– শেখ শাহাদাৎ হোসেন
চাচীর কথা শুনে লোভ যে লাগল না, তা নয়। ভেতরে যেতে বলা মানে মুড়ি চিড়ে কিছু একটা জুটবে নিশ্চয়ই। আর আমি যে মানের পেটুক, তাতে যা খেয়ে এসেছি, কখন তা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে ! কিন্তু আমার বড় ভাই যে কাদাপানির মধ্যে এখনো দাঁড়িয়ে আছে, সে কথা ভুলিনি। তা ছাড়া বাড়ির বাইরে অন্য কোথাও কারো সামনে কিছু খেতে গেলে অস্বস্তি লাগে। এ জন্যে চাচী বাড়ির মধ্যে ঢুকে যেতেই আমি চট করে পিছিয়ে এসে পশ্চিম মুখে হাঁটা শুরু করলাম। আমার যেটা দরকার, তা দেখা হয়ে গেছে। কারণ এ বাড়ির সামনের ঘরটির জানালার অর্ধবৃত্তাকার অংশে সাদা আর চারপাশের বর্ডারে আকাশী রং করা; আমার কাঙ্খিত রঙের সাথে যা মেলেনি।
কিন্তু আমাকে চলে যেতে দেখে আমার ছোট বোন ঝরণার বয়সী শিশুটি চিৎকার শুরু করল, “মা, দ্যাখো; সেই ভাইটা না চলে যাচ্ছে”। উত্তরে তার মা কি বললেন তা শুনতে পেলাম না। তবে আমার ধারণা, ওর প্রকৃত নাম জেসু নয়; হয়তো আদর করে মূল নামটিকে ছোট করে ডাকা হয়। আসলে আমার বয়স কেবল ছয় বছর পেরিয়ে সাত চলে। বছর দুই আগে একবার আর কয়েক মাস আগে একবার এসেছিলাম গ্রামে। প্রথমবার ঢুকেছিলাম পশ্চিম দিকের গ্রাম গোপালপুর হয়ে; দ্বিতীয়বার ঢুকেছি উত্তর দিকের কামারগ্রাম হয়ে। আর এবার এসেছি দক্ষিণ দিক হতে খোলা মাঠের ভেতর দিয়ে। সে জন্যে ভৌগলিক জ্ঞানের অভাবে আমার এই করুণ অবস্থা !
এবার আমি ওই বাড়ি সংলগ্ন ঠিক পাশের বাড়িটার সামনে দাঁড়ালাম। এটার সামনেও পুকুর আছে, তবে তত বড় নয়। বাড়ির প্রবেশ পথের ডানদিকে বড় এক আমগাছ; তার নিচেই পুব-পশ্চিমমুখো লম্বা এক টিনের ঘর। রাস্তার দিকে এর পিছন অংশ, সে জন্য কোন দরজা জানালা নেই। বুঝতে পারলাম, সেটিও আমার কাঙ্খিত বাড়ি নয়। তবে ঘরের বেড়ায় ছোট আকারের একটা পোস্টার লাগানো, তাতে একজন বসন্ত রোগীর প্রতীকি স্কেচ করা ছবি ছাপানো। তার নিচের লেখা অনুযায়ী বুঝলাম, কারো আশেপাশে এ ধরণের রোগী থাকলে তা স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে মজার বিষয় হল, ক্রয়সূত্রে ১৯৯১ সাল হতে আমরা ওই বাড়িটির বাসিন্দা।
( চলবে )