1. [email protected] : আরএমজি বিডি নিউজ ডেস্ক :
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

ইতিহাসে আগস্ট ১ – শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এম আর খান এর জন্মদিন

  • সময় রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১
  • ৯৭২ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশি অধ্যাপক, চিকিৎসক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এম আর খান এর জন্মদিন

Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে আজ বছরের ২১৩তম (অধিবর্ষে ২১৪তম) দিন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনা, বিশিষ্টজনের জন্ম ও মৃত্যুদিনসহ আরও কিছু তথ্যাবলি।

ঘটনাবলি

১৪৯৮ : ইতালির ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে পদার্পণ করেন।
১৭৭৪ : যোশেফ প্রিস্টলি অক্সিজেন আবিষ্কার করেন।
১৮৩৪ : ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে দাসপ্রথা বাতিল।
১৮৬১ : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অর্থায়নে ও মনোমোহন ঘোষের সম্পদনায় পাক্ষিক ‘ইন্ডিয়া মিরর’ প্রকাশিত।
১৯৬০ : আফ্রিকার দেশ বেনিন ফরাসি উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৬৪ : বেলজিয়ান কঙ্গোর নাম পরিবর্তন হয়ে রিপাবলিক অব কঙ্গো হয়।
১৯৭১ : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে নিউইয়র্কে ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠিত।
১৯৭২ : বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় পেরু।

জন্ম

১৮৮১ : অর্ধেন্দুকুমার গঙ্গোপাধ্যায়, বাঙালি শিল্প সমালোচক ও অধ্যাপক।
১৮৯৫ : গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য, বাঙালি পতঙ্গবিশারদ ও উদ্ভিদবিদ।
১৯১৫ : মোমতাজ আলী খান, বাংলাদেশি লোকসঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার।
১৯২২ : এ কে নাজমুল করিম, বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী।
১৯২৮ : এম আর খান, বাংলাদেশি অধ্যাপক, চিকিৎসক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ।
১৯৩০ : ফজলুল হালিম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো।
১৯৩৩ : মীনা কুমারী, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও কবি।

মৃত্যু

১৯২০ : ভারতীয় পণ্ডিত ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা, সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী এবং স্বাধীনতাকর্মী বাল গঙ্গাধর তিলক
১৯৯৯ : তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বাংলার খ্যাতনামা বাঙালি লেখক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নীরদচন্দ্র চৌধুরী

শিশুবন্ধু ডা. এম আর খান

ডা. এম আর খান ছিলেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা অধ্যাপক, চিকিৎসক ও শিশুবিশেষজ্ঞ। এম আর খান নামে সর্বাধিক পরিচিত হলেও তার পুরো নাম মোহাম্মদ রফি খান। বাবা-মা, প্রতিবেশী সকলের কাছে ‘খোকা’ নামে বেশি পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তিনি জাতীয় অধ্যাপক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের শিশুরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ।

জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট সাতক্ষীরার রসুলপুরে। বাবা আলহাজ আব্দুল বারী খান নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবক ছিলেন। মা জায়েরা খানম ছিলেন বিদুষী মহিলা। নিজ সন্তানদের পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশী শিশুকিশোর বিশেষ করে মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত ও সহযোগিতা করতেন তিনি। চার ভাইয়ের মধ্যে ডা. এম আর খান ছিলেন মেজো। স্ত্রী আনোয়ারা বেগম আনু। একমাত্র মেয়ে দৌলতুন্নেসা (ম্যান্ডি)।

শিক্ষাজীবন

মাত্র চার বছর বয়সেই মায়ের কাছে লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। হাড়ির কালি আর সিমপাতার রস দিয়ে ঘটে বানানো কালিতে বাঁশের কঞ্চির কলমে তালপাতায় লিখতে শেখেন প্রথম বর্ণ পরিচয়। এরপর ভর্তি হন ছন পাতার ছাউনি, বাঁশের চাটাইয়ের বেড়া দেয়া রসুলপুর প্রাইমারি স্কুলে। মেঝেতে মাদুর পেতে বসতেন তারা।

সাতক্ষীরা প্রাণনাথ হাই স্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৯৪৫ সালে কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করেন এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ১৯৫৬ সালে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্যে লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বৃটেন থেকে ডিটিএমএন্ডএইচ (Diploma in Tropical Medicine & Hygiene)ডিগ্রি লাভ করেন। স্কুল অব মেডিসিন লন্ডন থেকে তিনি ডিসিএইচ (Diploma in Child Health) ডিগ্রিও লাভ করেন। ১৯৬২ সালে ‘এডিনবার্গের রয়েল কলেজ অব ফিজিশিয়ান’ থেকে তিনি এমআরসিপি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ থেকে এফসিপিএস (Fellow of College of physicians and Surgeons) এবং ১৯৭৮ সালে এডিনবার্গ থেকে এফআরসিপি (Fellow of Royal College of physicians) ডিগ্রি লাভ করেন।

বর্ণিল কর্মজীবন

১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত তিনি ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার কেন্ট এবং এডিনবার্গ গ্রুপ হাসপাতালে যথাক্রমে সহকারী রেজিস্টার ও রেজিস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দেশে ফেরেন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৩ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসোসিয়েট প্রফেসর অব মেডিসিন পদে যোগ দেন। ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (শিশুস্বাস্থ্য) পদে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগে যোগ দেন এবং এক বছরের মধ্যেই অর্থাৎ ১৯৭০ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭১ সালে তিনি ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (আইপিজিএমআর)-এর অধ্যাপক ও ১৯৭৩ সালে এই ইনস্টিটিউটের যুগ্ম-পরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালের নভেম্বরে ডা. খান ঢাকা শিশু হাসপাতালে অধ্যাপক ও পরিচালকের পদে যোগদান করেন। একই বছর অর্থাৎ ১৯৭৮ সালে পুনরায় তিনি আইপিজিএমআর-এর শিশু বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে অধ্যাপক ডা. এম আর খান তার সুদীর্ঘ চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

পেনশনের টাকা দিয়ে গড়েন ডা. এম আর খান-আনোয়ারা ট্রাস্ট। দুস্থ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা, তাদের আর্থিক-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে তিনি নিরন্তর কাজ করেছেন। তার উদ্যোগে গড়ে ওঠে জাতীয় পর্যায়ের শিশুস্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠা করেন শিশুস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। গড়ে তোলেন সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, যশোর শিশু হাসপাতাল, সাতক্ষীরা ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার, রসুলপুর উচ্চবিদ্যালয়, উত্তরা উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতাল, নিবেদিতা নার্সিং হোমসহ আরও বহু প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া তিনি দেশ থেকে পোলিও দূর করতে উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছেন, কাজ করেছেন ধূমপানবিরোধী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠান ‘আধূনিক’-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে।

তিনি দেশ-বিদেশে উল্লেখযোগ্য মেডিকেল কলেজের উচ্চতর ডিগ্রি/সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে পরীক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন। বাংলাদেশে শিশু স্বাস্থ্যের ওপর এফসিপিএস, ডিসিএইচ ও এমসিপিএস (MCPS) ডিগ্রি পরীক্ষার পরীক্ষক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে এম আর খানের ৩৭টি গবেষণাধর্মী রচনা প্রকাশিত হয়েছে। শিশুরোগ চিকিৎসা সংক্রান্ত সাতটি বই লিখেছেন, যেগুলো দেশে ও বিদেশে প্রশংসিত।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মুক্ত আলোচনা, রক্তদাতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি চিকিৎসাক্ষেত্রে মেডিটেশনের ভূমিকাকে তুলে ধরেন এবং সৃষ্টির সেবায় কোয়ান্টামের ব্যাপক ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাইকে তিনি এই কার্যক্রমে শামিল হতে আহ্বান জানান।

পুরস্কার ও সম্মাননা

শিক্ষা, চিকিৎসা, শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্গত অসহায় মানুষের সেবাসহ সমাজকল্যাণমূলক কাজে অসামান্য অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ডা. এম আর খানকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক দেয়। ২০০৯ সালে তিনি একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানতুল্য এই মানুষটির জীবনী স্থান পেয়েছে কেমব্রিজ থেকে প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল হু ইজ হু অব ইন্টেলেকচুয়ালে। তিনি আন্তর্জাতিক ম্যানিলা অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হন।

সারাজীবন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বহু সংস্কারমূলক ও জনহিতকর কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। বিশেষত শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নে তার অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে। চিকিৎসার পাশাপাশি পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় সব সম্পত্তিই তিনি দান করে গেছেন মানুষের কল্যাণে।

মহান এই কর্মবীরের মৃত্যুর পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় শিশু বিশেষজ্ঞ ও মিরপুর ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের পরিচালক ডা. এখলাসুর রহমান বলেছিলেন, ‘এম আর খান ছিলেন বাংলাদেশে শিশু বিভাগের প্রথম অধ্যাপক। এমন কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ নেই যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্যারের ছাত্র ছিলেন না। তাকে বলা হয়, ‘ফাদার অব পেডিয়াট্রিশিয়ান অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন’।’

তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে কয়েক মাস ধরে ভুগছিলেন। ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন নিজ প্রতিষ্ঠিত রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সাতক্ষীরায় নিজ গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হন মমতাময়ী মহৎ এই মানুষটি।

 

সূত্র: সংগৃহীত

শেয়ার করুন

এই শাখার আরো সংবাদ পড়ুন
All rights reserved © RMGBDNEWS24.COM
Translate »