এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ ওয়াকফ করা ছিল আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ এবং বলা যেতে পারে যে, আমাদের ঐতিহ্য হচ্ছে দান। এবং আমাদের পূর্বপুরুষরা তারা সবসময় দান করতেন। শুধু দুর্ভিক্ষের সময় নয় সাধারণ সময়েও।
করুণাময়ের শুকরিয়া আদায় করি যে, আমরা জাতি হিসেবে দাতার জাতি।
আমাদের এখনকার ধনিক প্রজন্ম একটা বড় অংশ দেশের টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হয়েছে। কিন্তু হাজার বছর ধরে আমাদের উচ্চবিত্ত মানুষ তারা যথার্থ অর্থেই দাতা ছিলেন।
এবং একটা সময় ছিল ইংরেজরা আসার আগে এই বাংলার এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ ছিল ওয়াকফ সম্পদ। যা মুসলমানরা দাতব্য কাজের জন্যে ওয়াকফ করে গিয়েছিলেন এবং নিজের সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ওয়াকফ করা- এটা হাজার বছর ধরে তাদের ঐতিহ্যের অংশ ছিল। অবশ্য ইংরেজরা এই ওয়াকফ সম্পত্তি পুরোটাই বাজেয়াপ্ত করে ফেলে এই বাংলা দখল করা পরে।
আমাদের দেশে দেবোত্তর সম্পত্তিরও কোনো অভাব ছিল না। দেশের আনাচে-কানাচে গড়ে ওঠা স্কুল-কলেজের একটা বড় অংশ দানকৃত সম্পত্তির ওপরে গড়ে উঠেছে গত দু’শ বছর ধরে।
এবং ইংরেজ আমলে যখন দুর্ভিক্ষ হয়েছে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বিত্তবানরা লঙ্গরখানা করেছেন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে।
সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যদি দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায় তো এই সম্পদ আমার কোনো প্রয়োজন নাই- ‘হাজী মহসিন’
এবং হাজী মহসিন সেই ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে যখন বাংলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা যায় সেই সময়ে তার সম্পদের কোটি টাকা ব্যয় করেছিলেন লঙ্গরখানার পেছনে।
একসময় তার ম্যানেজাররা বলছিল যে, হাজী সাহেব এইভাবে যদি লঙ্গরখানা খুলতে থাকেন তাহলে আপনার সম্পদ বলে তো আর কিছু থাকবে না।
হাজী মহসিন বিনয়ের সাথে বলেছিলেন, আমার সম্পদ থাকা সত্ত্বেও যদি আমার দেশের মানুষ না খেয়ে মারা যায় তো এই সম্পদের ওপর আল্লাহর লানত পড়ুক। এই সম্পদে আমার কোনো প্রয়োজন নাই।