‘‘পল্লীকবি’ হিসেবে সাহিত্যক্ষেত্রে সবমহলে বিশেষভাবে তিনি পরিচিত । পুরো নাম জসীম উদদীন মোল্লা; তবে সাহিত্যক্ষেত্রে জসীম উদদীন নামেই লেখালেখি ; ছদ্মনাম-তুজম্বর আলী। পিতা- আনসার উদদীন মোল্লা (মৃত্যৃ-১৯৪৭), পিতামহ- ছমির উদদীন মোল্লা, মাতা-আমেনা খাতুন (রাঙা ছুটু, মৃত্যু-১৯৫৪)। স্ত্রী- মমতাজ বেগম (মণিমালা),নলগড়া, মাদারীপুরের মেয়ে। তাঁদের চার ছেলে, দুই মেয়ে । কামাল আনোয়ার, ডঃ জামাল আনোয়ার, হাসনা মওদুদ, ফিরোজ আনোয়ার, খুরশীদ আনোয়ার ও আসমা তৌফিক । কবির চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজো; সব ছোট ভাই নুরুদদীন ছিলেন রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজির অধ্যাপক । তাঁর বোন ছিলেন তিনজন । কবির জন্মস্থান- তাম্বুলখানা (মাতুলালয়), সদর থানা (বর্তমানে উপজেলা), ফরিদপুর ; পৈতৃক নিবাস- গোবিন্দপুর (নদী ভাঙনের ফলে পরবর্তীতে নাম অম্বিকাপুর),সদর থানা, ফরিদপুর ।
পড়াশোনা- পার্শ্ববর্তী শোভারামপুরের অম্বিকা পন্ডিতের পাঠশালায় প্রথম পাঠ ; অত:পর ফরিদপুর হিতৈষী এম.ই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপন । উল্লেখ্য, এখানে অন্যতম শিক্ষক ছিলেন তাঁর পিতা । ম্যাট্রিকুলেশন ফরিদপুর জেলা স্কুল (১৯২১), রাজেন্দ্র কলেজ হতে আই,এ (১৯২৪) ও বি.এ পাস(১৯২৯), বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এ ডিগ্রী লাভ (দ্বিতীয় শ্রেণিতে অষ্টম)। এরপর সেখানে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে চাকরী নেন । পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগ দেন, পর্যায়ক্রমে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সরকারের প্রচার বিভাগের অফিসার, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রচার বিভাগের উপ-পরিচালক পদে থেকে অবসর গ্রহণ করেন। পল্লীগীতি সম্রাট আববাস উদদীন ছিলেন তাঁর অন্যতম সহকর্মি । বিখ্যাত কবিতা ‘কবর’ দশম শ্রেণিতে পড়ার কালে রচিত।
১৯২৬ সালে ‘কল্লোল’ পত্রিকার তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশ । বি.এ ক্লাশের ছাত্র থাকা কালে এটি পাঠ্যপুস্তকে সংকলিত এবং ম্যাট্রিক ক্লাশে পাঠ্য; বাংলা সাহিত্যে যা নজিরবিহীন । গ্রন্থাকারে প্রকাশিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালী’তে কবিতাটি অন্তর্ভুক্ত । লোকসাহিত্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ সহ অন্যান্য কাজে যে সব দেশ ভ্রমণ করেন-যুক্তরাষ্ট্র,স্কটল্যান্ড,সাবেক যুগোশ্লাভিয়া,ইংল্যান্ড,ফ্রান্স,তুরস্ক, বার্মা (বর্তমান মায়ানমার), রাশিয়া, জার্মানী প্রভৃতি । সাহিত্য কীর্তির স্বীকৃতিস্বরুপ প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’(১৯৫৮),সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়,ভারত (১৯৭৬), একুশে পদক(১৯৯৬),স্বাধীনতা দিবস পদক(মরণোত্তর-১৯৭৮),বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৪) ইত্যাদি লাভ করেন।বাংলা একাডেমী আয়োজিত আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের মূল সভাপতি (১৯৭৪)। তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনুদিত । পিতার নামে অম্বিকাপুরে ‘আনসার উদদীন হাইস্কুল’ প্রতিষ্ঠা । নিজ গ্রামে শেষবারের মত আগমন নভেম্বর’১৯৭৫ মৃত্যু- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল । সমাধি- অম্বিকাপুর,দাদীর কবরের পার্শ্বে । প্রকৃতপক্ষে জসীম উদদীনের মত অমিত প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বকে নিয়ে এত স্বল্প পরিসরে লেখা বাতুলকা মাত্র । তবু তার স্মৃতিচারণ করলাম।
(তথ্যসূত্র- বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, wikipedia, জসীম উদদীন জন্মশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ)
গবেষণা ও সংকলণে- শেখ শাহাদাৎ হোসেন