1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০৫ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একসূত্রে গাঁথা: রাষ্ট্রপতি

  • সময় মঙ্গলবার, ১০ নভেম্বর, ২০২০
  • ৯৩৯ বার দেখা হয়েছে

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আলাদা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশকে জানতে হলে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে হবে, বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। এই দুই সত্তাকে আলাদাভাবে দেখার চেষ্টা যারা করেছে, তারা ব্যর্থ হয়েছে। আজকের বাস্তবতা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।’ তিনি বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে স্মারক বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।
মুজিববর্ষ উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রপতি। একই সঙ্গে এই বিশেষ অধিবেশন আয়োজনের জন্য স্পিকার এবং জাতীয় সংসদের সবাইকে ধন্যবাদ জানান। দেশবাসী ও দেশের বাইরে বসবাসরত সব প্রবাসীকে মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় উজ্জীবিত হতে পারে, সে জন্য সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একটি নাম নয়। বঙ্গবন্ধু একটি প্রতিষ্ঠান, একটি সত্তা, একটি ইতিহাস। জীবিত বঙ্গবন্ধুর মতোই অন্তরালের বঙ্গবন্ধু শক্তিশালী। যত দিন বাংলাদেশ থাকবে, বাঙালি থাকবে, এ দেশের জনগণ থাকবে, তত দিনই বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষের মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) বিশ্বকে করেছেন আলোকময়। তাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্যে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।’
দেশের সাধারণ মানুষকে যারা বিভ্রান্ত করে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের কবল থেকে আমরা যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, তাকে রক্ষা করতে হবে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্য। জনগণের ঐক্য, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য। যে ঐক্য একাত্তরে আমাদের এক করেছিল, সেই ঐক্যই গড়ে তুলতে হবে সাম্প্রদায়িকতা, অগণতান্ত্রিকতা, অসহিষ্ণুতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যারা বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পিত কাহিনি ও পরিস্থিতি বানিয়ে দেশের সরলপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করে দেশের শান্তি ও অগ্রগতির ধারাকে ব্যাহত করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই প্রতিষ্ঠিত হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, সার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন।”
আবদুল হামিদ বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ-২০২০’ উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের বিষয়। এটি আমার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অধিবেশনে জাতির পিতাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হব।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এক বিশাল হৃদয়ের মানুষ। নিজে স্বপ্ন দেখতেন এবং মানুষকে স্বপ্ন দেখাতেন। দেশের মানুষের প্রতি তাঁর আস্থা, ভালোবাসা ও বিশ্বাস ছিল অপরিসীম। নিজের জীবন উৎসর্গ করে বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে গেছেন। ঋণী করে গেছেন বাঙালি জাতিকে। মুজিববর্ষ পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন-কর্ম, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে। বঙ্গবন্ধুর জীবন-ভাবনা ও রাজনৈতিক দর্শনের মর্মার্থ সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ পালন একটি যথাযথ পদক্ষেপ।’
রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে ইতিহাস, ইতিহাসের পরম্পরা। তিনি নিজের সুখ-দুঃখের কথা না ভেবে অন্যকে নিয়ে ভাবতেন। সেই থেকে শুরু। জীবনের প্রতিটি ক্ষণে যেখানেই অন্যায়-অবিচার, শোষণ-নির্যাতন দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদে নেমে পড়েছেন। কখনো নিজের এবং পরিবারের গণ্ডির মধ্যে বাধা পড়েননি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও গেয়েছেন বাংলা, বাঙালি আর বাংলাদেশের জয়গান। ফাঁসির সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হচ্ছে জেনেও বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল ও অনড়। আজীবন বাংলা ও বাঙালিকে ভালোবেসে গেছেন, স্থান করে নিয়েছেন মানুষের মনের মণিকোঠায়।’
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তি ও পারিবারিক বন্ধন কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সব সময়ই বঙ্গবন্ধুকে তাঁর চলার পথে সাহস জুগিয়েছেন, বিপদে ভরসা দিয়েছেন। নিজের ও পরিবারের চেয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থকে বড় করে দেখেছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘‘সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের দিনকে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। একটি ভাষণ কিভাবে গোটা জাতিকে জাগিয়ে তোলে, স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উৎসাহিত করে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এর অনন্য উদাহরণ। এ ভাষণে বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতার ডাকই দেননি বরং মুক্তিযুদ্ধের রূপরেখা ও ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। এ ভাষণ শুধু বাঙালি জাতির জন্যই নয় বরং সারা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত-মুক্তিকামী মানুষের প্রেরণার উৎস।’’
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের স্মৃতি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘কনিষ্ঠ ও নবীন সদস্য হিসেবে গণপরিষদের অধিবেশনে অংশগ্রহণ ছিল আমার জন্য খুবই আগ্রহ ও আকর্ষণের। নিতান্ত নবীন সদস্য হিসেবে বয়োজ্যেষ্ঠ ও অভিজ্ঞ সদস্যদের কর্মকাণ্ড খুবই আগ্রহভরে প্রত্যক্ষ করতাম। পার্লামেন্টারিয়ান বঙ্গবন্ধু তখন ছিলেন আমার আগ্রহের একেবারে কেন্দ্রবিন্দুতে।’
আবদুল হামিদ বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর প্রধান অভীষ্ট হলো ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান, উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদায় উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় আসীন হওয়া। যেখানে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারেরও বেশি। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে ২০২১-২০৪১ মেয়াদে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশে উন্নীত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যাপক শিল্পায়ন, অর্থনীতি সুসংহতকরণ, নগরায়ণ, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, জ্বালানি বহুমুখীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ মেধাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ।”
বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন সমাপ্তির পথে। মেট্রো রেলের কাজ চলছে, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহু লেন টানেল নির্মাণের প্রথম টানেল সমাপ্ত হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশে রেল যোগাযোগব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর এবার ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মানের এক্সপ্রেস হাইওয়ের যুগে পা রাখল বাংলাদেশ, যা জাতির জন্য মুজিববর্ষের এক অনন্য উপহার।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকারের অন্যতম কৃতিত্ব হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখনো চলমান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ বিচার অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।’
বাংলাদেশের মানবিকতা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘১৬ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এ দেশে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও শুধু মানবিক বিবেচনায় পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে আসা প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সসম্মানে নিজ দেশে ফিরে যাক। জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশকে আমি এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি।’
রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে করোনা মহামারিতে বিশ্ব ও দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে করোনা মোকাবেলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ উল্লেখ করেন।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »