১৯৮৭ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২১,০০০ লোকের উপর পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে একবারের বেশি গির্জায় প্রার্থনায় যান তাদের গড়পড়তা আয়ু যারা প্রার্থনায় যান না, তাদের চাইতে সাত বছর বেশি।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!‘গড,ফেইথ এন্ড হেল্থ’ গ্রন্থের লেখক জেফ লেভিন এক গবেষণায় দেখেছেন, যে সমস্ত বয়স্ক ব্যক্তি নিজেদেরকে ‘ধার্মিক’ মনে করেন, তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা অন্যদের চাইতে অনেক কম।
ওপেন হার্ট সার্জারীর দু’মাস পর বেঁচে আছেন,এমন রোগীদের ওপর ১৯৯৫ সালে ডার্টমাউথ মেডিকেল স্কুল এক জরিপ চালিয়ে দেখেছে-যারা ধর্মে বিশ্বাস করেন, তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।
১৯৯৭ সালে ভারতে এক জরিপে দেখা গেছে যে সমস্ত হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিয়মিত ধর্ম চর্চা করেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০ ভাগ কম।
ডিউক ইউনিভার্সিটির গবেষকদল ১৯৮৭ সালে জর্জিয়া রাজ্যের ৪০০ লোকের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যাদের জীবনে ধর্মের প্রভাব রয়েছে এবং যারা নিয়মিত প্রার্থনায় যোগ দেন, তাদের উচ্চ রক্তচাপ হবার প্রবণতাও উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
ডিউক ইউনিভার্সিটি ১৯৯৯ সালে ৪,০০০ জন বয়স্ক ব্যক্তির উপর এক জরিপ চালায়। এতে তারা দেখে, নিয়মিত প্রার্থনাসভায় যোগদানকারীদের উৎকণ্ঠা এবং হতাশায় ভোগার হার খুব কম। এ সমস্ত গবেষণাধর্মী ফলাফল এতদিনকার আত্মিকতার নির্যাস বর্জিত পাশ্চাত্য চিকিৎসা সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু আসল যোগসূত্র কোথায়? অর্থাৎ বিশ্বাসীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকা কিংবা দ্রুত আরোগ্যলাভের ঘটনাকে বিজ্ঞান কী ভাবে ব্যাখ্যা করছে?
ডিউক ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকের মতে, একে কিছুটা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে এভাবে যে, নিয়মিত ধর্মচর্চাকারীদের মধ্যে ধূমপান, মাদকদ্রব্য গ্রহণ বা ঝুঁকিপূর্ণ যৌন সম্পর্কে জড়ানোর প্রবণতা কম এবং তারা মানসিকভাবে নিঃসঙ্গ নয়।
ডিউক ইউনিভার্সিটির আরেক দল গবেষকের মতে,ধার্মিক ব্যক্তিদের সুস্বাস্থ্যের কারণ হলো তারা তুলনামূলক কম মানসিক চাপে ভোগেন। মাসিক ‘হেল্থ এন্ড নিউট্রিশন’ সাময়িকীর অক্টোবর ২০০১ সংখ্যায় এক নিবন্ধে তাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপের প্রধান কারণ হলো মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং জমে থাকা ক্ষোভ। অন্যদিকে নিয়মিত ধর্মচর্চা একজন মানুষের মধ্যে কল্যাণ চিন্তা জাগ্রত করে, জীবন সম্পর্কে পরিতৃপ্তির অনুভূতি যোগায়, উৎকণ্ঠা কমায় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়াবার সামর্থ্য বাড়ায়।
এ প্রসঙ্গে আরো সুস্পষ্ট করে বলেছেন হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রফেসর এবং জনপ্রিয় বই ‘রিলাক্সেশন রেসপন্স’-এর লেখক হাবার্ট বেনসন। তিনি বলেন, প্রার্থনার বাণীগুলো বারবার উচ্চারণ এবং উদ্বিগ্ন মনকে শান্ত করতে তার ব্যবহারের ফলে মনের এক প্রশান্ত ও সমাহিত অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন টেনশনের ফলে সৃষ্ট শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনগুলো- যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, দ্রুত হৃদস্পন্দন বা শ্বাসপ্রশ্বাসের দ্রুতগতি, অশিথিল দৈহিক ভঙ্গি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি সবগুলোই ভালোর দিকে মোড় নেয় এবং সুস্থতা বিরাজ করে।
তবে মনোবিজ্ঞানী মার্টিন জোনস এবং আরও অনেকের মতে, স্বাস্থ্যের উপর ধর্মবিশ্বাসের এই ইতিবাচক প্রভাবকে বিজ্ঞানের মাধ্যমে যে ব্যাখ্যা করতেই হবে, এমন নয়। তারা বলেন, এমন অনেক ওষুধ রয়েছে যেগুলো কিভাবে কাজ করে তা আমাদের না জানলেও চলে। আমরা শুধু তার ফল পেয়েই সন্তুষ্ট থাকি। ঠিক একইভাবে কেউ যখন তার বিশ্বাসের মাধ্যমে সুস্থ হতে পারে তখন কেন আমরা তা মেনে নেবো না? আসলে বিশ্বাস খুবই শক্তিশালী এক কার্যকারক। আর নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটি কাজ করে ‘প্লাসিবো ইফেক্ট’ হিসেবে-বলেন তিনি।
ড. জোন্স নিজেও ক্যান্সার থেকে নিরাময় লাভ করেছেন। তার ভাষায় প্রতিটি রোগের আছে শারীরিক ভিত্তি। তবে লক্ষণীয় হলো,এক পর্যায়ে তা আবেগের ভিত্তি পায়। তারপর বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় এবং সবশেষে তা আধ্যাত্মিকতার আশ্রয় নেয়। তাই শুধু রোগের নিরাময় নয়,প্রয়োজন একজন রোগীর সর্বময় অস্তিত্বের নিরাময়,যা শুধু ওষুধে সম্ভব নয়।
এই প্রয়োজনের প্রতি সাড়া দিতেই ডাক্তাররা এখন তাই বিশ্বাস এবং নিরাময় সংশ্লিষ্ট আলোচনায় বেশি মাত্রায় আগ্রহী হচ্ছেন। আধ্যাত্মিকতার উপর কোর্স আছে-এমন মেডিকেল স্কুলের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯২ সালে যেখানে ছিল হাতে গোনা, সেখানে এখন ৫০ থেকে ১২৫টি মেডিকেল স্কুলে নিরাময়ের ক্ষেত্রে আধ্যাত্মিকতা ব্যবহারের পদ্ধতি শেখানো হয়।
তাই আমরা বলতে পারি, বিশ্বাসকে নিরাময় প্রক্রিয়ার শক্তিশালী পরিপূরক হিসেবে এই স্বীকৃতি দান নিঃসন্দেহে পাশ্চাত্যের এক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। এর মাধ্যমে প্রাচ্য হয়তো তার হাজার বছরের লালিত ধর্ম-বিশ্বাসের মাঝে নতুন করে খুঁজবে ভালো থাকার সূত্র।