বৃটেনের একজন নামজাদা সাইকোথেরাপিস্ট বলছেন, কমবয়সী তরুণ বা যুবকরা প্রচুর পরিমাণে অনলাইন পর্নোগ্রাফি দেখে তাদের যৌনস্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলছেন। নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি হসপিটালের অ্যাঞ্জেলা গ্রেগরি জানাচ্ছেন, ১৮-২৫ বয়সী পুরুষরা এখন এমন সব গুরুতর সমস্যা নিয়ে তাদের কাছে আসছেন যা মাত্র বছর দশেক আগেও এত কমবয়সী পুরুষদের মাঝে ছিল একেবারে বিরল।
আর এর মূলে আছে এন্তার পর্নোগ্রাফি। যার প্রভাবও হচ্ছে সুদূর প্রসারি। ডা. গ্রেগরির কথায় কেউ যদি নিজেকে এমনভাবে কন্ডিশনড করে ফেলে যে, মানসিকভাবে অত্যন্ত উত্তেজক সামগ্রী না পেলে তার যৌনচেতনা জাগে না, তাহলে নিজের যৌনসঙ্গীর সঙ্গে মিলনের সময় তার পক্ষে সাড়া দেয়াটা খুব মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়। কারো কারো ক্ষেত্রে তো কোনো সম্পর্ক গড়াই কঠিন হয়ে যায়। কারণ তারা সবসময় নতুন কোনো যৌন অভিজ্ঞতা বা যৌন উত্তেজনার সন্ধান করতে থাকে। আর যেহেতু এখন খুব অল্প বয়সেই বাচ্চারা অনলাইন পর্নোগ্রাফির নাগাল পেয়ে যায়, সেটা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও চরম ক্ষতি ডেকে আনে। বলছেন অ্যাঞ্জেলা গ্রেগরি।
তার কথায় এখন হার্ডকোর অনলাইন পর্নোগ্রাফির সঙ্গে প্রথম পরিচয়টা ঘটছে অনেক কম বয়সে। কমতে কমতে সেটা এখন ১০/১১ বছর বয়সে এসে ঠেকেছে। মানুষ যখন নিজের পর্নোগ্রাফি দেখা কিছুতেই ঠেকাতে পারছে না, তখন সেটা জটিল মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করছে। নিজের চেহারাটা ঐ পর্নোগ্রাফির নিরিখে দেখার মানসিকতা তৈরি হচ্ছে, তরুণরা নিজেদের বিচার করছে ঐ হার্ডকোর পর্নোগ্রাফির দৃষ্টিতে। তারা নিজেরাও ঠিক সেরকম হয়ে উঠতে চাইছে।
মাত্র এক প্রজন্ম আগেও এই পরিমাণে অনলাইন পর্নোগ্রাফির কোনো অস্তিত্ব ছিল না। কিন্তু এখন বহু দেশেই সেটা প্রায় কমবয়সীদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।
গলা মেলালেন মনোবিজ্ঞানী অংশুমান দাসও। বৃটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসেসে কর্মরত ছিলেন তিনি বহুবছর। তিনি বলেন, ক্ষতিটা কীভাবে হয়?
ড. দাস বলেন, সেক্সটা যতটা না সেক্স অর্গানের, তার চেয়ে বেশি ব্রেনের। brain is the biggest sex organ of the body. যৌন অনুভূতির পুরো বিষয়টা তো নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রেন থেকে!
উত্তেজনার মাত্রা কতটা হলে তার ইরেকশন হবে, পেনিট্রেশন হবে বা ইজাকুলেশন হবে, তার সবটারই আছে একটা মাত্রা। যা ব্রেন ঠিক করে।
এখন কেউ যদি ক্রমাগত পর্নোগ্রাফি দেখতে থাকে, ব্রেন তখন সেই মাত্রাটা অনেকটা উঁচু করে দেয়। আর এই মানুষটি যখন বাস্তবে তার স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক করতে যাচ্ছে, তখন তো ব্রেন সিগনাল পাঠাচ্ছে না। ফলে তার যৌনজীবন ব্যাহত হয়। কারণ ব্রেন তো তার স্টিমুলাসটা পাচ্ছে না। আর এটা শুধু তাকে না, তার সঙ্গীকেও অসুবিধায় ফেলছে। এবং দাম্পত্য সমস্যার পাশাপাশি তখন হতাশা, বিষণ্নতা বিচ্ছেদ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে, যা আমরা আমাদের চিকিৎসকজীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি।