1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৬ অপরাহ্ন

ইতিহাসে জুন ৫-বাংলাদেশি পপসঙ্গীত শিল্পী আজম খান এর মৃত্যুদিন  

  • সময় শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
  • ৯৮৬ বার দেখা হয়েছে

ইতিহাসে জুন ৫

বাংলাদেশি পপসঙ্গীত শিল্পী আজম খান এর মৃত্যুদিন

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

 

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৫৬তম (অধিবর্ষে ১৫৭তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৬৬১ : আইজ্যাক নিউটন কেমব্রিজের টিনিটি কলেজে ভর্তি হন।
১৯৭২ : স্টকহোম বৈঠকে প্রতিবছর এই দিনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৬ : বিজিবির প্রথম নারী সদস্যদের পথচলা শুরু।

জন্ম

১৮৬৫ : সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, ভারতে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ ।
১৮৯৮ : ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকা, স্পেনীয় কবি নাট্যকার ও নাট্য পরিচালক।

মৃত্যু

১৯১০ : মার্কিন ছোট গল্পকার ও হেনরি
১৯৯৬ : সারা ভারতে আধুনিক রীতিতে সাক্ষরতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সত্যেন্দ্রনাথ মৈত্র
২০০৪ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগন
২০১১ : বাংলাদেশি পপসঙ্গীত শিল্পী আজম খান

দিবস

বিশ্ব পরিবেশ দিবস

আজম খান

আজম খান ছিলেন বাংলাদেশি পপসম্রাট। বীর মুক্তিযোদ্ধা। পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। তিনি অভিনেতা, ক্রিকেটার এবং বিজ্ঞাপনের মডেলও ছিলেন। আজম খান নামেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। তার গানের বিশেষত্ব ছিল পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয়ের সংযোজন ও পরিবেশনার স্বতন্ত্র রীতি।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর সরকারি কলোনিতে। বাবা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ও মা জোবেদা খাতুন। বাবা সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে আজম খানের ছেলেবেলা কাটে আজিমপুরের ১০ নম্বর সরকারি কোয়ার্টারে।

আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে শিশু শ্রেণিতে তার শিক্ষা জীবনের শুরু। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানেই বসতি তাদের। কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হন। এরপর ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি।

মুক্তিযুদ্ধে আজম খান

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকেই আজম খান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালে সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাবেন তিনি। মাকে কথাটা বলতেই মা বললেন বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্যে। ভয়ে ভয়ে বাবার কাছে অনুমতি চাইলেন আজম। কথাটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন তার বাবা। তিনি ভেবেছিলেন বাবা হয়তো ‘না’ বলবেন। কিন্তু আজম খানকে অবাক করে দিয়ে তার বাবা বললেন, ‘যুদ্ধে যাচ্ছিস যা, দেশ স্বাধীন না করে ফিরবি না।’ নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আজম খান।

কয়েকজন বন্ধু মিলে আজম খান বেরিয়ে পড়লেন বাড়ি থেকে। প্রথমে কুমিল্লা, তারপর সেখান থেকে হেঁটে আগরতলা। আগরতলা থেকে মেঘালয়ে গিয়ে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে ২ নম্বর সেক্টরে যোগ দেন। সেখানে দুই মাস প্রশিক্ষণ শেষে সম্মুখযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল কুমিল্লার সালদায়। সফলভাবে সেই অপারেশন সম্পন্ন করার পর সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ তাকে ঢাকায় গেরিলা অপারেশন পরিচালনার জন্যে সেকশন কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। গুলশান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় তারা বেশ কয়েকটি দুঃসাহসী অপারেশন পরিচালনা করে পাকিস্তান বাহিনীর ঘুম হারাম করে দেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘অপারেশন তিতাস’। এর মূল লক্ষ্য ছিল ঢাকা শহরের গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করে দেওয়া।

ক্যাম্পে থাকাকালীন আজম খান বাটি আর চামচকে বাদ্যযন্ত্র বানিয়ে গান করতেন। আর এর মধ্য দিয়ে চাঙা রাখতেন মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল।

১৯৭২ সালে তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ড গঠন করেন। তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ (লাকী আখন্দ ও হ্যাপী আখন্দ) ভ্রাতৃদ্বয় দেশব্যাপী সঙ্গীতের জগতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেক ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকালিস্ট করে অনুষ্ঠান করেন। ১৯৭২ সালে বিটিভিতে সেই অনুষ্ঠানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দু’টি সরাসরি প্রচার হয়। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় গান দুটি। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের দল।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বাংলাদেশ’ (রেললাইনের ওই বস্তিতে) শিরোনামের গান গেয়ে হৈ-চৈ ফেলে দেন। তার পাড়ার বন্ধু ছিলেন ফিরোজ সাঁই। পরবর্তীকালে তার মাধ্যমে পরিচিত হন ফকির আলমগীর, ফেরদৌস ওয়াহিদ, পিলু মমতাজের সাথে। এক সাথে বেশ কয়েকটা জনপ্রিয় গান করেন তারা।

‘এক যুগ’ নামে তার প্রথম অডিও অ্যালবাম ক্যাসেট প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। ১৭টি একক, ডুয়েট ও মিশ্রসহ সব মিলিয়ে তার গানের অ্যালবাম ২৫টি। তার প্রথম সিডি বের হয় ১৯৯৯ সালের ৩ মে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের প্রযোজনায়। আজমের উল্লেখযোগ্য অ্যালবামের মধ্যে আছে দিদি মা, বাংলাদেশ, কেউ নাই আমার, অনামিকা, কিছু চাওয়া, নীল নয়নতা ইত্যাদি। জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (রেল লাইনের ওই বস্তিতে), ওরে সালেকা ওরে মালেকা, আলাল ও দুলাল, অনামিকা, অভিমানী, আসি আসি বলে তুমি ইত্যাদি।

অন্যান্য প্রতিভা

তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটেও অংশ নেন। তিনি ভালো সাঁতারু ছিলেন এবং নতুন সাঁতারুদেরকে মোশারফ হোসেন জাতীয় সুইমিং পুলে সপ্তাহে ৬ দিন সাঁতার শেখাতেন। ২০০৩ সালে তিনি ‘গডফাদার’ নামক একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবে কাজ করেন।

অনেকেই আজম খানকে বাংলার বব ডিলান হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ষাটের দশকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বব ডিলানের গান যেভাবে মুক্তিকামী মানুষকে সাহস জুগিয়েছে, তেমনি করে আজম খানের গানও অনুপ্রাণিত করেছে এ দেশের অসংখ্য তরুণ-তরুণীকে। সংগীতের ওপর তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, কিংবা কারও কাছে সে অর্থে গান শেখেননি তিনি। অথচ তিনিই বাংলা পপ সংগীতের মুকুটহীন সম্রাট।

রণাঙ্গন দাপানো, গানের মঞ্চ কাঁপানো বাংলা পপ গানের এই গুরু ছিলেন প্রচারবিমুখ, নির্মোহ আর বিনয়ী। মাটির মানুষ বলতে যা বোঝায়, আজম খান ছিলেন তেমনি এক ব্যক্তিত্ব। তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন ভক্তকুলের হৃদয়ে তার কালজয়ী গানের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে।

পপসম্রাট আজম খান দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন সকালে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »