1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

মেডিটেশন করুন : ট্রমামুক্ত হবেন

  • সময় শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৫৩ বার দেখা হয়েছে

বড় মহৎ কিছু ভাবতে পারাটাই একটি মহান জাতির বিশেষত্ব
আজকের সাদাকায়নে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আর বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি তরুণ প্রজন্মকে তাদের সাহস ও ত্যাগের জন্যে। সেবা ও মানবিকতায় তাদের স্বতঃস্ফূর্ততার জন্যে। যখন রাস্তায় কোনো ট্র্যাফিক পুলিশ ছিল না, তখন যে শ্রম ও দক্ষতায় তারা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছেন, আকস্মিক বন্যায় যে ক্ষিপ্রতার সাথে তারা রিলিফ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তা শুধু আমাদের দেশের তরুণদের পক্ষেই সম্ভব। এই মমতা এই ভালবাসা এই হৃদয়ভরা টান, এটা আমাদের জাতিসত্তার বিশেষ গুণ। এটাই আমাদের অতীতে মহান করেছিল এবং ভবিষ্যতে মহান করবে।

আসলে বড় ভাবতে পারা, মহৎ কিছু ভাবতে পারা- এটাই একটি মহান জাতির বিশেষত্ব।

বন্যাদুর্গতদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন সহযোগিতা
আপনি জানেন, গত মাসে টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানিতে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে এখনও পানিবন্দি রয়েছে ছয় লাখেরও বেশি পরিবার।

তবে পানি কমে আসছে। সর্বত্র বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

প্রাথমিক রিলিফ সহায়তার পর বন্যাদুর্গত মানুষের জন্যে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্বাসন সহযোগিতার। ফাউন্ডেশন বরাবরের মতই এক্ষেত্রে আন্তরিক সেবা দেবে। তাই এক্ষেত্রে যে-কোনো সহযোগিতাকেই আমরা স্বাগত জানাব।

বন্যাদুর্গতদের ভবিষ্যতকে আমরা কীভাবে দেখতে চাই, এই ভাবনাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ
আসলে বন্যার্তদের জন্যে ভাবা- তাদের ভবিষ্যতকে আমরা কীভাবে দেখতে চাই এই ভাবনাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসুন, আমরা সবাই মিলে ভাবি- বন্যাদুর্গতদের সবকিছু আগের চেয়ে ভালো। তাদের ঘরবাড়ি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে। তাদের আয়-উপার্জন আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তাদের সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে বাড়ছে। নদ-নদী খাল-বিল আগের চেয়ে গভীর হচ্ছে। বাড়ছে নাব্যতা, বাড়ছে পানির প্রবাহ।

পরিবেশ ও প্রকৃতি আগের চেয়ে উন্নত হচ্ছে। কারণ কোরআনের শিক্ষাই হচ্ছে কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি। অর্থাৎ সমস্যার সাথেই রয়েছে সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

আসলে এই ভাবতে পারাটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্ঘবদ্ধভাবে মানুষ যখন ভাবতে পারে, ভাবনার সামাজিকায়ন যখন ঘটে, তখন বাস্তবে তার প্রতিফলন মানুষ দেখতে পায়।

মানসিক চাপ, ট্রমায় ভুগছে অসংখ্য মানুষ
এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে মানসিক। মানসিক চাপ, ট্রমায় ভুগছে অসংখ্য মানুষ।

পয়লা সেপ্টেম্বর দৈনিক ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে বলা হয়, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে গত ১৬ই জুলাই থেকে দেশে ঘটে যাওয়া সহিংসতা প্রত্যক্ষ করেছে সব বয়সের মানুষ। সহিংসতায় শত শত তাজা প্রাণ ঝরেছে। অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কষ্ট পাচ্ছে। এই সহিংসতা থেকে বাদ যায় নি শিশুরাও।

হঠাৎ এত লাশ, রক্তের বন্যা। কিশোর-তরুণদের চোখ হারানো, হাত পা হারানোর ট্রমা পরিবার সহ যাদের জীবনে এমন দূর্ঘটনা ঘটেছে তারা সবাই কমবেশি মানসিক ট্রমায় আছেন। রিপোর্টে আরও বলা হয় দেশে ঘটে যাওয়া এই রক্তক্ষয়ী সহিংসতা দেখেছে চিকিৎসক নার্স সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ।

এছাড়া গুলির শব্দ, সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ, টিয়ার শেলের ধোঁয়া, বড় বড় ধারালো অস্ত্র দেখেছে কোমলমতি শিশুরাও।

