গতানুগতিক তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে ক্রমেই বাড়ছে টিকে থাকার লড়াই। এমন প্রতিযোগিতার মধ্যেও বাজার দখলে খানিকটা ভালো অবস্থানে স্পোর্টসওয়্যার, জ্যাকেট-ব্লেজার, আন্ডারওয়্যার প্রস্তুকারকরা। তবে ব্যয় সংকোচনের চাপ মোকাবিলায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তারা। এক্ষেত্রে বাজার বিশ্লেষণ ও বিনিয়োগ কাঠামো ঠিক করতে সরকার-বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বিত গবেষণা সেল গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
যখন গতানুগতিক পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত দেশের প্রায় সব পোশাক কারখানা; তখন ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের স্নোটেক্স গ্রুপের একটি কারখানায় শ্রমিকরা তৈরি করছেন উচ্চমূল্যের জ্যাকেট-স্পোর্টওয়্যার।
শ্রমিকরা জানান, বৈচিত্র্যময় পণ্য তৈরির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাদের কর্মদক্ষতা। পাশাপাশি নিয়মিত দেয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণও। আর প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব পোশাক তৈরিতে দিন দিন বাড়ছে উন্নত প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ব্যবহার। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে উৎপাদনশীলতা।
তবে উচ্চমূল্যের তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের জোগান নগণ্য। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তৈরি পোশাক শিল্পের ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার রফতানি আয়ের মধ্যে ৩১৭৫.৮৩ কোটি ডলারই জোগান দিয়েছে মাত্র তিন ধরনের পণ্য, ট্রাউজার, টি-শার্ট ও নিটেড শার্ট আর সোয়েটার।
এরমধ্যে উচ্চমূল্যের শার্ট, ব্লাউজ, আন্ডারওয়্যার, জ্যাকেট-ব্লেজার, স্পোর্টসওয়্যার- এই চার ধরনের পোশাক থেকে এসেছে ১০৭১.৭২ কোটি ডলার। বছর ব্যবধানে অবশ্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে জ্যাকেট-ব্লেজারের রফতানি আয়।
এমন বাস্তবতার মধ্যে উন্নত ও বৈচিত্র্যময় পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, উৎপাদন কঠিন হলেও এসব পণ্যের বাজার ধরা তুলনামূলক সহজ। স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম খালেদ বলেন, আগে যখন শুধু শার্ট-প্যান্ট রফতানি করা হতো তখন বিদেশি ক্রেতারা এক বছরের বেশি থাকতেন না। তবে এখন উন্নত ও বৈচিত্র্যময় পোশাক রফতানি করায় ক্রেতারা দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্ক রাখছে।
এই উদ্যোক্তার বাজার বিশ্লেষণ, বছরে ৫ থেকে ৭ শতাংশ উৎপাদনশীলতা বাড়াতে না পারলে টিকবে না কোন উদ্যোগই। খালেদ আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ ও শেখার মাধ্যমে বায়ারদের ধরে রাখতে হবে।
এ পরিস্থিততে উচ্চমূল্যের পোশাকের বাজার সম্প্রসারণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা সেল গঠনের তাগিদ অর্থনীতিবিদদের। অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা খুব একটা বাজার গবেষণা করে না। রফতানি বাড়াতে পণ্যের ধরনভেদে বাজার গবেষণা বাড়াতে হবে। এর জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গবেষণা সেল গঠন করা প্রয়োজন।
রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্যময়তা আনতে বিশেষ ফান্ড গঠনেরও পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।