অনুভূতি যদি বলি অনেক বলা যাবে। কারণ কোয়ান্টাম কসমো স্কুলে কাটানো ১৪ বছর তো আর কম সময় নয়। আমার জীবনের অনেক গল্প এ স্কুলকে ঘিরেই। আমার বহু অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা আর ভালবাসার সবটাই একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। আর তা হলো, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন—কোয়ান্টাম কসমো স্কুল এন্ড কলেজ।
শিশু থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পার করি কোয়ান্টামে। এর মধ্যেই কারাতে, খো খো, কুংফু, জিমন্যাস্টিক্স, হ্যান্ডবল, টেবিল টেনিস, আর্চারি, নাচ, গান সবগুলোতেই অংশগ্রহণ করি দক্ষতার সাথে। যদি এই স্কুলে না পড়তাম তাহলে এই খেলাগুলোর সাথে পরিচিত হতাম না। বঞ্চিত হতাম কত বহুমুখী মেধাবিকাশের সুযোগ থেকে!
আমার মতে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ উন্নত চিন্তাধারার একটি নিঃস্বার্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে সহজেই একটি শিশু নিজেকে বিকশিত করতে পারে। কৈশোরও কেটেছে কোয়ান্টামের মমতা, ভালবাসা আর স্নেহের স্পর্শে। সত্যি আমার কখনো মনে হয় নি আমি আমার বাবা-মার থেকে মাইলের পর মাইল দূরে আছি।
আজও আমি কোয়ান্টামের সেই নিঃস্বার্থ স্নেহ, মমতা, ভালবাসার আঁচলে আছি। কারণ আমি চাই না আমার এই বন্ধনটাকে ছিন্ন করতে। আমি আজও সে-সব কর্মবীরদের স্মরণ করি যারা আমার মতো চার বছরের শিশুকে মা-বাবার মতো ভালবাসা দিয়ে আজ এমন অবস্থানে তুলে ধরেছেন।
আমার জন্ম পার্বত্য চট্টগ্রামে বান্দরবান জেলার রুমা থানার জঙ্গল আর পাহাড় ঘেরা এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্জুন পাড়াতে। এখানে তেমন শিক্ষার আলো পৌঁছাতে পারে নি। আর স্থানীয় বাসিন্দাদের কোনো যানবাহন ছাড়াই প্রায় আড়াই ঘণ্টা পায়ে হাঁটা পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হয় বাজার করতে অথবা বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ করতে। আজ আমি নিজেকে একজন গর্বিত পাহাড়ি সন্তান বলতে চাই। কারণ আমি বাংলাদেশের এক স্বনামধন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
স্কুল জীবন থেকেই দেশ নিয়ে ভাবতাম। তাই আমার ডায়েরি থেকে সে—সময়ে লেখা একটি কবিতা আজ তুলে দিলাম—
একটি পতাকা পড়ে আছে, সবুজে বিস্তৃত মাঠে;
তারই পাহারায় এক জনপদের, দিবস রাত কাটে।
পতাকাটি অচেনা নয়, লাল-সবুজের পতাকা;
যারই অর্জনে লেখা হয়ে গেছে, শত রক্তক্ষয়ীর কথা।
আমি পথিক হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি—
কেউ আসে নি পতাকা তুলতে,
নয় ব্যবসায়ী, নয় কেরানি, নয় কোনো অট্টালিকা হতে।
ব্যস্ত যদি তবে হায়! কেন আজ ভূপাতিত স্বাধীনতা?
ধিক্কার! তোমাদের এই কেমন মনুষ্যত্বের দীনতা?
অস্তিত্বহীন কবি আমি—
তোমাদের এই লাঞ্ছিত সমাজে,
তবুও এই স্বাধীনতার হেলায়, হৃদয় আমার কাঁদে।
গর্বিত এই স্বাধীনতার ইতিহাস, আমাদের অহংকার,
তবে কেন আজও শুনি আকাশে বাতাসে, তারই বেদনার হাহাকার?
আজও সাক্ষী হয়ে আছি, মুজিবের সেই জ্বালাময়ী ভাষণের;
স্বাধীন জনতা যখন চেয়েছিল, একটি পতাকা উত্তরণের।
অনেক অপেক্ষার প্রান্তরে এসে আমি, দেখেছি এক তরুণকে;
ললাটে তার কুঞ্চিত বেদনা আর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে এগিয়ে আসতে।
এসো হে তরুণ—
নত আমি তোমারই অভিবাদনে,
দুর্দমনীয় যৌবন শক্তির আবেগে তোমার, স্পর্শ ভূপাতিত নিশানে।
কর্মই তোমার উত্তম প্রেরণা আর দুর্মর পথ তোমার ধর্ম।
হে কর্মবীর,
হও কর্ণধার তুমি, আর উঠাও তোমার সত্যের বর্ম।
পরাজিত নয়নে চেয়ে আছে শত লক্ষ কোটি জনতা, তোমারি আগমনে।
হে তরুণ, তুমিই আগামীর পাঞ্জেরী হেতু,
মোরা শ্রদ্ধানত তোমারি অভিবাদনে।
[ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন থেকে ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘সব সম্ভব’ বই থেকে ]