আজ পহেলা বৈশাখ। ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। শুভ নববর্ষ। নতুন বছর আমাদের সবার জন্যে বয়ে আনুক অফুরন্ত কল্যাণ ও সমৃদ্ধি।
বাঙালি জীবনে সার্বজনীন একটি উৎসব পহেলা বৈশাখ। নানা ধর্ম শ্রেণী পেশার মানুষ একসঙ্গে নববর্ষকে বরণে মেতে ওঠেন। পহেলা বৈশাখ আমাদের হাজারো বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারার প্রতিনিধিত্ব করে চলেছে। আমরা জানি যে, আমাদের এই বাংলায় সবসময় সকল ধর্ম বর্ণ শ্রেণীর মানুষ সহাবস্থান করেছে। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে এ অঞ্চলে কোনো ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা দাঙ্গার ইতিহাস নেই।
বিশ্বখ্যাত ইতিহাসবিদ তপন রায় চৌধুরী ২২ নভেম্বর ২০০৯ সালে ঢাকায় ‘মুসলিমস অ্যান্ড হিন্দুস ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক আলোচনায় দেখিয়েছেন ইংরেজরা কীভাবে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে এবং দাঙ্গা বাঁধিয়েছে। এর আগে কখনো হিন্দু-মুসলমান ধর্মীয় কারণে সংঘাতে লিপ্ত হয় নি।
বৃটিশরা হিন্দু-মুসলমানের পরিকল্পিত বিভেদ তৈরি করলেও ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো কোনো ইংরেজ প্রকৃত সত্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছেন। তেমনি একজন ১৮৬০-এর দশকে ঢাকার ইংরেজ সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজ। পুরনো ঢাকার ওয়াইজ ঘাট তার নামে রাখা হয়। জেমস ওয়াইজের চোখে বাংলার মুসলমান কৃষকেরা ছিলেন ‘আশ্চর্যজনকভাবে সহনশীল’। জেমস ওয়াইজের নিজের বর্ণনায় বাংলার হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক ছিল এমন, আমি হুবহু পড়ছি-‘‘এটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না যে, ব্যক্তি হিসেবে একজন মুসলমান তার স্বদেশীয় হিন্দুর মতো একইরকম। শিক্ষিত মুসলমানরা বেশ উদার, কোনো ধর্মের বিরুদ্ধেই তাদের বিদ্বেষ নাই। যে-কোনো ধার্মিক লোকের ব্যাপারেই তারা সহানুভূতিশীল। তারা নিজ ধর্ম পালন করেন, রোজা রাখেন এবং অকাতরে দান খয়রাত করেন।
গরিবদের প্রতি তারা দয়ালু। অভাবী লোকদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে, খ্যাতি অর্জনের জন্যে নয়। ঔষধ পথ্যি দেন। দরিদ্র ছাত্রদের আশ্রয় দেন, তাদের শিক্ষাদানের জন্যে মুনশি নিয়োগ করেন। নিঃসঙ্কোচে মেলামেশা করেন অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে। … শৈশবে একসঙ্গে খেলাধুলা করেই হিন্দু ও মুসলমান শিশুরা বড় হয়। বড় হলেও বন্ধুত্ব অটুট থাকে। সুখে দুঃখে হিন্দু-মুসলমান পাড়া প্রতিবেশী মিলেমিশে থাকে। পূর্ববঙ্গের কৃষকের শখ হলো নকশা করা জামা ও টুপি। ভদ্রতা হিসেবে ছাতা নিয়ে চলাফেরা করা তাদের পছন্দ। পূর্ববঙ্গের কৃষক সুখী ও আত্মসন্তুষ্ট।’’
এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সবার প্রতি উদার মনোভাব আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্যকে লালন করেই কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন তার কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চর্চা গভীরভাবে বিদ্যমান কোয়ান্টাম তাদের অগ্রগণ্য। কোয়ান্টাম পরিচালিত বান্দরবান লামায় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজে ২২ জাতিগোষ্ঠীর ২,৮০০ শিক্ষার্থী একসাথে পড়ালেখা করে চলেছে। তাদের নিজস্ব ধর্ম ও ভাষা চর্চার পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠছে পরম মমতায়, সম্মানিত দাতাদের আন্তরিক সহযোগিতায়।
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অভাবী মানুষকে সহযোগিতা করা যে কত গুরুত্বপূর্ণ নবীজীর (স) একটি হাদীস থেকে আমরা খুব স্পষ্ট বুঝতে পারি। ইমাম ইবনে আবু শায়েবার সংকলিত হাদীসগ্রন্থ মুসানাফফ ইবনে আবু শায়বা নামে পরিচিত। এই কিতাবের ১০৪৯৪ নম্বর হাদীসটি হলো নবীজী (স) বলেন, Donate in charity to people for all faiths. অর্থাৎ সকল ধর্মের, সকল বিশ্বাসের অভাবী মানুষকে তুমি দান করো। ইমাম আবু বকর ইবনে আবু শায়েবার স্বনামধন্য ছাত্রদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম বোখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম আবু দাউদ। এ থেকেই ইমাম ইবনে আবু শায়েবা কত বিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ মোহাদ্দেস ছিলেন তা আমরা আঁচ করতে পারি।
আমরা যেখানে বলছিলাম-পহেলা বৈশাখের জনপ্রিয়তা পাওয়ার সাথে সাথে সুবিধাভোগী ও সুযোগসন্ধানী একটি মহল এর মধ্যে এমন অনেক কিছু ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে যা পহেলা বৈশাখের সার্বজনীন চরিত্রকে দুর্বল করে দেয়। এরকমই একটি উদ্যোগ হলো পহেলা বৈশাখে ইলিশ মাছ খাওয়া প্রচলন করা।
যতটুকু জানা যায়-আশির দশকে রমনাকে কেন্দ্র করে নববর্ষে কিছু খাবারের দোকান বসে। যারা ছায়ানটের অনুষ্ঠান দেখতে যেতেন তারা সেখানে খেয়ে নিতেন। এমনই একবার অল্প কয়েকজন মিলে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ মাছ ভাজা বিক্রি করলেন এবং তা সব বিক্রি হয়ে গেল। কয়েকজন বেকার তরুণ এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাদেরকে উৎসাহিত করতে এবং ‘নতুন একটা কিছু প্রবর্তন’ করার মানসিকতা নিয়ে একটি মুনাফালোভী গ্রুপ এর প্রচারণা চালাতে লাগলেন।
বৈশাখি খাবারের ব্র্যান্ডে পরিণত হয় পান্তা ইলিশ। এমনভাবেই বৈশাখের সঙ্গে ইলিশের সংযোগ ঘটানো হয় যে, মনে হয় পান্তা ইলিশ ছাড়া বৈশাখের কোনো মানে নেই। যার প্রভাব পড়ে আর্থ-সামজিক পরিমণ্ডলে। ইলিশের চাহিদা কেবল বাড়তেই থাকে।
এক হালি ইলিশের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। ইলিশ বলতে নির্বিচারে জাটকা নিধন শুরু হয়। দেশে সারা বছর যত জাটকা ধরা হয় তার অন্তত শতকরা ৬৫ ভাগ মার্চ-এপ্রিল মাসে নিধন হয় কেবল এই বৈশাখকে কেন্দ্র করে। এ সময় মা ইলিশের ডিমসহ নিধন কেবল একটি মাছ নয়, লাখ লাখ ভবিষ্যতের ইলিশকেও ধ্বংস করা। কারণ ঐ সময়টা হচ্ছে ভরপুর ডিম পাড়ার।
সামাজিক এই অনাচারের বিরুদ্ধে প্রথম সচেতনতা সৃষ্টি করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। ২০১৩ সালে কোয়ান্টামের সদস্যরা বৈশাখে ইলিশ বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তারা ইলিশের বিকল্প হিসেবে বাজারে সুলভ তেলাপিয়া মাছকে বেছে নেন এবং পান্তার সঙ্গে তেলাপিয়া ভাজা মিলিয়ে ‘পান্তাপিয়া’ নাম দিয়ে নতুন রেসিপি তৈরি করেন। প্রতি বছর কোয়ান্টামের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীগণ নববর্ষে ইলিশ বর্জন করে পান্তাপিয়া দিয়েই উৎসব পালন করছেন। যা অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার জন্যে অনেক গণমাধ্যমও এগিয়ে আসে। তারা নিয়মিত প্রতিবেদন, টক শো, টিজার, মানববন্ধনসহ নানা উদ্যোগ নেয়। একপর্যায়ে ২০১৬ সালে সরকারিভাবেই নিষিদ্ধ হয় যে, বৈশাখে ইলিশ খাওয়া যাবে না। দেশের একটি বড় অংশ ইলিশ খাওয়া থেকে বিরত হওয়ায় ইলিশের উৎপাদন বেড়ে চলেছে। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ইলিশ প্রধান এলাকাগুলোতে।
বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক হিসাব অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদন ৫.৬৭ লাখ মেট্রিক টন। দেশের মোট মাছ উৎপাদনে ইলিশের অবদান শতকরা ১২.২২ ভাগ। দেশজ জিডিপিতে ইলিশের অবদান শতকরা ১ ভাগের বেশি। ২৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয় ইলিশ খাতে। আর এ প্রাপ্তির নেপথ্যে অনুঘটকের কাজ করেছে কোয়ান্টাম।
এভাবেই সমাজের নানা অনাচারের বিরুদ্ধে সবসময়ই সমাজের সবাইকে সচেতন করার কাজটি কোয়ান্টাম করে এসেছে। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বিশ্বাস করে সকলের সমবেত চেষ্টায় বাংলাদেশকে আগের মতোই এক অনন্য মানবিক সমাজে পরিণত করা সম্ভব। সেজন্যে প্রয়োজন সহযোগিতা।
আমাদের বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন নেই। আমরা যদি নিজস্ব সম্পদকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তবেই আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বদলে যেতে পারে। যেমন একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে আমরা যারা যাকাতদাতা আছি তাদের বেশিরভাগই যাকাত প্রদান করি। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দান হচ্ছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যা সমাজের পরিবর্তনে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। কেননা আমরা সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করি না।
অথচ ইসলামের সূচনা সময়ে আমরা দেখেছি সঙ্ঘবদ্ধ যাকাত আদায়ের মাধ্যমে কীভাবে পুরো আরব সমাজের ভাগ্য বদলে গিয়েছিল। আমিরুল মোমেনিন হযরত ওসমান (রা)-এর খেলাফতকালে সেখানে যাকাত গ্রহণ করার মতো কেউ ছিলেন না। কারণ সমাজের প্রতিটি মানুষকে সচ্ছল করে তোলাটাই যাকাতের মূল লক্ষ্য-ইসলামের এ বিধান বাস্তবায়নে তারা সচেতন ছিলেন। আর এটা সম্ভব তখনই যখন অনেকের ব্যক্তিগত যাকাতের অর্থ একসঙ্গে জমা করে পরিকল্পিতভাবে ব্যয় করা হবে।
বিশ্ব ব্যাংক ২০১৬ সালে ‘ইসলামিক ফাইন্যান্স : এ ক্যাটালিস্ট ফর শেয়ার্ড প্রসপারিটি (Islamic Finance: Islamic Finance: A Catalyst for Shared Prosperity) শিরোনামে ২৫১ পৃষ্ঠার এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে দেখায় মুসলিম দেশগুলোর যাকাতযোগ্য সম্পদকে যদি কাজে লাগানো যায় তবে তা শুধু দেশগুলোই নয়, পুরো মুসলিম বিশ্বে পরিবর্তনের ছোঁয়া নিয়ে আসবে।
এই প্রতিবেদনে যাকাতযোগ্য সম্পদের অধিকারী দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে যাকাতের পরিমাণ বছরে ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) কোটি টাকা। বাংলাদেশের যাকাতের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হলে জিডিপি ১.৬৩ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।
কারো কারো মতে এই বৃদ্ধি জিডিপির চারভাগও হতে পারে। অর্থাৎ শুধু সঙ্ঘবদ্ধ যাকাত আদায় করলেই যাকাতের অর্থ দিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। এ কারণে নিজেরা যেমন সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করব, তেমনি পরিচিতজনদেরও যাকাত আদায়ে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা যদি কিছুটা কমিয়েও হিসাব করি, বাংলাদেশের যাকাতের পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা ধরতে পারি।
২৫ হাজার কোটির জায়গায় যদি ১২ হাজার কোটি টাকাও বছরে যাকাত আদায় হয়, তাহলে তা দিয়ে প্রতিটি ১০০ কোটি টাকা করে ১২০টি সমন্বিত ফলজ, বনজ, মৎস্য ও পশুসম্পদ প্রকল্প হাতে নেয়া যাবে। প্রতিবছর ১২০টি করে ১০ বছরে ১২০০টি এবং বছর বছর এ থেকে প্রবৃদ্ধি আমাদের দেশ থেকে দারিদ্রকে করবে পুরোপুরি নির্বাসিত। দেশের সকল যাকাতগ্রহীতা রূপান্তরিত হবেন যাকাতদাতায়। সঙ্ঘবদ্ধভাবে যাকাত আদায় করলে আগামী ১৫ বছরের ভেতরেই সম্ভব এই লক্ষ্য অর্জন।
পহেলা বৈশাখের এই আনন্দময় দিনে আমাদের উদার মনোভাবকে যদি সঠিকভাবে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগাতে পারি তাহলে সত্যিই আমাদের দেশ স্বর্গভূমিতে পরিণত হবে। নানারকম চ্যালেঞ্জ আমাদের জীবনে এবং জাতির জীবনেও এসেছে। কিন্তু সব চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে আমরা আবার নতুন করে গড়ে তুলতে পারি। বাঙালির হাজারো বছরের ইতিহাসে এই বিষয়টি বার বার প্রমাণিত হয়েছে।
আমরা সবসময়ই বলেছি, পরম করুণাময় মহামহান স্রষ্টার বিশেষ অনুগ্রহভাজন জাতি আমরা। আল্লাহর বিশেষ রহমত রয়েছে আমাদের ওপর। যে কারণে যে-কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাকে থেকেও ঘুরে দাঁড়ানোর যে সহজাত ক্ষমতা, সহজাত শক্তি তা সঞ্চারিত হয়েছে আমাদের মাঝে। এখন ‘আমি পারি’ বাক্যটি আর ব্যক্তি পর্যায়ে নেই। জাতীয় পর্যায়ে এখন আমরা বলছি ‘আমরা পারি!’ যত বলব পারি, তত পারার আগ্রহ, দক্ষতা বাড়তে থাকবে।
কারণ এই ইতিবাচক চিন্তাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় শক্তি এবং এই চিন্তার শক্তিই সবকিছুকে প্রভাবিত করে। আপনি যখনই ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে একটা কাজে যাবেন, চারপাশ থেকে ইতিবাচকতা আপনাকে সাহায্য করবে। যখন নেতিবাচক চিন্তা করতে করতে যাবেন চারপাশ থেকে নেতিবাচকতা আপনার পথে প্রতিবন্ধকতা বাড়াতে শুরু করবে। জীবনের সবক্ষেত্রে আমরা এই ইতিবাচক শক্তিটা নিজেদের মধ্যে লালন করতে চাচ্ছি এবং আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছি। এই ইতিবাচক শক্তির প্রভাবেই ইলিশ যেরকম ওজনে বেড়েছে; আমাদের ব্যক্তিজীবনে, জাতীয় জীবনে সমৃদ্ধিও একইভাবে বাড়বে।
যে পদ্মাসেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক বলেছিল, তাদের ঋণ ছাড়া ৩০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এই করোনার মধ্যেও সে পদ্মাসেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে গেল। পদ্মা সেতু যে আমরা তৈরি করতে পারি ১০ বছর আগে আমাদের পক্ষে বিশ্বাস করাও সম্ভব ছিল না। এখন এটা বাস্তবতা। আসলে মস্তিষ্ক হচ্ছে সভ্যতার সকল সম্ভাবনার সূতিকাগার। এই ব্রেনটা তো জীবনকে সুন্দর করা, জীবনকে আকর্ষণীয় করা, জীবনকে ছড়িয়ে দেয়া, জীবনকে বিকশিত করার জন্যে। যত আমরা মেডিটেশন করব, তত আমরা ইতিবাচক থাকতে পারব, তত আমাদের ব্রেনকে সাফল্য ও সৌভাগ্য সৃষ্টিতে কাজে লাগাতে পারব।
ইতোমধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্যে মেডিটেশন ও শুদ্ধাচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, এটি আনন্দের একটি খবর। শুধু শিক্ষার্থী নন, সবাই মিলে যখন নিয়মিত মেডিটেশন করবেন, তখন আমরা আমাদের সম্ভাবনা এবং শক্তিটাকে অনুভব করতে পারব। আমরা যে আসলে বড় কিছু করতে পারি, এটা তো ইতিহাস বলে। আমাদের পূর্বপুরুষরা একসময় পালতোলা জাহাজের যুগে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বালিতে গিয়েছেন। বালিতে এখনো রামায়ণের নাটক হয়। রাম সেখানে অত্যন্ত পরিচিত চরিত্র। আমাদের পূর্বপুরুষরাই তো ওখানে রামায়ণের কাহিনী নিয়ে গিয়েছিলেন। এই যে অভিযাত্রী, এই যে সিন্দবাদের কাহিনী, চাঁদ সওদাগরের যে কাহিনী, কত জায়গায় জাহাজডুবি হয়েছে। আবার তারা চলে গেছেন।
আমাদের জাতিসত্তার দুর্যোগ মোকাবেলা করার যে ক্ষমতা, সেটা হাজার হাজার বছরের। আমাদের ডিএনএ-র মধ্যেই দুর্যোগ মোকাবেলার এক অসাধারণ ক্ষমতা সুপ্ত রয়েছে। ঝড়, বন্যা, প্লাবন, মহামারি শতাব্দীর পর শতাব্দী এগুলোর মোকাবেলা আমরা করেছি সফলভাবে। এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ঈর্ষা করার মতো। তাই এখন সময় এসেছে উদ্যোগী হওয়ার, ইতিবাচক হওয়ার। একজন যখন উদ্যোগ নেয় কোনোকিছুর, তখন তার মধ্যে ইতিবাচক শক্তি জাগ্রত হয়। ব্রেন কাজ করতে শুরু করে। একসময় সাফল্য ও সৌভাগ্য তার পদচুম্বন করে।
আজকের এই দিনে সবার সাফল্য ও সৌভাগ্যের জন্যে তাই শুভকামনা করছি। আমরা যেন প্রতিটি কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করতে পারি। নববর্ষের এই আনন্দঘন দিনটিতে আমরা পুরো বছরটিতে সাজানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারি। এরই অংশ হিসেবে আমরা আমাদের স্মার্টফোনগুলোতে কোয়ান্টাম অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে পারি। এটি যেমন আমাদের মেডিটেশন এবং ইয়োগা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেবে, তেমনি আমাদের নিজেদের গুছিয়ে কাজ করতেও সাহায্য করবে।