আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রমতে, সজনে গাছে রয়েছে ৩০০ রকম রোগের প্রতিষেধক। আধুনিক বিজ্ঞানও এ ধারণাকে সমর্থন করে। সজনের ফুল পাতা বাঁকল ডাল শিকড় কষ/আঠা, অর্থাৎ প্রায় পুরোটাই পুষ্টিগুণে ভরপুর।
এক কথায় মরিঙ্গা বা সজনে পাতা হলো পুষ্টিগুণের আধার। জনসাধারণ্যে সজনের ভেষজগুণের গুণগান মূলত সজনে ডাটার কারণে। সজনে চচ্চড়ি বা ডাল-সজনের সমঝদার যে অনেকেই তার প্রধানতম কারণ সম্ভবত এটাই। কিন্তু আপনি কি জানেন, সজনে ডাটার চেয়েও অধিক পুষ্টিকর এর পাতা?
সমপরিমাণ সজনে পাতায় কমলার ৭ গুণ ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম ও ২ গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ আর কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম রয়েছে। এ-ছাড়াও রয়েছে ম্যাগনোসিয়াম, লৌহসহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান। কাজেই অপুষ্টি রোধে মরিঙ্গা হতে পারে অত্যন্ত কার্যকরী একটি উপায়।
ছয় মাস প্রতি বেলায় মরিঙ্গা খেলে Body Mass Index (BMI) বাড়ে বলে কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে। কাজেই উচ্চতা অনুপাতে যথেষ্ট হেলদি যারা নন তারা এটি সেবনে উপকার পেতে পারেন।
এক টেবিল-চামচ সজনে পাতার গুঁড়ায় ১-২ বছর বয়সী শিশুদের চাহিদার ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন-এ রয়েছে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একজন গর্ভবতী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।
স্তন্যদুগ্ধ কম যে নারীদের তারা মোরিঙ্গা সেবনে উপকার পেতে পারেন। কিছু কিছু গবেষণায় মাত্র এক সপ্তাহ মোরিঙ্গা সেবনে স্তন্যদাত্রী মায়েদের দুধের উৎপাদন বাড়তে দেখা গেছে।
৮ রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ আছে সজনে পাতায়। কাজেই ভেজিটারিয়ান তথা নিরামিষভোজীদের জন্যে প্রোটিন বা আমিষের সহজলভ্য ও উত্তম উৎস হলো সজনে পাতা।
অনেক সময়ই বাচ্চাদের পেট গ্যাসে ফেঁপে থাকতে দেখা যায়। সজনে পাতার রসের সাথে লবণ মিশিয়ে খেলে এই গ্যাস দূর হয়।
যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয় সজনে শাক খেলে। ক্ষতস্থান সারায় সজনে পাতার পেস্ট। প্রদাহ ও ব্যাথানাশেও এটি বেশ কার্যকর।
তবে যে দুটি বড় রোগে সজনে পাতা চমৎকার উপকারে আসে তা হলো ডায়বেটিস ও হৃদরোগ।
সজনে পাতার রসে ডায়বেটিস বা বহুমূত্র রোগ সারে। হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতেও কাজে লাগে সজনে পাতার রস।
অ্যাজমা বা হাঁপানির ক্ষেত্রেও মরিঙ্গা সেবনে যন্ত্রণার উপশম হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মৃদু বা মধ্যম মাত্রার অ্যাজমার ক্ষেত্রে দৈনিক দু’বেলা ৩ গ্রাম করে মরিঙ্গা তিন সপ্তাহ খেলে হাঁপানির তীব্রতা কমে এবং ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে।
আমাদের দেশে সজনে পাতা মূলত শাক হিসেবে খাওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে বেশ চল আছে এর। খেতেও বেশ সুস্বাদু।
তবে নিয়মিত শাকপাতার সংস্থান না থাকলে শুকনো সজনে পাতা পাউডার হিসেবে খেতে পারেন। বাজারে এখন মোরিঙ্গা পাউডার বেশ সহজলভ্য। দামটা অবশ্য একটু বেশি! তবে চাইলে আপনি নিজেই পাউডার বানিয়ে নিতে পারেন।
পরিমাণমতো সজনে পাতা ভালোভাবে শুঁকিয়ে নিন। এরপর চুলায় সামান্য ভেঁজে শিলপাটা, হামানদিস্তা বা ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করুন। শুকালেও মোরিঙ্গার পুষ্টিগুণ অনেকটাই অটুট থাকে বলে এই গুঁড়ো পরিষ্কার শুকনো কাঁচের বয়াম বা কন্টেইনারে সংরক্ষণ করে অনেকদিন খেতে পারবেন।
গ্রিন টি-র পাশাপাশি ‘মোরিঙ্গা টি’ এখন অনেকেরই পছন্দের একটি পানীয়। এটি বানানোও বেশ সহজ।
এক কাপ কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ মোরিঙ্গা পাউডার ভালোমতো গুলিয়ে নিন। ব্যস, হয়ে গেল মোরিঙ্গা টি!
এক কাপ মোরিঙ্গা টি, সাথে খবরের কাগজ- তাজা খবরের সাথে ঊষ্ণ মোরিঙ্গা টি হয়ে উঠুক আপনার প্রতিদিনের পান-অভ্যাস!
তথ্যসূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস), গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও WebMD