অনেকে আহত ও নিহত হয়েছেন এবং শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। রিপোর্টে বলা হয়, চোখের সামনে গুলি চালানোর ঘটনা, রক্তে ভিজে যাওয়ার মতন ঘটনা দেখেছে স্বজনরা।

“খেতে বসলেই রক্ত দেখি, ঘুমাতে গেলেই মায়েদের কান্না শুনি”
একজন শিক্ষার্থী বলেন, এত বীভৎস দৃশ্য এর আগে দেখি নি। খেতে বসলেই রক্ত দেখি। ঘুমাতে গেলেই মায়েদের কান্না শুনি। হাসপাতালের আর্তনাদ শুনি। রাতে ঘুমের মধ্যে এসব নিয়ে দুঃস্বপ্নও দেখছি।

একজন সংবাদকর্মী বলেন, সেদিন হাসপাতালে আহত শিশু কিশোরদের দেখে অফিসে ফিরে সেসবের বিশদ বর্ণনা দিতে গিয়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি।

অন্য একজন সংবাদকর্মী বলেন, “আন্দোলনে জীবন বাঁচাতে দৌড়াতে গিয়ে দেখি, আমার পাশেই একজন গুলি লেগে পড়ে গেল। আমি তাকে বাঁচাতেও পারলাম না। এই অনুশোচনাগুলো কোনোভাবেই ভুলতে পারি না। খবরের সন্ধানে সারাক্ষণই এসব সহিংসতার খোঁজ রাখতে হয়। এখন নিজের অজান্তেই মিছিলের শব্দ শুনতে পাই। অন্য যে-কোনো শব্দ শুনলেই মনে হয় আবার কি কোথাও গুলি বা সাউন্ড গ্রেনেড পড়ছে!”

“যখন হাত দিয়ে দেখি আমার পা-টা নাই তখন খুব কান্না আসে…”
পঙ্গু হাসপাতালে গুলিতে এক পা হারানো সতেরো বছরের রাকিব বলেন, এখনও মনে হয় আমার পুরো পা-টাই আছে। ঘুম ভেঙে গেলে যখন হাত দিয়ে দেখি আমার পা-টা নাই তখন খুব কান্না আসে। কষ্টে বুক ফেটে যায়। মায়ের কথা ভেবে কাঁদি না। আমার মা আমার টেনশনে ঠিকমতো ঘুমায় না।

এসব ঘটনা হচ্ছে মনোসৃষ্ট দুর্যোগ, এটা এক ধরণের ডিজাস্টার
আন্দোলনকে ঘিরে দেশের অসংখ্য শিশু-কিশোর ও বড়রা ট্রমার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। তেমনি এই সহিংসতায় আহত কিশোর-তরুণ ও তাদের স্বজনরাও ট্রমায় ভুগছেন।

বিষয়টি নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, এসব ঘটনাকে আমরা মনোসৃষ্ট দুর্যোগ বলি। এটা এক ধরণের ডিজাস্টার।

শুধু শিশু নয় বয়োবৃদ্ধ, যারা রাস্তায় থাকে, যারা সংবাদকর্মী, যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের সবার মধ্যে কোনো না কোনো মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে।

শিশুদের মানসিক ট্রমার পরিণতি দীর্ঘমেয়াদি হয়
তবে শিশুদের মানসিক ট্রমার পরিণতি একটু দীর্ঘমেয়াদি। এতে তাদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, তাদের মধ্যে ভয় কাজ করে। অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। স্ট্রেস, এংজাইটি তৈরি হয়। তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। মনোযোগের সমস্যা হতে পারে। লেখাপড়ায় সমস্যা হতে পারে। তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হতে পারে। দেখা যায়- তারা একটুতেই বিরক্ত হচ্ছে, কান্না করছে।

এই বিশেষজ্ঞ মনোচিকিৎসক বলেন, যা ঘটে গেছে তা ফেরত আনা সম্ভব নয়। ফলে যে ক্ষতি হয়ে গেছে, তা রিপেয়ার করা কিংবা এটা যেন আর না হয় তার চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের সাহস দিতে হবে।

আমরা শিশুদের অন্যের মতামতের ওপর শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাব। সামাজিক দক্ষতা শেখাবো। শিশু থেকে বড়রা যে সময়মতো রাতে ঘুমায় এবং দিনে প্রাণবন্ত থাকে এ বিষয়ে লক্ষ রাখব। শিশুদের সঙ্গে বাবা-মা বা কাছের মানুষ যেন গুণগত সময় দেয়।

