বাংলাদেশি অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক আব্দুল্লাহ আল মামুন এর জন্মদিন
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ১৯৪তম (অধিবর্ষে ১৯৫তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।
১৭১৩ : গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব চুক্তি স্বাক্ষর।
১৭৭২ : ক্যাপ্টেন জেমস কুক তার দ্বিতীয় অভিযান শুরু করেন।
১৮৩২ : হেনরি স্কুলক্র্যাফট মিনেসোটায় মিসিসিপি নদীর উৎস আবিষ্কার করেন।
১৯৭৩ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় মরক্কো।
১৯০০ : ছবি বিশ্বাস, বাংলা নাট্যমঞ্চ এবং চলচ্চিত্রের বিখ্যাত বাঙালি অভিনেতা।
১৯৩৪ : ওলে সোয়েনকা, সাহিত্যে নোবেলজয়ী একজন নাইজেরীয় নাট্যকার ও কবি।
১৯৪২ : আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাংলাদেশি অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং প্রযোজক।
১৯২১ : নোবেলজয়ী ফরাসি-লুক্সেমবার্গীয় পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক গাব্রিয়েল লিপমান।
১৯৬৯ : বাংলাদেশি বহুভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।
১৯৯৫ : ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী।
২০০৩ : বাংলাদেশি কৌতুক অভিনেতা দিলদার।
২০১৪ : নোবেল পুরস্কার বিজয়ী দক্ষিণ আফ্রিকান সাহিত্যিক, রাজনৈতিক কর্মী এবং বর্ণবাদবিরোধী নেত্রী নাডিন গর্ডিমার।
২০২০ : বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা, যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল।
আব্দুল্লাহ আল মামুন ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ বাংলাদেশি অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক, চলচ্চিত্র পরিচালক। তিনি একদিকে নিজের রচিত মৌলিক নাটকের নির্দেশনাসহ অভিনয় করেছেন, অন্যদিকে অন্যের রচিত ও নির্দেশিত নাটকেও অভিনয় করেছেন। এর বাইরে বাংলাদেশের মঞ্চনাটকের ইতিহাসে আবদুল্লাহ আল মামুনের আরেকটি বড় অবদান হচ্ছে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ শীর্ষক কাব্যনাটকের নির্দেশনা ও অভিনয়। ১৯৭৬ সালে মঞ্চস্থ এই নাটকটিই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মৌলিক কাব্যনাট্যের প্রযোজনা।
জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১৩ জুলাই জামালপুর জেলায়। বাবা অধ্যক্ষ আবদুল কুদ্দুস এবং মা ফাতেমা খাতুন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (১৯৬৪) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ছাত্রজীবন থেকেই নাট্য রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। তিনি তার অভিনয় জীবনে চাষি থেকে শুরু করে যুবক, নেতা, সেনাপতি, মাতবর, বাবা, শিক্ষক, ব্যারিস্টার, নায়ক, বাউল, ফকির, হাজী, ব্যাপারী, ব্যবসায়ী, তাতারি ইত্যাদি স্বদেশীয় চরিত্রের পাশাপাশি ওথেলো নাটকে ইয়াগো, আন্তিগোনে নাটকে ক্রেয়ন ইত্যাদি ভিন্নদেশীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। সঙ্গত কারণেই তার নাটকে বাংলাদেশের সমসাময়িক পারিবারিক, সামাজিক ও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিচিত্র পেশাজীবী মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের কথা উঠে এসেছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত গ্রন্থাকারে প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ নাটকগুলোর মধ্যে সুবচন নির্বাসনে, এখনও দুঃসময়, এবার ধরা দাও, শপথ, সেনাপতি, অরক্ষিত মতিঝিল, ক্রস রোডে ক্রসফায়ার, শাহজাদীর কালো নেকাব, আয়নার বন্ধুর মুখ, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, দূরপাল্লা, তৃতীয় পুরুষ, আমাদের সন্তানেরা, কোকিলারা, উজান পাবন, বিবিসাব ও কুরসী, দ্যাশের মানুষ, স্পর্ধা, মেরাজ ফকিরের মা, মাইক মাস্টার, মেহেরজান আরেকবার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আবদুল্লাহ আল মামুন রচিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে মানব তোমার সারাজীবন, আহ্ দেবদাস, তাহাদের যৌবনকাল, হায় পার্বতী, এই চুনীলাল, গুন্ডাপান্ডার বাবা, , খলনায়ক ইত্যাদি।
তিনি ‘আমার আমি’ নামে একটি আত্মচরিত এবং ম্যানহাটান নামে একটি ভ্রমণ কাহিনীও রচনা করেন। তাছাড়া নাট্যাভিনেতাদের জন্যে তার অভিনয় (প্রথম খণ্ড) নামে একটি শিক্ষামূলক গ্রন্থ রয়েছে।
টিভি প্রযোজক, চলচ্চিত্রকার, নাট্যশিক্ষক, ঔপন্যাসিক ও সংগঠক হিসেবে তাঁর অসামান্য খ্যাতি রয়েছে। চলচ্চিত্র পরিচালনাতেও আবদুল্লাহ আল মামুন কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের সুস্থধারার শিল্পসম্মত চলচ্চিত্র পরিচালনায় জীবনের শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র- সারেং বউ, সখী তুমি কার, এখনই সময়, দুই জীবন, দমকা, জনমদুখী, বিহঙ্গ ইত্যাদি। তাছাড়া ফেরদৌসী মজুমদার: জীবন ও অভিনয় শিরোনামে তিনি একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন শিল্প ও সাহিত্যে অবদানের জন্যে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলা একাডেমী পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক পুরস্কার। এছাড়াও টেলিভিশন নাটক রচনা ও পরিচালনার জন্য প্রথম জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দুই বার সেরা পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি মুনীর চৌধুরী সন্মাননাও লাভ করেন।
পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বিপক্ষে নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন জীবনভর তার নাট্য রচনা অব্যাহত রাখেন। ২০০৮ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন নাট্যামোদী মানুষের প্রিয় এই ব্যক্তিত্ব।
সূত্র: সংগৃহীত