1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ :
ইফতার বিতরণ করলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা বাংলাদেশ আরএমজি প্রফেশনালস্ এর উদ্যোগে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে ঈদ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ- গাজীপুরে এতিম শিশুদের সাথে বিডিআরএমজিপি এফএনএফ ফাউন্ডেশনের ইফতার ও দোয়া মাহফিল গ্রীষ্মকাল আসছে : তীব্র গরমে সুস্থ থাকতে যা করবেন ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্পে কাঁপল তাইওয়ান, সুনামি সতর্কতা ঈদের আগে সব সেক্টরের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি এবি পার্টির সালমান খান এবার কি বচ্চন পরিবার নিয়ে মুখ খুলতে যাচ্ছেন ঐশ্বরিয়া? আমার ও দেশের ওপর অনেক বালা মুসিবত : ইউনূস লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন?

কেউ বলছিল না তিনি কবে মারা গেছেন

  • সময় শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০২১
  • ১১০১ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় ছিল ভদ্রলোকের নিজস্ব ফ্ল্যাট। স্ত্রীএক ছেলে ও এক মেয়েসহ সেই বিশালায়তন বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। সেখানেই নিজের বিছানায় মারা গেছেন করোনা উপসর্গে। বেশ উচ্চ বংশীয় পরিবারের সদস্য তিনি।

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

কোয়ান্টাম দাফন টিমের কাছে ফোন করেছেন তার স্ত্রী। জানালেনতার স্বামী মারা গেছেন তিন দিন আগে। কিন্তু নানাভাবে চেষ্টা করেও দাফনের কোনো ব্যবস্থা করতে পারেন নি তারা। কোয়ান্টামের ফোন নম্বরও অনেক কষ্টে জোগাড় করতে পেরেছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জানতে চাইলেনমৃতের পরিবার ডেথ সার্টিফিকেটের ব্যবস্থা করতে পারবে কিনা। পরিবার থেকে জানানো হলোতারা ব্যবস্থা করতে পারবেনতবে হাসপাতাল থেকে সেটা আনতে পারবেন না। বাসার বাইরে বের হওয়াটাই ছিল তাদের জন্যে আতঙ্কের ব্যাপার। লকডাউনের সময়টাতে তারা একেবারেই বের হন নি। প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটাও করেছেন অনলাইনে।

স্বেচ্ছাসেবীরা বললেনঠিক আছে। ডেথ সার্টিফিকেট তৈরি থাকলে তারাই সেটা নির্দিষ্ট হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসবেন বাসায়। কিন্তু তার স্ত্রী বেশ সন্দেহ নিয়ে প্রশ্ন করছেনস্বেচ্ছাসেবীরা কয়জন যাবেনস্বেচ্ছাসেবীরা পাঁচছয় জন যাবেন শুনে বললেনএত জন ঘরে ঢুকতে পারবেন নাশুধু একজন পারবেন। কথা বলতে বলতেই একপর্যায়ে তারা নিজেদের আশঙ্কা প্রকাশও করে ফেললেন—তাদের বাসায় অনেক টাকাপয়সা ধনসম্পদ। দাফনের নামে লোকজন গিয়ে যদি তাদের টাকাপয়সা সরিয়ে নেয়!

অবশেষে স্ত্রী যখন আশ্বস্ত হলেনতখন স্বেচ্ছাসেবীরা গেলেন। ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে তারা যখন বাসায় গেলেনবার বার কলিং বেল দিচ্ছেনকিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। যে নম্বর থেকে যোগাযোগ হয়েছিল সেটাতে ফোন করলে ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। এভাবে এক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। স্বেচ্ছাসেবীদের তখন দোদুল্যমান অবস্থাআসলেই এখানে কেউ মারা গিয়েছেন কিনা বা মারা গেলেও যেহেতু দরজা খুলছে না—তাই দাফন না করেই ফিরে যাবেন কিনা।

তখন স্বেচ্ছাসেকরা কোয়ান্টাম দাফন সমন্বয়কের কাছে ফোন করলেন জরুরি সিদ্ধান্তের জন্যে। সমন্বয়কের সিদ্ধান্তে তারা যোগাযোগ করলেন নিকটবর্তী থানার সাথে। একইসাথে তারা সেই বিল্ডিংয়ের দায়িত্বরত কর্মচারীদের জানালেন। ঘটনাচক্রে ওই একই বিল্ডিংয়ে থাকতেন পুলিশের একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তিনিও বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে এলেন স্বেচ্ছাসেবীদের সহায়তায়।

পুলিশ এসে দরজা খোলার ব্যবস্থা করলেন পুলিশি কায়দায়। ঘরে ঢুকে বিস্মিত হওয়ার অবস্থা। এটা কি কোনো বাসানাকি কোনো বড় ধরনের সুপারশপকারণ হেন কোনো সামগ্রী বাকি নেইযা সেই ফ্ল্যাটে জমা নেই। প্রচুর খাবারসহ সব ধরনের সামগ্রী মজুত করে রেখেছিলেন তারা লকডাউনের শুরুতেই।

বিস্ময়ের পালা এখানেই শেষ নয়। সব সামগ্রী মজুত থাকার পরও তারা অনলাইনে খাবার অর্ডার করতেন। সেসব খাবারের খালি প্যাকেট পড়ে আছে তিনচার স্তরের আবর্জনা হয়ে। তাদের পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে খাবারের খালি প্যাকেট আর প্যাকেট। সেসব থেকে ছড়াচ্ছে ভীষণ দুর্গন্ধ। এসব ময়লাআবর্জনা অপসারণের জন্যেও কেউ বের হন নিবাড়িটাকে একদিকে মনে হচ্ছিল একটি সুপারশপআবার অন্যদিকে মনে হচ্ছিল সিটি কর্পোরেশনের আবর্জনা ফেলার জায়গা। বিভৎস এক দৃশ্য সেখানে।

কাজে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবীদের জন্যে প্রতি পদে পদে ছিল কৌতূহল আর বিস্ময়। লাশ রাখা ছিল শয়নকক্ষে নিজ বিছানায়। সেই ঘরের দরজা খোলার পর স্বেচ্ছাসেবীরা গেলেন লাশের কাছে। তখন তারা দেখলেনপচন ধরেছে মৃতদেহে। কিলবিল করছে পোকা। চেহারা একেবারেই বিকৃত হয়ে গেছে। প্রচণ্ড দুর্গন্ধে ঘরে থাকাই বড় চ্যালেঞ্জ।

পুলিশ সদস্যরা দরজা খুলে দিয়েই চলে গিয়েছিলেন। এরপর স্বেচ্ছাসেবীরা দাফনের জন্যে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন। এজন্যে তারা নিচে এসে পিপিই পরে নিলেন। তারপর যখন সেই ফ্ল্যাটে ঢুকবেনতখন দেখলেন আবারো দরজা বন্ধকোনোভাবেই দরজা খুলছেন না পরিবারের লোকজন। পরে আবারো পুলিশকে ডাকা হলো। পুলিশ এসে দরজা খুলে দিলেন।

ভয়েআতঙ্কে জড়োসড়ো সেই পরিবারকে আশ্বস্ত করে স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ শুরু করেন। লাশ পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতে গিয়ে তারা দেখলেন মৃতদেহের অনেকগুলো অংশের মাংস খসে খসে পড়ছে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছেএটি তিন দিন আগের লাশ নয়। আল্লাহ ভালো জানেন তিনি কবে মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যরা কেউ মুখ খুলছেন না এ ব্যাপারে। তাদের কেউ গোরস্থানে যেতেও রাজি নয়।

যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন করে সেই লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট কবরস্থানে। পরিবারের কেউ আসেন নি জানাজায়দোয়ায় কিংবা কবরস্থানে। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে তার বাবার কবরটি চিনে নেয়ার প্রয়োজনও মনে করলেন না!

আপনজনের মমতায় স্বেচ্ছাসেবীরা সেই লাশ দাফন করেন। বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স কোনোকিছুই আপন হয় নাকিছুই যাবে না সঙ্গেমৃত্যুপরবর্তী পাথেয় শুধুই সৎকর্ম—গভীর এই উপলব্ধি নিয়ে ফিরে আসেন তারা। পেছনে থেকে গেল অভিজাত ভদ্রলোকের নিঃসঙ্গ দাফনের একটি গল্পএক নির্মম বাস্তবতা।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »