আপনি জানেন, ক্যালেন্ডার অনুসারে শীতকাল শুরু হতে অর্থাৎ পৌষ মাস আসতে এখনো ১০ দিন বাকি। কিন্তু দেশের উত্তর ও পার্বত্য অঞ্চলে ইতিমধ্যেই শীতের আগমন ঘটেছে। অবশ্য এবার শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে পৌষের প্রথমার্ধেই।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা বেশ নেমে যেতে পারে। আর শীতের তীব্রতা বাড়লে ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধিও বেড়ে যায়। কারণ তখন ঠান্ডার সাথে যুক্ত হয় বায়ুদূষণ, অ্যাজমা, যক্ষ্মা, ফুসফুস ও শ্বাসনালীর ব্যাধি বা ব্রঙ্কাইটিস আর এর সাথে রয়েছে যত হাড়গোড়ের ব্যথাবেদনা।
বয়স্করা এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তারাই এতে আক্রান্ত হন বেশি। এসব ক্ষেত্রে করণীয় ও প্রতিকার নিয়ে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব।
তার আগে আমরা পৌষ মাস নিয়ে বাংলার বিখ্যাত প্রবচন, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ’- এ নিয়ে একটু আলোচনা করি।
অর্থাৎ পৌষ কারো জন্যে আনন্দ, আবার কারো জন্যে দুঃখকষ্ট নিয়ে আসে। আনন্দ কাদের জন্যে? যারা নিয়মিত মেডিটেশন করেন, ব্যায়াম করেন, সুস্থ জীবনাচার অনুসরণ করেন, তাদের জন্যে আনন্দ।
কারণ শীতের শুরুতেই নতুন চাল, খেজুরের রস আর গুড়, বাহারি পিঠার সমাহার, শীতের সন্ধ্যা বা সকালে গরম গরম বিচিত্র স্বাদ গন্ধে ভরপুর পিঠা খাওয়ার আনন্দ খুব কম দেশেই পাওয়া যায়। বৃষ্টি-কাদা মুক্ত শীতের সকালের রোদ যা দেয় রোদ পোহানোর আনন্দ।
শিশু-কিশোর-তরুণদের পরীক্ষা শেষে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আনন্দ। পরিবার পরিজন বন্ধুদের নিয়ে পিকনিকের আনন্দ আর কোয়ান্টাম পরিবারের সদস্যদের জীবনে যুক্ত হয়েছে করসেবার আনন্দ। কখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছিন্নতা করসেবা। কখনো মাটির ব্যাংকের দান সংগ্রহ করসেবা, কখনো শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ করসেবা কখনো চিকিৎসা করসেবা।
আর এবার শীতে তো চলছে ঘরে ঘরে দোয়া বা প্রার্থনা সভার করসেবা। পুরো শীতজুড়ে ঘরে ঘরে দোয়া বা প্রার্থনা করসেবা ইনশাআল্লাহ সামাজিক শান্তি ও কল্যাণের আবহকে নতুন মাত্রা দেবে।
অতএব প্রিয় সুহৃদ! সুযোগ করে সপরিবারে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের করসেবায় অংশ নিন। নিজের ঘরে পরিচিতদের নিয়ে দোয়া বা প্রার্থনাসভার আয়োজন করুন। পরম করুণাময়ের অফুরন্ত কল্যাণের ছায়ায় নিজের পরিবারকে নিয়ে আসুন। পৌষ আপনার জন্যে আনন্দের মাসে রূপান্তরিত হবে।
আমরা আমাদের আলোচনা শুরু করেছিলাম শীতকালীন রোগব্যাধি নিয়ে।
আসলে কোয়ান্টাম মেথড মেডিটেশন কোর্সে আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলি, রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে নেতিবাচকতা। নেতিবাচক আবেগ অর্থাৎ রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ভয়-ভীতি, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা পঁচা আবর্জনার মতো মনে জমে জমে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। ফলে শরীর নানা ধরনের রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। শীতকালীন রোগব্যাধিও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়।
তাই যারাই শীতকালে ভালো থাকতে চান, নিয়মিত মেডিটেশন করুন আর প্রতিদিন আধঘণ্টা কোয়ান্টাম ব্যায়াম করুন। কোয়ান্টাম ব্যায়ামের মধ্যে বিশেষত বঙ্গাসন, শশাঙ্গাসন, উষ্ট্রাসন, ভুজঙ্গাসন ও হলাসন করুন। শরীরের শীত সহনক্ষমতা বেড়ে যাবে।
শীতের এই সময়টায় নিয়মিত দমচর্চা করতে ভুলবেন না। দিনে কয়েক দফা দমচর্চা করুন। নাক দিয়ে বুক ফুলিয়ে দম নিয়ে ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ার অনুশীলন আপনার দেহের অক্সিজেন গ্রহণ ক্ষমতা এক-তৃতীয়াংশ বাড়িয়ে দেবে। আপনার ফুসফুস শক্তিশালী হবে।
আসুন না সবাই মিলে আমরা একটু দমচর্চা করি।
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন, দম নেয়ার সময় বুক ফুলবে। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন।
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন। দম নেয়ার সময় বুক ফুলবে। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন।
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন। দম নেয়ার সময় বুক ফুলবে। যতটা ফোলানো যায়, বুক ফুলবে। বুক ভরে দম নিন মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন।
নাক দিয়ে দম নিন, দম নেয়ার সময় বুক যতটা ফোলানো যায় ফোলান। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন।
নাক দিয়ে দম নিন, বুক যতটা ফোলানো যায়, ফোলান। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন।
নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিন বুক যতটা ফোলানো যায় ততটা ফোলান। ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে দম ছাড়ুন।
সবসময় খেয়াল রাখুন দম নেয়ার চেয়ে দম ছাড়তে একটু বেশি সময় নেবেন।
আপনি আমার সাথে ছয় বার দম চর্চা করলেন। এভাবে ১৫-২০ বার দম নিয়ে দম ছাড়লে এক দফা চর্চা হবে, এরকম দিনে ৬-১০ দফা চর্চা করুন। পুরো শীত মৌসুমে প্রতিদিন এই দমচর্চা অব্যাহত রাখুন, আপনার ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকলে তা কমে যাবে। আপনি অনেক প্রাণবন্ত থাকবেন।
আপনার যদি ঠান্ডার প্রবণতা বেশি থাকে, তাহলে রাতে শোয়ার আগে গরম পানি দিয়ে মুখ গার্গল করে তারপরে ঘুমাবেন। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ করবেন গরম পানি দিয়ে গার্গল করা। অবশ্যই গরম পানি সহনীয় মাত্রার হতে হবে।
আপনি ইতিমধ্যেই প্রয়োজনীয় শীতের পোশাক পরা শুরু না করে থাকলে আজ থেকেই মোজাসহ প্রয়োজনীয় শীতের পোশাক পরা শুরু করুন। বায়ুদূষণ থেকে বাঁচার জন্যে মুখে মাস্ক ব্যবহার করুন।
আর গোসল করবেন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে। পানি বেশি ঠান্ডা থাকলে গরম পানি মেশাতে পারেন কিন্তু তারপরেও পানির তাপমাত্রা যেন শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়। অর্থাৎ পানি যাতে একটু হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগে।
এবং গোসল করবেন সকালে। তাহলে সারাদিন আপনার শীত কম লাগবে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে।
শীতের পুরো সময়টায় হালকা গরম পানি খাবেন। চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গ্রিন টি খাবেন আর এক কোষ রসুন, ২৫-৩০টি কালোজিরা, এক চা চামচ মধু প্রতিদিন নাশতার সাথে খেতে ভুলবেন না। শীতের শাকসবজি পর্যাপ্ত খান।
পুরো শীতকাল পিঠাকেই বিকেলের স্ন্যাক্স বানিয়ে ফেলুন। পৌষ আপনার জন্যে ‘পৌষ মাস’ অর্থাৎ আনন্দের মাস হোক।
২০২৪ সালের শেষ মাসিক সাদাকায়নের আলোচনার উপসংহার টানব, আমরা আমাদের শিশু ও অভিভাবকদের জন্যে একটি সুখবর দিয়ে।
অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করে আইন পাশ করেছে। ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিনিমাম এজ বিল’ নামে এই আইনে ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম সহ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোকে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের একাউন্ট খুলতে বা তাদের প্লাটফর্ম লগ ইন করতে না দিতে বাধ্য করা হয়েছে।
আইন লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ৩২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত জরিমানা দিতে হতে পারে। নরওয়ে, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ১৩-১৫ বছর বয়সে শিশুদের একাউন্ট খোলার ব্যাপারে অভিভাবকদের সম্মতির প্রয়োজন।
আজকের সাদাকায়নে আমরা ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের কল্যাণে আমাদের দেশে সংস্কার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দায়িত্বশীলরা যাতে ‘সোশ্যাল মিডিয়া মিনিমাম এইজ বিল’ এর ন্যায় আইন করার মতো প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, আসুন নীরবে আমরা প্রার্থনা করি।
২০২৪ সালের শেষ কোর্স কোয়ান্টাম মেথড ৪৯৯ এম ব্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১৩-১৪-১৫-১৬ ডিসেম্বর। নতুনদের পাশাপাশি যারা এই বছর কোর্স রিপিট করেন নি তারা রিপিট করতে ভুলবেন না।
খতমে কামালিতে নিয়মিত অংশ নিন। পরম করুণাময়ের রহমতের ছায়াই হচ্ছে একজন বিশ্বাসীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়ের স্থল।
পরম করুণাময় আমাদের সহায় হোন। ভালো থাকুন। সবসময় ভালোর সাথে থাকুন।
খোদা হাফেজ। আসসালামু আলাইকুম। আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
[০৬ ডিসেম্বর ২০২৪ সাদাকায়নের জন্যে ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে গুরুজীর প্রদত্ত বক্তব্য]