছেন কর্মব্যস্ত জীবন।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসক হিসেবে অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুনের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। ৭১-এর সেই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পাকিস্তান দূতাবাসে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্বরত তার জেষ্ঠ্য ভাই আবুল মাল আবদুল মুহিত পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন করছিলেন, সেই প্রেক্ষিতে ডা. শাহলা খাতুনের নিজের জীবনও ছিল যথেষ্ট ঝুঁকির মধ্যে।

কারণ ইতোমধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিলেটে তাদের পৈতৃক বাড়িটি ভাঙচুর করে। তা সত্ত্বেও পেশাগত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন থেকে তিনি বিরত থাকেন নি। পারিবারিক পরিচয় গোপন রেখে অসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন। অসীম সাহসিকতায় কাজ করে যাচ্ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে।

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘একাত্তরে ঢাকা মেডিকেল এবং একটি প্রসবের ইতিবৃত্ত’ শীর্ষক একটি আলোচিত নিবন্ধে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধকালে ডা. শাহলা খাতুনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com