মেডিটেশন ডিটিউনড ব্রেন এবং মনকে রিটিউনড ও শক্তিশালী করে
প্রিয় সুহৃদ, গত ২রা অগাস্ট মাসিক সাদাকায়নের বিষয়বস্তুই ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ট্রমামুক্ত থাকার উপায়। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা মানসিক স্বাস্থ্যের কি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে তা আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছিলাম। এবং শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, নানান রকম জটিল রোগব্যাধির জন্ম দিতে এ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। এবং এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে আমরা বলেছিলাম স্রষ্টা প্রতিটি রোগের নিরাময় দিয়েছেন। এ নিরাময় ওষুধের মাধ্যমে হতে পারে। দানের মাধ্যমে আসতে পারে। দোয়ার মাধ্যমে পেতে পারেন। অথবা ধ্যানের মাধ্যমে পেতে পারেন।

আসলে ট্রমা সবসময় ব্রেন ও মনের ও মনোজগতে মারাত্মক ঝড় তুলে অগোছালো এলোমেলো করে দেয়। আর মেডিটেশন হচ্ছে এই মন এবং ব্রেনের ব্যায়াম যা অগোছালো ডিটিউনড ব্রেন এবং মনকে রিটিউনড গোছালো সুবিন্যস্ত ও শক্তিশালী করে।

যাদেরই মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ট্রমা কাজ করছে, তাদেরকে মেডিটেশনে উদ্বুদ্ধ করুন
তাই প্রিয় সুহৃদ উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ভয় আতঙ্ক অস্থিরতা ও ট্রমামুক্তির জন্যে আমরা ৩২ বছর ধরে মেডিটেশনের চর্চা করে আসছি প্রিয় সুহৃদ, মেডিটেশন, গ্রুপ মেডিটেশন, সাদাকায়ন, ভালো ভাবনার সামাজিকায়ন সবসময় মানুষকে ট্রমা থেকে মুক্ত রাখে এর প্রমাণ আপনারাই।

করোনাকালের মতো বর্তমান অস্থির সময়ে আপনারাই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ভয় আশংকামুক্ত, ট্রমামুক্ত।

তাই নিঃসংশয়ে চারপাশের মানুষ পরিচিতদের যাদেরই মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ভয় আশংকা ট্রমা কাজ করছে, অস্থিরতা কাজ করছে, অকারণে ক্ষেপে ওঠার প্রকাশ ঘটছে- সবাইকে মেডিটেশনে উদ্বুদ্ধ করুন।

ট্রমামুক্তির পথে সবচেয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ হতে পারে কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশ নেয়া
ট্রমামুক্তির পথে একজন মানুষ সবচেয়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারে চারদিনের কোয়ান্টাম মেথড কোর্সে অংশগ্রহণ করার মধ্য দিয়ে। অতএব পরিচিতদের নিঃসঙ্কোচে উদ্বুদ্ধ করুন ৪৯৯তম ব্যাচ, যা ইনশাআল্লাহ আগামী ২০, ২১, ২২, ২৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সে কোর্সে অংশ নিতে।

একজন মানুষ চারদিন টানা ৪০ ঘন্টা অংশ নিলে নিঃসন্দেহে তার মনকে মনোজগতের ডিটিউনড অবস্থাটাকে রিটিউনিংয়ের একটা সুন্দর ছাঁচে সে ফেলে দিতে পারে।

তাই নিঃসঙ্কোচে চারপাশের মানুষকে মেডিটেশনের কথা বলুন, সাদাকায়নে আসার কথা বলুন, এবং সামাজিক যত করসেবা, রক্তদান থেকে শুরু করে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ যত সামাজিক করসেবা রয়েছে, এই করসেবায় অংশগ্রহণে তাদের উদ্বুদ্ধ করুন।

খতমে কামালিতে অংশ নিন, দুর্গত মানুষের পাশে থাকুন
আর যে-কোনো আপদ-বিপদ বালা-মুসিবত ট্রমা এ থেকে মুক্তির জন্যে দোয়া সবসময়ই চমৎকারভাবে কাজ করে। অতএব খতমে কামালিতে সুযোগ পেলেই অংশ নিন। এবং পরিচিতদের অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। সবসময় বিপন্ন মানুষের পাশে থাকুন। আপনার অস্থিরতা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ট্রমা এমনিতেই কেটে যাবে। সবসময় দুর্গত মানুষের পাশে থাকুন। আপনার অস্থিরতা উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ট্রমা এমনিতেই কমে যাবে।

ভালো থাকুন। নিয়মিত মেডিটেশন করুন। সবসময় সবার শুভকামনা করুন।

খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম। আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

[০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সাদাকায়নের জন্যে ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে গুরুজীর প্রদত্ত বক্তব্য]

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com