এজন্যেই পরিচিত পরিমণ্ডলে বিয়ে হওয়া উচিত, যেখানে পারস্পরিক জানাশোনা রয়েছে এবং সেটা অবশ্যই সম-সামাজিক ও সম-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। সাধারণত বিয়েতে ছেলেপক্ষের প্রত্যাশা থাকে মেয়ে ফর্সা, সুন্দরী এবং কমবয়সী হতে হবে এবং মেয়ের বাবার বাড়ি-গাড়ি, ব্যাংক-ব্যালেন্স থাকতে হবে, যাতে যৌতুক পাওয়া যায়। আবার মেয়েপক্ষ চায় ছেলেকে ভালো বেতনের চাকুরে অথবা পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ী অথবা বিদেশে থাকতে হবে, ভালো পাত্র হওয়ার জন্যে এটুকুই যথেষ্ট। সে মদ্যপ, বদমেজাজী বা লম্পট কি না বা বিদেশে সে কী করে, তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজনও তারা মনে করেন না। এমনকি বিয়ের পর মেয়ের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে কি না সে-সবও তারা ভাবতে চান না।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!ফর্সা এবং সুন্দরের খোঁজে মরিয়া হলে পরিণতি কত করুণ হয় তার একটি ঘটনা-
এক ছেলে এবং তার অভিভাবক ফর্সা সুন্দরী পাত্রী খুঁজছে। অনেক পাত্রী দেখা হলো। অবশেষে একজনকে পছন্দ হলো। পাত্রীর অভিভাবকরা তাকে সাজানোর জন্যে অনেক অর্থব্যয় করে ঢাকা শহরের সবচেয়ে নামী বিউটিশিয়ান ভাড়া করল। পাত্রপক্ষ একবার দেখেই পাত্রী পছন্দ করে ফেলল। কথাবার্তা পাকা, দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গেল। পাত্রীপক্ষ কৌশলে বিয়ের আগে দেখাদেখির আর কোনো সুযোগ দিল না।
বিয়ে হয়ে গেল। মেয়ে যখন রাতে মেকাপ তুলল, সবার তো চক্ষু চড়কগাছ! এ কী দেখছি! নিশ্চয়ই কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়েছে, আমরা তো এই মেয়ে দেখি নি। তখন ফাঁস হলো আসল ব্যাপার। তাদের ভাষায় মেয়ে ‘সুন্দর’ ছিল না বলেই বিয়ের আগে তারা আর দেখাদেখির সুযোগ দেয় নি। এদিকে ফর্সা ও সুন্দরের জন্যে মরিয়া পাত্রপক্ষ কনেকে দেখে হতাশ হলো। প্রত্যাশা ও বাস্তবতার ব্যবধানের করুণ সমাপ্তি হলো বিয়েটি ভেঙে গিয়ে।
এখানে পাত্রপক্ষের ভুল ছিল, তারা বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং চাকচিক্যকে গুরুত্ব দিয়েছে। আর পাত্রীপক্ষ বিয়ের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্কের শুরুতেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে, যা আসলে অপরাধ।
মনে রাখতে হবে, বিয়ে একটি চুক্তি। এটি হতে হবে সহজ সত্যের ওপর। অনেক সময় দেখা যায়, মা-বাবা তার মাদকাসক্ত, মানসিক রোগী বা বখাটে ছেলের দোষ গোপন করে একটি ভালো মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেন। চিন্তা করেন, এতে ছেলেটি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু সিনেমায় এমনটি হলেও বাস্তবে কোনো স্ত্রী তার বখাটে স্বামীকে ভালো করতে পারে না। উল্টো স্ত্রীর জীবনই বিষিয়ে ওঠে। আবার কখনো কখনো মেয়ের মা-বাবাও আগের প্রেম, বিয়ে বা কোনো রোগের কথা গোপন রেখে মেয়েকে বিয়ে দেন। আগে বিয়ে হয়েছিল, এটা কোনো দোষ নয়। কিন্তু এ ধরনের তথ্য গোপন করে বিয়ে দিলে তার পরিণতি ভালো হয় না। এটা শুধু অবিদ্যা নয়, অপরাধও।
তাই অযৌক্তিক প্রত্যাশা করবেন না। পরিচিত পরিমণ্ডল এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমতার বিষয়টি মাথায় রাখুন। সঠিকভাবে খোঁজখবর নিন। তাহলে অ্যারেঞ্জড বিয়ে হলেও অনিশ্চয়তাকে এড়াতে পারবেন।