1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
  2. [email protected] : adminbackup :
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন

সাতক্ষীরায় একই পরিবারের চার জনকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন!

  • সময় বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০
  • ৯৮৫ বার দেখা হয়েছে

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের চার জনকে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর একাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বুধবার (২১ অক্টোবর)  বিকালে ৫টায় সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডির অ্যাডিশনাল ডিআইজি ওমর ফারুক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, উপার্জন না থাকায় ভাই-ভাবির খাওয়ার খোটায় অপমানিত হয়ে ক্ষোভে জেদে এ ঘটনা ঘটিয়েছে রাহানুর। রিমান্ডে সে জানিয়েছে, কোমল পানীয়ের ভেতর ঘুমের ওষুধ বেশি করে দিয়ে ভাই-ভাবি ও বাচ্চাদের খাইয়ে সে রাতে ঘরে ঢুকে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

রাহানুরের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক বলেন, রাহানুর বেশ কিছু দিন ধরে কোনও কাজ করতো না। বিগত বেশ কিছু দিন তার কোনও আয় ছিল না। একইসঙ্গে ৯-১০ মাস আগে তার বউ চলে যায়। এজন্য সে মানসিকভাবে চাপে ছিল। সে বড় ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করতো। কিন্তু, আয় না থাকায় তার খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ভাবি সাবিনা খাতুন তাকে প্রায়ই গালমন্দ করতেন। ঠিকমতো খেতে দিতেন না। এতে তার মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্ম নেয়। একপর্যায়ে সে ভাবি সাবিনা খাতুনকে হত্যা করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ভাই-ভাবিকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটে রাহানুর। এরপর গত ১৪ অক্টোবর রাতে পাশের ফার্মেসি থেকে ঘুমের ওষুধ ডিসোপেন ও স্থানীয় মুদি দোকান থেকে স্পিড নামের একটি কোমল পানীয়ের বোতল কিনে আনে রাহানুর। তাতে ঘুমের ওষুধ মেশায়। এরপর ওই পানীয় তার ভাবি ও ভাইপো-ভাতিজিকে পান করতে দেয়। রাতে রাহানুর তার বড় ভাইয়ের ঘরে বসে টিভিতে আইপিএল খেলা দেখছিল। জানতো যে বড় ভাই এসে তাকে বকা দেবে। ঠিকই রাত দেড়টার দিকে বড় ভাই ঘের থেকে বাড়িতে এসে দেখে রাহানুর তার ঘরে বসে টিভি দেখছে। এ সময় বড় ভাই শাহিনুর টিভি দেখার জন্য রাহানুরকে বকাঝকা করে বলে, ‘তুই বিদ্যুৎ বিল দিসনে, টিভি দেখছিস কেন?’ এ সময় রাহানুর ভাইকে বলে, ‘এ মাসের বিদ্যুৎ বিল আমি দিয়ে দেবো, তুমি এই স্পিডটি খাও।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, রাগ করলেও ছোট ভাইয়ের দেওয়া ওই কোমল পানীয়টি বড় ভাই পান করেন। এরপর রাহানুর বের হয়ে যায়। এরপর রাতের কোনও একসময় সে ঘরের কার্নিশ বেয়ে বড় ভাইয়ের ঘরের ছাদে উঠে চিলেকোঠার দরজা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এরপর ঘুমন্ত অবস্থায় তার আপন ভাইকে গলা কেটে হত্যা করে। পরে পাশের ঘরে থাকা ভাবিকেও একইভাবে হত্যা করে। সন্তানদের ওপর তার কোনও ক্ষোভ ছিল না। কিন্তু, হত্যাকাণ্ডের সময় ভাবি জেগে উঠে চিৎকার দেয়। তার চিৎকারে ভাইপো-ভাতিজিও জেগে যায়। তখন সাক্ষী না রাখার পরিকল্পনায় ভাবির সঙ্গে দুই ভাতিজা- ভাতিজিকেও হত্যা করে রাহানুর। পরে সে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি বাড়ির পাশের বড় পুকুরে ফেলে দেয়।

অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুক আরও বলেন, রাহানুরের দেওয়া তথ্য মতে তাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে বুধবার পুকুর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও তোয়ালেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে সিআইডি সাতক্ষীরা অফিসের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোররাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে একই পরিবারের চার জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি ও মেয়ে তাসনিম। পরে কলারোয়ার ব্রজবক্সা গ্রামে নানার বাড়িতে চার জনকে দাফন করা হয়। রাতে শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নম্বর-১৪) দায়ের করেন। এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। এরপর নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রাহানুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি পুলিশ। রাহানুর রহমানকে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার এ মামলায় নিহত শাহিনুরের ঘের কর্মচারী ও দুই প্রতিবেশীসহ আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All Rights Reserved © rmgbdnews24.com