তরুণরা যথাযথ দিক-নির্দেশনা পেলে তারা যে মানুষের হৃদয়কে কীভাবে জয় করতে পারে একটি ঘটনা দিয়ে আমরা আমাদের আজকের আলোচনার উপসংহার টানব।
একটি চিঠি।
একজন শিক্ষিকা তার স্যারকে লিখছেন।
সাত সকালে কোয়ান্টাম থেকে ফোন এসেছে। আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করল। বলল, আজকে ওনার মৃত্যুবার্ষিকী। ওনার ছেলে-মেয়েরা সবাই কেমন আছে? ওদের অমায়িকতায় আমি মুগ্ধ!
ঐ সময়টায় রোজ ২০/৩০টা করোনার লাশ ওরা দাফনের ব্যবস্থা করত। তাও ওরা মনে রেখেছে। নিশ্চয়ই সবাইকে ফোন দিচ্ছে।
মানুষ অনেক কিছুই বলে কোয়ান্টাম নিয়ে। কিন্তু ওরা আমাদের যে কাইন্ডনেসটা দেখিয়েছে, আর কেউ দেখায় নি। কত আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী যাদের সাথে আম্মুর ঘনিষ্ঠ ওঠাবসা ছিল সেইদিন থেকে শুরু করে আর কোনোদিন খোঁজ নেয় নি।
ভর করোনার সময় আম্মুর ইন্তেকালের পর আধাঘণ্টায় কোয়ান্টাম হসপিটালে উপস্থিত হয়েছিল। যদিও ওরা আমার চাচীর ভাইয়ের রেফারেন্সে এসেছিল।
কিন্তু সাথে সাথেই তো এসেছিল। এত্তগুলা মেয়ে দৌড়ায়ে দৌড়ায়ে আম্মুর গোসল কাফন চোখের পলকে সব শেষ করেছে!
একটা সুপারভাইজার ছেলে ছিল। কী সুন্দর করে আমাদের সাথে কথা বলছিল! বার বার আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। আমি বার বার এই প্রশ্ন সেই প্রশ্ন করছিলাম। সে ধৈর্য ধরে জবাব দিচ্ছিল।
ঐ সময় মাথা কাজ করছিল না। তা-ও খেয়াল করেছিলাম ছেলেটার জুতাটা ছেঁড়া। খুব মায়া লাগছিল।
বাসায় এসে কয়েকদিন পর নাশিদকে বলছিলাম, ঐ ছেলেটার নাম্বার কই? ওকে একটা জুতা গিফট করতে চাই। এত অচেনা মানুষকে ও ভালবাসা দেয়, ও নিজেও তো কিছু ভালবাসা ডিজার্ভ করে।
ওর নাম্বার আর পাই নাই। ঐ বিপদের সময় কেউ নাম্বার রাখে নাই। ছেলেটা হারিয়ে গিয়েছিল। হয়তো জুতার চেয়েও অনেক দামি জিনিস ও সবার কাছে পায়। সেটা হচ্ছে- মানুষের দোয়া।
দাফনসেবায় নিয়োজিত শত শত তরুণ-তরুণীর একজন এই তরুণ। তার জুতোটা ছেঁড়া ছিল। কিন্তু তার হৃদয়ের উষ্ণতা হৃদয়ের সমমর্মিতা মাকে হারানোর সে ব্যথার মুহূর্তে এই শিক্ষিকা যেমন ভুলতে পারেন নি, তেমনি হাজার হাজার মানুষ যারা ঐ সময়ে এই সমমর্মিতা এই মমতা পেয়েছেন তারা কেউই ভোলেন নি।
তাদের দোয়া এই স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি কোয়ান্টামের প্রতি কোয়ান্টিয়ারদের প্রতি সবসময়ই অম্লান আছে। এবং তাদের দোয়ার ফলেই আমরা আমাদের সেবামূলক কাজগুলো এত অনায়াসে করতে পারছি।