জরিপে উঠে এসেছে ফেসবুক যারা ব্যবহার করে তাদের ২৫ শতাংশের বয়সই ১০ বছরের কম। আর ফেসবুকসহ সোশাল মিডিয়ার যেসব নেতিবাচক মনোজাগতিক প্রভাব রয়েছে, এ শিশুদের ওপর তা পড়ে আরো ভয়ংকরভাবে!
ব্রিটেনের একজন চিকিৎসক রঙ্গন চ্যাটার্জী বলছেন, কিশোরকিশোরীদের মানসিক সমস্যা এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তার অনেক প্রমাণ তিনি পেয়েছেন।
সম্প্রতি একদল মার্কিন শিশু কল্যাণ বিশেষজ্ঞ ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের কাছে একটি চিঠি লেখেন। এতে তারা ‘মেসেঞ্জার কিডস’ নামে বাচ্চাদের মেসেজিং অ্যাপটি বন্ধ করে দেবার আহ্বান জানান। তারা বলেন, ১৩ বছরের কম বয়েসীদেরকে এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করাটা দায়িত্বজ্ঞানহীন।
তারা বলেন, তারা তথ্যপ্রমাণ পেয়েছেন যে সামাজিক মাধ্যমের কারণে কিশোরকিশোরীদের মানসিকতায় অস্বাভাবিক সব পরিবর্তন হচ্ছে, ১০ বছরের মেয়েও তার দৈহিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগছে।
ডাক্তার রঙ্গন চ্যাটার্জী বলছেন, তিনি একবার ১৬ বছরের একটি কিশোরকে রোগী হিসেবে পেয়েছিলেন – যে তার নিজের হাত-পা কাটার পর তাকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠানো হয়েছিল।
“আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তাকে বিষণ্ণতা-রোধী ওষুধ দেবো। কিন্তু তার সাথে কথা বলার পর মনে হলো, সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করায় তার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”
কানাডার এসোসিয়েশন অফ মেন্টাল হেলথ দেখেছে যে, সাত থেকে ১২ তম গ্রেডের যেসব শিক্ষার্থী দিনে দু’ঘণ্টার বেশি সোশাল মিডিয়ায় কাটায়, তাদের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা, হতাশা এবং আত্মহত্যা প্রবণতা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি! কানাডার কলেজিয়েট মেন্টাল হেলথ দেখেছে, কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি যে তিনটি সমস্যায় ভুগছে তাহলো উদ্বেগ, হতাশা আর উৎকন্ঠা।
২০১৭ সালে রয়াল সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ একটি জরিপ চালায় ১১ থেকে ১৫ বছর বয়স্ক দেড় হাজার কিশোর-কিশোরীর ওপর। এতে দেখা যায়, স্ন্যাপচ্যাট এবং ইনস্টাগ্রাম তাদের মনে সবচেয়ে বেশি হীনম্মন্যতা এবং দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন বলেছে ইনস্টাগ্রামের কারণে তাদের নিজেদের দেহ নিয়ে মন খারাপ হয়েছে।
১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সের তরুণতরুণীদের অর্ধেকই বলেছে ফেসবুকের কারণে তাদের মানসিক দুশ্চিন্তা ও অশান্তি বেড়ে গেছে। দু-তৃতীয়াংশ উত্তরদাতা বলেছে, ফেসবুকের কারণে সাইবার বুলিং বা অনলাইনে অপমান-হয়রানি করার প্রবণতা আরো গুরুতর আকার নিয়েছে।
সাইকিয়াট্রিস্ট লুই থিওডোসিও বলছেন, “দু-তিন বছর আগেও তার সাথে এ্যাপয়েন্টমেন্টের মাঝখানে কোন বাচ্চা তাদের ফোন ব্যবহার করছে, বা টেক্সট করছে – এমন ঘটনা ছিল খুবই অস্বাভাবিক। কিন্তু এখন এটা খুব সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে।”
“বাচ্চারা তাদের ফোন নিয়ে খুব বেশি সময় কাটাচ্ছে। সোশাল মিডিয়ার কারণে টিনএজাররা বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা বা অন্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে – এমন কেসের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ” তিনি বলেন, এসব বাচ্চারা এক কল্পনার জগতে বাস করছে, এতে তাদের স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। এমন অভিভাবকের কথাও আমি শুনেছি যারা ওয়াইফাই রুটার নিজেদের সাথে নিয়ে ঘুমান -যাতে বাচ্চারা মাঝরাতে উঠে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পারে।