একই রাতে দুই বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিরুদ্ধে। শনিবার (৮ অক্টোবর) দিনগত রাত ১টার দিকে দর্শনা এবং রাত ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খৈতলা সীমান্তে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয় বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
চুয়াডাঙ্গা: রাত ১টার দিকে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার ছোট বলদিয়া সীমান্তের ৮২ নম্বর মেইন পিলারের কাছে বিএসএফের গুলিতে মুনতাজ হোসেন (৩২) নামে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার সকাল ১০টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে গেছে বিএসএফ।
নিহত মুনতাজ হোসেন ওরফে মোনাজাত দামুড়হুদা উপজেলার ছোট বলদিয়া গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। নিহতের মেজো ভাই ইন্তাজুল আলী ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম জাকারিয়া আলম বলেন, রাতে সীমান্তে মহিষ আনতে যান মুনতাজসহ কয়েকজন বাংলাদেশি। রাত ১টার দিকে সীমান্তের ৮২ নম্বর মেইন পিলারের অপর পাশ থেকে সাত-আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে ৫৪ বিএসএফ বিজয়পুর ক্যাম্পের সদস্যরা। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মুনতাজ। পরে সকালে তার মরদেহ নিয়ে যায় বিএসএফরা।
চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবি পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ মোহাম্মদ ইশতিয়াক বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমরা বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সাতক্ষীরা: রাত ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খৈতলা সীমান্তের মেইন পিলার ৯-এর কাছে বিএসএফের গুলিতে মো. আবু হাসান (২৭) নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খুলনায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
নিহত মো. আবু হাসান সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কুশখালি গ্রামের মক্তব মোড়ের মো. হায়দার আলীর ছেলে।
নিহতের বাবা কুশখালি গ্রামের হায়দার আলী বলেন, শনিবার (০৮ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে আমার কাছে কিছু টাকা চায় আবু হাসান। টাকা নেই জানালে সে পার্শ্ববর্তী বাজারে চায়ের দোকানে যাচ্ছে বলে চলে যায়। এরপর রাতে সে আর বাড়ি ফেরেনি। খৈতলা সীমান্তের শূন্য রেখায় ভারতীয় দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা হাসানকে গুলি করে ফেলে রেখে গেছে বলে রোববার ভোর ৫টার দিকে মোবাইল ফোনে খবর পাই। স্থানীয়রা হাসানকে উদ্ধার করে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার পথে ডুমুরিয়া নামক স্থানে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে হাসানের মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য খুলনা সার্জিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহত হাসানের শ্বশুর সদর উপজেলার ঘোনা মোল্যাপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, আবু হাসান ভারতীয় চোরাই পণ্য আনা নেওয়ার জন্য পাসিং ম্যান হিসেব কাজ করতেন। তার নামে পাঁচটি মাদকের মামলাও রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তাকে পুলিশ ধরার পর ছেড়েও দেয়। শনিবার রাতে হাসান ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনতে খৈতলা সীমান্তে অবস্থান করছিলেন। এসময় ভারতের দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসানের পেটের ডান দিকে গুলি লেগেছিল। বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আল মাহমুদ জানান, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসানের মৃত্যুর ব্যাপারে বিএসএফের কাছে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। পতাকা বৈঠক কালিয়ানি সীমান্তের শূন্য রেখায় অনুষ্ঠিত হবে।