এক বিজ্ঞানপ্রেমী লোক পড়াশোনা শেষ করে একটি কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। নিজের গবেষণার জন্যে তিনি একটি কক্ষ খুঁজছেন। কিন্তু প্রতিকূলতার কারণে কক্ষ পেতে ব্যর্থ হলেন।
তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। ভাবছেন এখন কী করবেন? এমতাবস্থায় চোখ গেল বাথরুমের পাশে ২৪-বর্গফুটের একটি ছোট ঘরের দিকে। এ ঘরটিকেই তিনি গবেষণার কাজের জন্যে নির্ধারণ করলেন।
প্রতিদিন নিয়মিত চারঘণ্টা শিক্ষকতার পর যেটুকু সময় পাওয়া যায় সবটুকুই তিনি এই গবেষণার কাজে দিতে লাগলেন। অর্থ সংকটও ছিল প্রকট। সীমিত ব্যয়ে স্থানীয় মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি পরীক্ষণের জন্যে উপকরণ প্রস্তুত করতে লাগলেন। পদে পদে প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিজ্ঞান সাধনার প্রতি তার আগ্রহ কমে যায় নি।
অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হবার পর তার জীবনে আসলো নতুন এক সমস্যা। তিনি গবেষণায় আরো মনোনিবেশ করতে চাইলেন। কিন্তু তাকে গবেষণার জন্যে কোনোরকম সুবিধাই দেয়া হয় নি। শুধু তাই নয়, ইউরোপীয় অধ্যাপকদের অর্ধেক বেতনেরও কম বেতন তার জন্যে নির্ধারিত হয়।
ইউরোপিয়ানরা মনে করত, তাদের ব্রেনের তুলনায় বাঙালিদের ব্রেন অর্ধেক। অর্থাৎ বাঙালিদের বুদ্ধি ইউরোপিয়ানদের থেকে অর্ধেক। আর তাই যে-কোনো ভাগ বাটোয়ারার ক্ষেত্রে তাদের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণ পেতে হতো বাঙালিদের।
কিন্তু তিনি কোনো মারপিটে যান নি। অহিংস প্রতিবাদ করেন। তিনি বেতন নেয়াই বন্ধ করে দেন এবং তিন বছর অবৈতনিকভাবেই অধ্যাপনা চালিয়ে যান। দীর্ঘকাল এই অহিংস প্রতিবাদের ফলে তার বেতন পরবর্তীতে ইউরোপীয়দের সমতুল্য করা হয়।
১৮৮৭ সালে বিজ্ঞানী হের্ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ নিয়ে আরো গবেষণা করার জন্যে তিনি চেষ্টা করছিলেন কিন্তু শেষ করার আগেই তিনি মারা যান।
এই বিজ্ঞানপ্রেমী তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয় অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ।
বিজ্ঞানের একজন অমর প্রতিভা ছিলেন এই মানুষটি। যিনি প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ওপর সফল গবেষণা করেন যার ফলশ্রুতিতে আবিষ্কৃত হয় রেডিও।
তিনি আর কেউ নন! বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু!
তিনি প্রমাণ করেন, বাঙালির ব্রেন অর্ধেক নয় বরং সবার ব্রেনের ক্ষমতাই অসীম! তার এই আবিষ্কারের পেছনে ছিল, গভীর মনোযোগ একাগ্রতা স্থিরতা।
প্রিয় শিক্ষার্থী! আপনিও অর্জন করতে পারেন বিজ্ঞানী বসুর মতো মনোযোগ, একাগ্রতা, স্থিরতা। পারবেন বিজ্ঞানী বসুর মতো পরিস্থিতিকে সামলে নিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে। প্রশ্ন আসতে পারে, কীভাবে?
মার্চ, ২০২০ থেকে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ঘরবন্দি। ক্লাসের ঘণ্টার শব্দ, স্কুল ছুটির ঘণ্টা এখন নেই কোনো স্কুলে। নেই শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি, টিফিন নিয়ে কাড়াকাড়ি, মাঠে-ক্লাসে দৌড়ঝাঁপ! এ অবস্থায় তাদের মনের ওপর যে চাপ পড়ছে তা থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র সূত্র হলো ‘মেডিটেশন’।