নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম উপার্জন বাড়াতে পারে!
তবে নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম যে উপার্জন বাড়াতে পারে এই চমকপ্রদ তথ্যটি উঠে এসেছে চিকিৎসকদের এক সম্প্রতিক গবেষণায়। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথের একদল চিকিৎসক ৫০-এরও বেশি বয়সের ১৯ হাজার মার্কিনির ওপর একটি জরিপ চালান। পাঁচ ধাপে পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায় যারা নিয়মিত ব্যায়াম করে শারীরিকভাবে ফিট ছিলেন তাদের বার্ষিক গড় আয়, যারা ব্যায়াম না করার কারণে ফিটনেসের দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছিলেন তাদের গড় আয়ের চেয়ে তিন হাজার ডলার বেশি ছিল।
কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেছেন আনফিটদের চেয়ে ফিট ব্যক্তিদের বেশি সময় ধরে কাজ করার হার ছিল বেশি। নিয়মিত ব্যায়াম করে সক্রিয় জীবনযাপনকারীদের পেশাগত জীবনও হয় দীর্ঘ। রিপোর্টে আরো বলা হয় ব্যায়াম ও সক্রিয় জীবনযাপন মানে শুধু রোগ বালাই থেকে দূরে থাকা নয় আর্থিকভাবে ভালো থাকার বিষয়টিও এর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। গবেষক ড. লিন্ডসে ক্রিসওয়েল বলেন যে ব্যায়াম ও সক্রিয় জীবনযাপন সুস্বাস্থ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। আর অর্থনৈতিকভাবে ভালো থাকা এই সক্রিয় জীবনযাপনের পুরস্কার। এই রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে ক্লিনিকেল অর্থোপেডিকস এন্ড আদার রিসার্চ সাময়িকীর মে ২০২৪ সংখ্যায়।
পরিশ্রমী মানুষ রোগ বালাই, অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত থাকে
প্রিয় সুহৃদ, যখন সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্টটি পড়ছিলাম তখন আমাদের কোয়ান্টাম মেথড কোর্সের চতুর্থ দিনে ৩০ বছর ধরে অথর্ববেদের যে বাণীটি বেশ জোর দিয়ে উচ্চারণ করি তার কথা মনে হচ্ছিল। এই বেদবাণীর বাংলা মর্মার্থ হচ্ছে, হে মানুষ! উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে আন্তরিকতার সাথে পরিশ্রম করো। দারিদ্র্য ও অসুস্থতা তোমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবে। অর্থাৎ পরিশ্রমী মানুষ রোগ বালাই থেকে মুক্ত থাকে, মুক্ত থাকে অভাব ও দারিদ্র্য থেকে।
এর কারণও পবিত্র কোরআনে খুব পরিষ্কার করে বলা হয়েছে সূরা বালাদ আয়াত চার, লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি কাবাত। অর্থাৎ আল্লাহ মানুষকে পরিশ্রম ও কষ্টনির্ভর করে সৃষ্টি করেছেন। কাবাত মানে হচ্ছে যত ধরনের শারীরিক পরিশ্রম ও কষ্ট করা যায় তার সবটাই। অর্থাৎ যত আপনি শারীরিক মেহনত এবং শারীরিক কষ্ট করবেন তত আপনি ভালো থাকবেন। শারীরিকভাবে ও আর্থিকভাবে। আর এখনকার বৈজ্ঞানিক গবেষণাও বলছে শারীরিক পরিশ্রম ও মেহনত শুধু আপনাকে শারীরিকভাবে ফিট রাখে না, আয়-রোজগারও বেড়ে যায়।
জিম বা বিশেষ ডায়েট ছাড়াও চমৎকার ফিট থাকা যায়
প্রিয় সুহৃদ, এখন আপনি প্রশ্ন করতে পারেন শারীরিক ফিটনেস বাড়ানোর জন্যে শুনেছি জিম ডায়েটিং কত কিছু করতে হয়। আসলে জিম ছাড়াও বিশেষ ডায়েট ছাড়াও চমৎকার ফিট থাকা যায়। যেমন আছেন ভারতের একজন সুপার মডেল সাঁতারে পাঁচ বার জাতীয় চ্যাম্পিয়ান মিলিং সোমান। গত ৪০ বছর ধরে একই ওজন। ১৯ বছর বয়সে ছিল ৮০-৮১ কেজি। ৫৮ বছর বয়সেও একই ওজন। একইরকম ফিট।
‘আমি জিমে যাই না কোনো ডায়েট অনুসরণ করি না, তবে হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলি’
এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন ৫৮ বছর বয়সেও আপনার এই ফিটনেসের রহস্য কী? তিনি হেসে বলেন আমি জিমে যাই না কোনো ডায়েট অনুসরণ করি না আমার কোনো ফিটনেস প্রশিক্ষক নেই। তবে আমি স্বাস্থ্যসম্মত অর্থাৎ হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলি। পর্যাপ্ত ঘুমাই কখন ও কতটুকু খেতে হবে সেটা আমি জানি। ক্যালরি মেপে খাই না। তবে জাঙ্ক ফুড ও সাদা চিনি এড়িয়ে চলি। প্রচুর ফল ও সবজি খাই এবং সবসময় একটিভ থাকি। মেহনত করি পরিশ্রম করি দৌড়াই সাঁতার কাটি। ৫০ বছরের বেশি সময় এটাই আমার লাইফস্টাইল। ১৯ বছর বয়স থেকে আজ পর্যন্ত আমার ওজন ৮০-৮১ কেজি। অর্থাৎ প্রায় ৪০ বছর ধরে ওজন একইরকম আছে।
ফিটনেসের শর্টকাট পথ হচ্ছে লেগে থাকা
লোকজন ফিট থাকার জন্যে আমার কাছে টিপস চাইলে আমি বলি প্রতিদিন কয় সেট ব্যায়াম করলে কখন ঘুম থেকে উঠলে জিমে কতক্ষণ শরীরচর্চা করলে কত লিটার পানি পান করলে এইসবরে ওপর ফিটনেস নির্ভর করে না। ফিটনেসের শর্টকাট পথ হচ্ছে লেগে থাকা। সবসময় পরিশ্রমের মাঝে থাকা। প্রতিদিন একই পরিশ্রম বার বার একই ব্যায়াম বার বার একই দৌড় বার বার যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা তোমার অভ্যাসে রূপান্তরিত হয়। এমন অভ্যাস যা ভেঙে তুমি বেরোতে পারবে না। ফিটনেসের আসল রহস্য এখানে। শারীরিক শ্রম ব্যায়াম এটাকে প্রতিদিনের অভ্যাসে রূপান্তরিত করা নিয়মিত অনুশীলন করা।
বয়স ৮৪ কিন্তু এখনো তিনি পাহাড় পর্বতে ট্রেকিং করতে চলে যান
মিলিং সোমান যেমন ফিট তার মাও তার চেয়ে ফিট কম নন। তার মা শিক্ষক ছিলেন, ছোটবেলা থেকেই ব্যায়াম করতেন। অবসর নেয়ার পর একদিন তিনি জানতে পারলেন অভিভাবক যোগাড় করতে না পারায় তার নাতি পাহাড়ে ট্রেকিংয়ে যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে না। তিনি বললেন ঠিক আছে ওর সঙ্গে আমি যাব। এরপর তিনি নেপালের মাউন্ট এভারেস্ট ও অন্নপূর্ণা বেইজ ক্যাম্প সহ বেশ কয়েকটি পর্বতে ট্রেক করেছেন। ৮০ বছর বয়সেও তার মা উশা সোমান দার্জিলিং থেকে সান্দাকফু পর্বত পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্রেইল হেঁটে পৌঁছান। এখন তার বয়স ৮৪ কিন্তু এখনো তিনি বুকডাউন দেন স্কিপিং করেন পাহাড় পর্বতে তার মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ট্রেকিং করতে চলে যান।
সূত্রগুলো অনুশীলন করতে করতে এটা এমন অভ্যাসে পরিণত হবে যা নিজেও ভাঙতে পারবেন না
প্রিয় সুহৃদ, আসলে সোমান যে হেলদি লাইফস্টাইলের কথা বলছেন। এই হেলদি লাইফস্টাইলই হচ্ছে সুস্বাস্থ্য ও সাফল্যের গোড়ার কথা। কোয়ান্টাম মেথড যোগ মেডিটেশন ও হেলদি লাইফস্টাইল সায়েন্টিফিক লাইফস্টাইলের বাস্তব প্রশিক্ষণ দিয়ে এসছে গত ৩২ বছর ধরে। তাই যারা কোয়ান্টাম মেথড কোর্স করেছেন এবং সূত্রগুলো চর্চা করছেন তারা নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। এখন তারা যত অনুশীলন করবেন অর্থাৎ সূত্রগুলো অনুশীলন করতে করতে যখন এটা এমন অভ্যাসে পরিণত হবে যা তিনিও ভাঙতে পারবেন না। তখনই এটা হয়ে যাবে তার সুস্বাস্থ্য ও সাফল্যের ভিত্তি।
অতএব হেলদি লাইফস্টাইলের যে সূত্রগুলো আপনি শিখেছেন নিয়মিত অনুশীলন করুন এবং একে অভ্যাসে রূপান্তরিত করুন। আপনার সুস্থতা এবং সাফল্য নিশ্চিত। আর যারা এখনো এই জীবনদৃষ্টি বদলকারী কোর্সে অংশ নেন নি তারা আগামী ১৯-২০-২১-২২ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য কোয়ান্টাম মেথড ৪৯৯ এইচ ব্যাচে সুযোগ থাকলে অংশ নিন। কোর্সে এলে খুব সহজেই আপনি হেলদি লাইফস্টাইলের গভীরে প্রবেশ করতে পারবেন। এবং এই সূত্রগুলো অনুশীলন করে আপনিও সুস্থ সফল জীবন লাভ করতে পারবেন।
যেখানেই নেতিবাচকতা অসুস্থতা দেখবেন সেখানে পরিস্থিতি বুঝে হেলদি লাইফস্টাইলের কথা বলুন
প্রিয় সুহৃদ, হেলদি লাইফস্টাইলের অংশ হিসেবে প্রতি শুক্রবার সাদাকায়নে আসাকে অভ্যাসে পরিণত করুন। আর যেখানেই নেতিবাচকতা বিষণ্নতা অসুস্থতা দেখবেন সেখানে পরিস্থিতি বুঝে সেই অনুযায়ী যোগ মেডিটেশনের কথা কোয়ান্টামের কথা হেলদি লাইফস্টাইলের কথা বলুন। কারণ যিনি মেডিটেশন করবেন হেলদি লাইফস্টাইল অনুসরণ করবেন তিনি সুস্থ সফল সুখী হবেন।
আপনি ভালো থাকুন সবসময় ভালোর সাথে থাকুন। খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম। আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
[০৫ জুলাই ২০২৪ সাদাকায়নের জন্যে ০১ জুলাই ২০২৪ তারিখে গুরুজীর প্রদত্ত বক্তব্য]