1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৫০ অপরাহ্ন

কোরবানির ঈদে মুক্ত থাকুন অশুদ্ধাচার ও ভার্চুয়াল ভাইরাস আসক্তি থেকে

  • সময় রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১
  • ১১২৭ বার দেখা হয়েছে

কোরবানির ঈদে মুক্ত থাকুন অশুদ্ধাচার ও ভার্চুয়াল ভাইরাস আসক্তি থেকে

– ভাই, কত (টাকা) দিয়ে কিনলেন?

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি ফেরার পথে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হন নি এমন মানুষ বিরল! চলতি পথে যিনিই সামনে পড়ছেন সাগ্রহে দাম জানতে চাইছেন, ক্রেতাও সমুৎসাহে দাম বলছেন- ঈদুল আজহার প্রাক্কালে অতি পরিচিত দৃশ্য এটি। তবে কোরবানির পশুর দাম জিজ্ঞেস করা যে একটি অশুদ্ধাচার, তা কি আমরা জানি?

কেন এটি অশুদ্ধাচার?

আসলে কোরবানির পশুর কোনো দাম হয় না। কারণ কোরবানির পশু কোনো পণ্য নয়। এটি স্রষ্টার নির্দেশ পালনের একটি অনুষঙ্গ মাত্র। তাই কোরবানির পশুর দাম জিজ্ঞেস করতে নেই।

তবে কেউ যদি আপনার কাছে দাম জিজ্ঞেস করে তাহলে উত্তেজিত বা বিরক্ত হবেন না। প্রশ্নকর্তাকে সবিনয়ে বলুন, ‘আল্লাহ যা সামর্থ্য দিয়েছেন তার মধ্যেই কেনার চেষ্টা করেছি!’

কোরবানির আরো কিছু শুদ্ধাচার

পালনীয়-

  • কোরবানির গোশত যথাযথভাবে বিতরণ,
  • রক্ত ও বর্জ্য নিজ উদ্যোগে পরিষ্কার করা বা কর্তৃপক্ষের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে যথাসম্ভব সাহায্য করা।

বর্জনীয়-

  • ‘আমি … টাকা দিয়ে কোরবানি দিলাম’–নিজেকে জাহির করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের কথা বলা,
  • কেনার পর বাজারদর যাচাই করে এ নিয়ে অহেতুক আলাপে লিপ্ত হওয়া; ‘দামে ঠকে গেছি’-এ ধরনের আফসোস করা,
  • পশুর দাম ও আকার নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা,
  • গোশতের ওজন ও পরিমাণ নিয়ে কথা বলা,
  • পশুর সাথে সেলফি তোলা ও তা ফেসবুকে পোস্ট করা,
  • কয়দিন পর কোরবানি করব–এই ভেবে কোরবানির পশুকে অযত্নে-অবহেলায়-অনাহারে রাখা।

‘সবচেয়ে বড় গরু’ কেনার অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে আসুন

কোরবানির ঈদ এলেই এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে দেখা যায় ‘বিরাট গরু’ কেনার প্রতিযোগিতা। প্রতাপশালী ধনাঢ্য লোকেরা ১৫/২০/২৫ লাখ টাকা দামের বিশাল সাইজের গরু কিনে খবরের শিরোনাম হতে চান, যা একেবারেই অনুচিত।

কয়েকটি হাদিসের পর্যালোচনামতে, কোরবানির পশুর কিছু নূন্যতম বৈশিষ্ট থাকতে হবে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছর, গরু-মহিষ ২ বছর এবং উট ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। সেই সাথে হতে হবে নীরোগ সুস্থ-সবল।

বড় আকারের পশু কোরবানিতে বাধা নেই। তবে শর্ত হলো, বড় গরু কেনার মধ্যে লোক দেখানোর মানসিকতা যেন না থাকে।

মনে রাখা দরকার- কেন কোরবানি দেই, দিতে হয়!

আসলে কোরবানি কবুল হওয়ার শর্ত পশুর আকার নয়, মূল বিষয় হলো নিয়ত। মানে আভিজাত্য প্রকাশ, লোক দেখানো কিংবা মাংস খাওয়া নয়, কোরবানির মূল উদ্দেশ্য হতে হবে স্রষ্টা-সচেতনতা।

সূরা হজে আল্লাহ্‌ বলেছেন,

আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে কোরবানিকে ইবাদতের অংশ করেছি। (আয়াত ৩৪) (কিন্তু মনে রেখো) কোরবানির মাংস বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ-সচেতনতা। (আয়াত ৩৭)

‘অনলাইনে কোরবানি’- সহীহ, না ভুল?

কয়েক বছর যাবত অনলাইনে কোরবানি যেন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এভাবে কোরবানি কতটুকু শরিয়তসম্মত তা নিয়ে।

কোরবানির পশুর বয়স ও শারীরিক বৈশিষ্ট সংক্রান্ত বিধানগুলো একটু আগেই পড়েছেন। আর বোখারী শরীফের একটি হাদিসমতে, নবীজী (স) কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করতেন। অনলাইনে আপনার নামে যে পশুটি কোরবানি হবে, না আপনি তার বৈশিষ্টগুলো সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছেন, না পারছেন নবীজীর (স) দেখানো পদ্ধতিটি অনুসরণ করে কোরবানি করতে।

বলতে পারেন, মক্কায় হজের সময়ও তো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোরবানি হয়! আসলে হজের সময় ২০/২৫ লাখ হাজীর পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে কোরবানি কার্যত অসম্ভব একটি ব্যাপার। এ-কারণেই সেখানে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কিন্তু দেশে অনলাইনের নামে যে কী কোরবানি হবে, এক গরু কতজনের নামে কোরবানি হবে, কার মাংস কার কাছে যাবে- এগুলো আমাদের পক্ষে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব না। আর অনলাইনে কোরবানির পশুর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ হিসাব করে সেটার ওজন এবং কতটা মাংস পাওয়া যাবে- স্রেফ এই বিবেচনায় দরদাম করে পশু ক্রয়ে কোরবানি ব্যাপারটা ‘স্রষ্টার সন্তুষ্টির নিয়তে ত্যাগ’ থেকে পর্যবসিত হচ্ছে স্রেফ ‘মাংস আহরণে!’

ভার্চুয়াল ভাইরাসে নয়, ঈদ কাটুক পরিবার-পরিজনের সাথে একাত্মায়নে

ঈদ পরিবারের সদস্যদের একাত্ম হওয়ার সুযোগ করে দেয়। তবে এই একাত্ম হওয়া মানে কিন্তু কেবল পাশে বসে থাকা নয়।

অনেক পরিবারেই দেখা যায়, দূর দূরান্তে থাকা সদস্যরা বহুদিন বাদে এক হচ্ছেন। কিন্তু খানিক কথাবার্তার পর কেউ ঈদের টিভি অনুষ্ঠানে, কেউ নেটফ্লিক্সে, কেউ ভিডিও গেমে, কেউ ফেসবুকে আবার কেউ রান্নার অনুষ্ঠানে মশগুল হয়ে পড়ছে। ফলে এতদিন বাদে কাছে এসেও একাত্ম হতে পারলো না কেউই!

আসলে জাতি হিসেবে আমাদের শক্তির জায়গা হচ্ছে আমাদের পরিবারপ্রথা, পারিবারিক একাত্মতা। আধুনিক ব্যস্ত জীবনে ঈদ আমাদের সেই সুযোগটি করে দেয় চমৎকারভাবে। তাই সব ধরণের ভার্চুয়াল ভাইরাস ও ডিভাইজকে সরিয়ে রেখে প্রিয়জনের সাথে মনখুলে কথা বলুন, ভাব বিনিময় করুন। খোঁজ নিন – সে কেমন আছে, কীভাবে কাটছে দিন। কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কিনা, কিংবা বড় কোনো পরিকল্পনা।

বছরের বাকি দিনগুলোতে প্রিয়জনের সাথে ডিভাইজের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন, এবার যুক্ত হোন সরাসরি!

খাদ্য উৎসবে মেতে উঠবেন না; খাবারে পরিমিতি বজায় রাখুন

কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য পশু জবেহ করে ভুরিভোজ করা নয়। অথচ ব্যাপারটা কার্যত হয়ে গেছে তা-ই!

এমনকি ‘একটা দিনই তো খাই’- এই ওসিলায় বছরের বাকি দিনগুলোর সংযম ভাঙতেও কার্পণ্য করেন না অনেকে। বিশেষত হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা মেদস্থূলতা আছে এমন মানুষও অবলীলায় ভুরিভোজ সারেন ঈদকে উপলক্ষ্য করে। পরিণামে বাড়ে ভোগান্তি।

আসলে নিজে খাওয়া নয়, ঈদের আনন্দ বাড়ে অতিথি আপ্যায়নে। কাজেই ঈদে পরিচিত-পরিজনদের ঘরে আমন্ত্রণ জানান। সাধ্যমতো আপ্যায়ন করুন।

আর খোঁজ নিন দরিদ্র প্রতিবেশী-আত্মীয় পরিজনের। উপার্জন হারিয়ে যারা অন্নহীন মানবেতর জীবনযাপন করছে, আপনার ঈদের খরচ থেকে বাঁচিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান। করোনাজনিত আর্থিক অসঙ্গিতের কারণে ঈদ যাদের জন্যে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে নি তাদের অভুক্ত রেখে নিজে ভুরিভোজ কোরবানির শিক্ষার পরিপন্থি।

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »